অবসরে শিক্ষার্থীদের যা করা উচিত
পড়াশোনা ও গবেষণার বাইরে শিক্ষার্থীর আর কোনো মৌলিক কাজ আছে বলে মনে করি না। অবসর সময়ের জন্য আছে নানান পন্থা, তবে এর ফাঁকে এক্সট্রাকারিকুলামে নজর দিতে হয়ে। আমরা ভাবি দিনে পাঁচ ঘণ্টা পড়লে দিনের পড়া শেষ। তাই বাকি সময়টুকু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বা সোশাল মিডিয়ায় ব্যয় করি, কেউবা অনলাইন গেমসে বুদ হয়ে থাকি, কেউবা আবার মনে করি, বাকি সময়টুকু ছাত্র সংগঠনে ব্যয় করি। এতে সময় কাজে লাগলো, সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি হলো। এটা ভালো চিন্তা। কিন্তু আমাদের ছাত্র সংগঠনগুলো বিশেষ রাজনৈতিক দলের দখলে চলে গেছে।নেতাদের পকেট কমিটি দ্বারা সংগঠন গুলো পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে চলছে অপ-ছাত্র রাজনীতির খেলা। কেউ খেলছে ব্যক্তির নামে, কেউ ধর্মের নামে, কেউ নীতির নামে, কেউবা আবার জনমিতির দায়ে। কোথাও চলছে নেতাগীরি, কোথাও বসগীরি, কোথাও ভাইগীরি কোথাও আবার দায়িত্বশীলগীরি। তাই যতটুকু সম্ভব কথিত দলগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা উত্তম। সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ছাত্র সংসদের বিকল্প নাই। যেহেতু বাংলাদেশের শিক্ষালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ সচল না করা রাজনৈতিক দলের ক্রিয়াকর্মজনিত সুবিধা বিশেষ। তাই সেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে মনোনিবেশ করে সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারি। এছাড়াও অবসর সময় ব্যয়ে রয়েছে সময়োপযুগী নানান পন্থা। যেমন;
বই পড়া: বই পড়ার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয় তা মানুষের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । মানুষের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো মস্তিষ্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শরীর সুস্থ রাখতে আমরা যেমন ব্যায়াম করি তেমনি মস্তিষ্ককে সবল ও কর্মচঞ্চল রাখতে বই পড়া বিশেষ জরুরি।
ধর্ম চর্চা: ধর্ম চর্চায় মানুষের জ্ঞান শানিত হয়। পৃথিবীর কোনো ধর্মই অনৈতিকতা প্রশ্রয় দেয় না। ধর্মপ্রাণ মানুষ সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না বরং অসাম্প্রদায়িক পৃথিবী গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। যে মসজিদে যায় সে না যাওয়া ব্যক্তি থেকে উত্তম, যে মন্দিরে যায় সে না যাওয়া ব্যক্তি থেকে উত্তম। যে গির্জায় যায় সে না যাওয়া ব্যক্তি থেকে উত্তম। এককথায় যিনি ধর্ম পালন করেন তিনি ধর্ম পালন না করা ব্যক্তি থেকে উত্তম।
শরীর চর্চা: শরীর সুস্থ থাকলে মন ভালো থাকে। শরীর অসুস্থ থাকলে কাজের আগ্রহ হারিয়ে পেলে। শরীর চর্চায় মন সতেজ হয়, সতেজ মন চিন্তার গতি সঞ্চার করে এবং উক্ত সঞ্চারিত গতি থেকেই নতুন ভাবনা ও ক্রিয়াশীল চিন্তা করতে সক্ষমতা অর্জিত হয়।
সাহিত্য চর্চা: জ্ঞানের পরিপক্কতা আননে সাহিত্য অনিবার্য। আবুল ফজল বলেন, ‘চুরি এবং ফাঁকিবাজি চলে রাজনীতি, ব্যবসা আর অর্থনীতিতে। সংগীতে, শিল্পে আর সাহিত্যে নয়’।
প্রযুক্তি চর্চা: বিশ্ব ব্যবস্থা প্রযুক্তি নির্ভর। চার দেয়ালে আবদ্ধ থেকে বিশ্ব পরিচালনার সময় এসেছে। নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে মুহূর্তেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের ব্যক্তির সাথে মেশার সুযোগ হয়। আজকের বিশ্বে ব্যক্তি ঠিক ততোবেশি স্মার্ট,যতোবেশি প্রযুক্তি জ্ঞানের জ্ঞানী।
ধ্যান করা: কর্মের অর্ধাংশ চিন্তন ফল। কর্ম পরিকল্পনা যতবেশি উন্নত কর্ম-ফলাফল ঠিক ততোবেশি সমৃদ্ধ। ধ্যানের মাধ্যমে নতুন বিষয়ের আবিষ্কার ঘটে, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয়গুলো চিন্তন ডায়েরিতে যুক্ত হয়। এছাড়াও স্রষ্টাকে চিনতে ও স্রষ্টার সৃষ্টির রহস্য অনুধাবনে ধ্যানের বিকল্প নাই।
লেখালেখি: নব-প্রজন্মের চিন্তার বহিঃপ্রকাশে লেখার বিকল্প নাই। বেঞ্জামিন ডিজরেইলি বলেন, কোনো বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হতে চাইলে তা নিয়ে বই লেখা শুরু করাই ভালো।
বন্ধুদের আড্ডা: মন-খোলাসা করতে, উচ্ছাশার ভাবনায় লিপ্ত হতে, হতাশার ঘোর কাটাতে,নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে বন্ধুদের আড্ডা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের বিকল্প বৈ কি!
ভ্রমণ: ভ্রমণ চিন্তার জগতকে সম্প্রসারিত ও জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ভ্রমণ মানুষকে পরিমিত করে তোলে। ভ্রমণে আপনি দেখতে পারেন যে আপনি পৃথিবীতে কত ছোট জায়গা দখল করেছেন। হিলায়ার বেলোক বলতেন আমরা বিভ্রান্তির জন্য ঘোরাঘুরি করি, তবে আমরা পরিপূর্ণতার জন্য ভ্রমণ করি ।
শখের কর্ম সম্পাদন: মানুষ সে কর্মটিই অধিক সাচ্ছ্বন্দে আন্তরিকতার সহিত সম্পাদন করে,যা তার কর্তব্যের অংশ নয় বরং শখের অন্তর্ভুক্ত। শখের কর্ম মন ভালো রাখে, দেয় তৃপ্তি। শিক্ষার্থীর অতৃপ্ত মনে তৃপ্তি আননে শখের কর্ম অনিবার্য।
গুণীজনের সংস্পর্শ গ্রহণ: পথ চলি, বেড়ে উঠি, বড় হই কিন্তু অনেকাংশেই নিজের উচিত অনুচিত ব্যাপার অনুধাবণ করতে পারিনা।নিজেকে জানতে, গতিশীল করতে গুণীজনের সংস্পর্শ জরুরি।
সমকালীন বিশ্ব জানা: জ্ঞানের মাত্রা বাড়াতে, নিজেকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সমকালীন বিশ্বকে জানতে হবে। প্রতিযোগী হতে হবে বিশ্বমন্ডলের।
মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।