জন্ম ভিটার স্পর্শ
শিব শঙ্কর রায়চৌধুরী
সত্তর বছর পর জন্মভিটায় পা রাখলেন
পুনর্বার...জীবন সায়াহ্নে!
চোখের সামনে দেখলেন রং চটা দালান
স্থানে স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে
নোনাধরা ইট দাঁত বের করে আছে
যেন ঠাট্টা করছে, এতদিন পর মনে পড়েছে
দেয়াল বেয়ে, ছাদ ফুঁড়ে গজিয়ে উঠেছে
বট অশ্বথের গাছ, অন্য অচেনা গাছ
কোনো কোনো জায়গা আছে বহাল তবিয়তে।
শান বাঁধানো ঘাট, ক্ষয়ে গেছে কতক জায়গায়
পুকুরের পাশে তাল গাছ এখন অনেক উঁচুতে
ঝাঁকড়া বকুল গাছ, তুলসী মঞ্চ, পাতকুয়া,
কাঠটগরের ঝাড়, পাশে স্থলপদ্মের গাছ
একদম আগের মতো পরিপাটি
আম বাগান, সুপারির সারি
আরও লম্বা হয়েছে নারিকেল গাছগুলো
অনেক কিছু নেই, হরিতকি, বেল গাছ, নেই
অবশিষ্ট গাছগুলো সদম্ভে মাথা তুলে আছে
আজ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কোনো বংশধর নেই তদারকির
যারা আছে তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি
হালচাল বড়ো নড়ো বড়ো
পৌঁছে গেছে তারা দারিদ্র্য সীমায়
দেশ ভাগের নির্মম রেখা একগুঁয়ে
খণ্ড প্রলয়ের ছাপ রেখে গেছে
সেনদের দোতলা, মিত্তির বাড়ি, লাহিড়ী লজ
বোসদের বাড়ি, নাগ মহল, রায়েদের কুঠি
সব আছে আগের মতোই, আছে কি?
কোথাও বদলে গেছে আদল, অবকাঠামো
বহুতল ভবনের সারি, নতুন বসতি
বাসিন্দা বদল হয়ে গেছে, অচেনা মানুষজন
জানালার ঘুলঘুলিগুলো সাক্ষ্য দেয়,
বোঝা যায় সংস্কার হয়নি বহুদিন, বোঝা যায়
কোনোটা শেওলা পড়া, চুনসুরকির খসে খসে পড়া,
হিন্দুদের পরিত্যক্ত বাড়িগুলো এখন ভুতুড়ে বাড়ি!
বোঝা যায় এক সময় আভিজাত্য ছিল
জৌলুসের কোনো কমতি ছিল না
নাট মন্দির, সামনের মাঠ, যেখানে রামায়ণ গান,
হরিসংকীর্তণের প্রহর বসতো,
যাত্রা হতো পনের দিনব্যাপী- সব মনে পড়ে।
দুর্গাপূজার দিনের সমারোহ আন্তরিকতা
আত্মীয় কুটুম্বের ঢল হৈচৈ গমগম —
এখন সব শুধুই স্মৃতি!
তিনি পুনর্বার....স্পর্শ করলেন জন্ম ভিটা
কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল
আপনা থেকেই !
এসএন