মহিমান্বিত শবে কদর ও তার ফজিলত
শবে কদর বা লাইলাতুল কদর অর্থ মর্যাদাপূর্ণ রাত। কোনো কোনো আরবি অভিধানে কদর অর্থ ‘ভাগ্য’ ধরে এ রাতকে ভাগ্য নির্ধারণ রাতও বলা হয়ে থাকে। আল্লাহতায়ালা এ রাতে কোরআনুল করিম লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার প্রথম আসমানে একসঙ্গে নাজিল করেছেন বলে এ রাতের মর্যাদা অন্য হাজার মাসের চেয়েও বেশি ফজিলত দান করেছেন।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তোমাকে কিসে জানাবে লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হচ্ছে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা ও জিব্রাইল (আ.) রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে।’
এ সম্পর্কে সুরা কদরে বলা হয়েছে, শান্তিময় এ রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত। হজরত আয়েশা (রা.) এ রাতে কোন দোয়া পড়বেন–রাসুলের (সা.) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ এই দোয়া পড়বে।
শবে কদরের ফজিলত
রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান মাস তোমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে এমন এক রাত রয়েছে যা হাজার মাস হতে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে সবকিছু হতেই বঞ্চিত হলো। শুধু হতভাগারাই এ সম্মানিত রাত হতে বঞ্চিত হয়।’
এ রাতের ফজিলত বর্ণনায় বোখারি শরিফের এক হাদিসে রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ঈমানের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে লাইলাতুল কদরের রাতে ইবাদত করবে, আল্লাহ তার জীবনের পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’
তাফসিরে মাজহারি ও মারেফুল কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, রাসুল (সা.) এক দিন সাহাবিদের সামনে বনি ইসরাইলের এক আবেদ ও জাহিদ ব্যক্তির আমল-আখলাকের বর্ণনায় বলছিলেন, ওই ব্যক্তি দীর্ঘ এক হাজার মাস রাতে ইবাদত এবং দিনে সিয়াম পালন ও জিহাদের মাধ্যমে সওয়াব লাভ করতেন। এটা শুনে সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের অল্প আয়ুর কথা স্মরণ করে খুব আফসোস করছিলেন। এ সময় আল্লাহ পাক সুরা কদর নাজিল করে ঘোষণা দিলেন, লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত যা হাজার মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান। তাই শবে কদরের রাতে ইবাদত করলে অন্য সময়ের এক হাজার মাস তথা ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদতে কাটানোর সমান সওয়াব হয়।
আল্লাহতায়ালা মানব জাতির হেদায়াতের জন্য একশ চারখানা আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ হলো কোরআনুল কারিম, যা সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী মুহাম্মদের (সা.) উপর নাজিল করেছেন। আর এ মহাগ্রন্থ লাইলাতুল কদরেই নাজিল করা হয়। তাই কোরআনুল কারিমের সম্মানেই এ রজনীর এত বড় মরতবা। কোরআনের বিভিন্ন সুরায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি কোরআনকে মোবারকময় রজনী ও রমজান মাসে অবতীর্ণ করেছি।’
এ রাতের আমল
মহিমান্বিত এ রজনীর সব নেয়ামত হাসিলের জন্য প্রথমেই শিরকমুক্ত ঈমান পরিশুদ্ধ নিয়ত ও বিদায়াতমুক্ত আমলের মাধ্যমে রাত যাপন করতে হবে। কদর লাভের আশায় শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করার বিধান রয়েছে। এ সময়ে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া; তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া; কোরআন তেলাওয়াত করা; দোয়া-দরুদ, দান-সদকা ও তাওবা-ইসতিগফার করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
এ রাত যাপন উপলক্ষে বাজি-পটকা ফোটানো, অহেতুক কোনো অনুষ্ঠান বা মসজিদে কোনো ভোজের আয়োজন করা ইসলামসম্মত নয়। বরং বেশি বেশি নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাত কাটানোই শ্রেয়।
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। সুতরাং শবে কদর তালাশ করে সঠিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাত যাপনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
এসএ/