বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

বিজয় দিবস: মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কবে বাস্তবায়ন হবে?

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াই সংগ্রাম করে চূড়ান্ত বিজয়ের মুহূর্তে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধা শীতের সকালে পূর্ব দিগন্তে লাল বৃত্তের সূর্য উদয়ের পূর্বেই ঝাঁকে ঝাঁকে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে উল্লাসে পূর্ব বাংলার মাটি কেঁপে ওঠেছিল।

সমবেত কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানের মধ্য দিয়ে প্রথম স্বাধীনতার বিজয় কেতন সোনালী বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। আর অপর দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাপটে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদররা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গিয়েছিল দেশের নানা প্রান্ত দিয়ে।

তবে দুঃখের বিষয় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসেও বাংলার মানুষকে মর্মাহত হতে হয়েছিল। কারণ, ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর এদেশের শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হানাদাররা তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকারদের সহযোগিতায় নির্মমভাবে হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার নীল নকশা তৈরি করেছিল। বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৫১ বছর। তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে বাংলাদেশে প্রকৃত বুদ্ধিজীবী কি আছে? হ্যাঁ আছে তবে হাতেগোনা কয়েকজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা যায় ধীরে ধীরে বুদ্ধিজীবীরা মাথা বিকিয়ে দিচ্ছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বুদ্ধিজীবী আর বর্তমান বুদ্ধিজীবীর মধ্যে পার্থক্য কী? উত্তর সবার জানা আছে।

বাংলাদেশের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, কৃষি, পরিবেশ, শ্রমিকের মজুরি, নারীর অধিকার, বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের সংকট নিয়ে যে সকল বুদ্ধিজীবী রাষ্ট্রের কাছে নির্ভয়ে প্রশ্ন তুলেন এবং রাজপথে এসে সংকটের মুক্তির পথ দেখান তারাই প্রকৃত বুদ্ধিজীবী। আর শোষণ মুক্তির জন্য যারা লড়াই সংগ্রাম করেছিলেন তারা দেশের প্রকৃত দেশবন্ধু। ফলে তাদের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের তুলে ধরতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্য মানেই সংগ্রামের ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া। ভাস্কর্য মানে শোষণকারীদের ভীতির জায়গায়। আমার জন্মের ত্রিশ বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা উনিশশো একাত্তর।পৃথিবীতে ছিলাম না বলেই দেখা হয়নি একাত্তর। সেই একাত্তরের কথা এখন শুনে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। রাষ্ট্রের শাসক এমনও হতে পারে?

বাঙালির নিজস্ব ভাষাও কেড়ে নিবে ওরা? ওরা বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির উপর আঘাত করেছিল। সাহস কত! কৃষককের বুক ভরা স্বপ্ন করেছিল খানখান। তবে শুনেছি দাদির কাছে কেমন করে পাক-হানাদাররা মোদের দেশে নির্মম গণহত্যা চালাত, রাজাকারের পরামর্শে কেমন করে মানুষের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে উল্লাস উদযাপন করত।পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট চালিয়ে ঘুমন্ত নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও গণহত্যার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। কেন যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল? এ যুদ্ধ তো একদিনে তৈরি হয়নি! ২৫ বছর ধরে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের শোষণ করেছিল। পাকিস্তানি শাসক প্রথম আঘাত করে নিরীহ বাঙালির অস্তিত্ব নিজের মাতৃভাষার উপর।

