শবে কদর চেনার আলামত
শবে কদর বা লাইলাতুল কদর কবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে রাতটি চেনার কিছু আলামতের কথা বিভিন্ন হাদিসে পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) নিজেই বলেছেন, ‘আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে। অতঃপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে তা তালাশ করো।’ মূলত কদরের রাত নির্দিষ্ট থাকলে সবাই এ রাতের অপেক্ষায় থাকত, যা শরিয়তসম্মত নয়। তবে অধিকাংশ মুজতাহিদের মতে ২৬ রমজানের দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ রমজানের রাতই লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
নিশ্চিতভাবে শবে কদরের রাত লাভ করা সৌভাগ্যের বিষয়। কারণ একমাত্র আল্লাহতায়ালাই জানেন, কবে আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত রাত। রাসুল (সা.) রমজানের প্রথম দশ দিন ও মাঝের দশ দিন ইতিকাফ করে বললেন, জিব্রাইল (আ.) এসে বলে গেলেন, লাইলাতুল কদর শেষের দশ দিনে। যে আমার সঙ্গে ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন শেষের দশ দিনে ইতিকাফ করে। এ হাদিস দ্বারা আমরা নিশ্চিত বুঝতে পারি–শবে কদর রমজানের শেষ দশ দিনে।
মনিমান্বিত এ রাত চেনার আলামত
কদরের রাত চেনার কিছু আলামতের কথা বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে পাওয়া যায়। সে রাতে মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হবে। গভীর অন্ধকার থাকবে না। সে রাত হবে নাতিশীতোষ্ণ। সে রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মানুষ তৃপ্তি পাবে। এ রাতে কোনো মুখলেস বান্দাকে আল্লাহ পাক রাত সম্পর্কে জানাতে পারেন। এ রাতে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি হতে পারে। হালকা আলোকরশ্মিসহ পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় সূর্যোদয় হবে। এ রাত সম্পর্কে কোন মুখলেস বান্দাকে আল্লাহ পাক জানাতে পারেন।
শবে কদরের আলামত সম্পর্কে নবীজীর (সা.) বয়ান
হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘...ওই রাতের আলামত বা লক্ষণ হলো, রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে। কিন্তু সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না। (মুসলিম : ১৬৭০)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরের রাতটি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠাণ্ডা। সেদিন সূর্য উঠবে লালবর্ণে, তবে দুর্বল থাকবে।’ (ইবনে খুযাইমা : ২১৯২)
হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা) বলেন, ‘লাইলাতুল কদর শেষ ১০ রজনীতে রয়েছে। যে এই রাতে নিজের (আমলের) হিসাব নিতে দাঁড়াবে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের এবং পরের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আর এই রাত্রি আছে বেজোড় রাত্রিগুলোতে : নবম, সপ্তম, পঞ্চম, তৃতীয় এবং শেষ রাত।’ নবীজি আরও বলেন, ‘লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে, আবহাওয়ায় প্রশান্তি (সাকিনা) থাকবে। না ঠাণ্ডা, না গরম। সকাল পর্যন্ত (আকাশে) কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। সে রাতে চাঁদের মতোই সূর্য উঠবে (তীব্র) আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সেই সময় বের হয় না।’ (মুসনাদ আহমাদ : ২২৭৬৫)
নবীজি (সা) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর উজ্জ্বল একটি রাত। না গরম, না ঠাণ্ডা। সে রাতে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৩/১৭৯)
এসএ/