ওরা আমাদের মুখের ভাষা ‘মাতৃভাষা’ কেড়ে নিতে চেয়েছিল কারণ তারা জানত একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে সেই জাতির ভাষাকে ধ্বংস করলেই যথেষ্ট। ফলে বাঙালিকে ধ্বংস করতে তাদের প্রথম নজর পড়ে ভাষার উপর। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে প্রমাণ করল। মুখের ভাষা রক্ষা করল। এর পর ৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০- এর নির্বাচনসহ দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি ৭১ সালে এসে উপনীত হয়। অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ থেকে জেনারেল নিয়াজির এক লাখ পাকিস্তানি সেনাসদস্য কিছু বাঙালি দালালদ অর্থাৎ রাজাকার, আলবদর ও আলসামদের নিয়ে বাঙালির উপর তাণ্ডব চালিয়ে ত্রিশ লক্ষ মানুষ জীবন ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল। চারিদিকে ঘর বাড়ি জ্বালাও, পড়াও আর মানুষের কান্নার আওয়াজ এ দেশ যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল। দেশের প্রতিটি মানুষ জীবন-মৃত্যুর শঙ্কা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়িয়েছিল। পাকিস্তানি শাসক ধর্মের নামে রাজনীতি করে কৃষকের কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করেছিল, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত, সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত, ধর্মের নামে বিভাজন, বাঙালি জাতির নেতা নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি ইত্যাদি ঘোরতর অন্যায়-অবিচার ও চূড়ান্ত বর্বরতার মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানিরা জাঁতাকলে পিষ্ট করেছিল।

মানবমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিল বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সেই দিনটিতে সারা দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা আনন্দে-উল্লাসে ফেটে পড়ে, অভ্যুদয় ঘটে বিশ্বের বুকে বাঙালির একটি স্বাধীন রাষ্ট্র যার নাম হয় বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশে তখন ভৌত-অবকাঠামো, রাস্তাঘাট-ব্রিজ-যানবাহন, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন ইত্যাদি প্রায় সবকিছুই বিনষ্ট-বিধ্বস্ত। সেই সঙ্গে বিশ্বমন্দা ও নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বন্যা, খাদ্যাভাব, সামাজিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি। নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন কোটি শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন ছিল বড় চ্যালেঞ্জ বিষয়।

সেই চ্যালেঞ্জের বিষয় গুলো নিয়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সরকার গঠন করে এবং বিভিন্ন সরকারের পালাবদল করে আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বিজয় দিবস চলছে। স্বাধীনতার এত বছরে এসে স্বাভাবিক ভাবে একটা প্রশ্ন চলে আসে কেমন আছে বাংলাদেশ? মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কী দেশে শাসন ব্যবস্থা চলে? রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের পবিত্র সংবিধানের চার মূলনীতি মধ্যে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ কী যথাযথ ভাবে কার্যকর আছে? আমরা পাকিস্তান শাসকদের শাসন আমল ও বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের শাসন আমল মূল্যায়ন করে দেখতে চাই। সত্যিকারে মানুষ শোষণযন্ত্র থেকে তি মুক্তি পেয়েছে?

বর্তমানে দেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন, রক্তারক্তি, গুম ও খুন যেন নিত্যদিনের ঘটনা। ঘরে বাইরে নারী নির্যাতন, কলকারখানায় লুটপাট ও আগুনে শ্রমিকের কান্নায় বলে দিচ্ছে শ্রমিকরা শোষিত। মুনাফাখোর, মজুতদার ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অবিশ্বাস্য অগ্নিমূল্য। সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। ফলে সড়কে ছাত্রদের চিৎকার ও কান্নায় সংবাদমাধ্যমে হৈচৈ। সুন্দরবনসহ প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়নের বাজিমাত। বারশত নদীর দেশে নদীগুলো বিলীন হয়ে খালে পরিণত, শিক্ষা ব্যবস্থা বাণিজ্যিকীকরণ, ধনী গরিবের বৈষম্য যেন পিরামিড আকৃতি, যৌন সহিংসতা থেকে আত্মহত্যা বেড়েই চলছে, দেশে গণপিটুনিতে হাজার হাজার মারা গেছে, শহরে বস্তির সংখ্যা বেড়েই চলছে, ধান চাষিরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ধানে আগুন ও আত্মহত্যার খবর কানে আসে।

ফলে কৃষককের কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নেই, করোনাভাইরাস এসে চিকিৎসা খাতের নাজুক অবস্থা প্রকাশিত হয়েছে, গরিবের ত্রাণ চুরি, পাথর-কয়লাসহ জাতীয় সম্পদ চুরি, দুর্নীতি আর লুটপাট মহোৎসব ইত্যাদি সহিংসতা ব্যক্তি ও সমাজকে ক্ষত-বিক্ষত করেই চলছে। তাহলে এই সহিংসতা উপহার পাওয়ার জন্য কী আমাদের দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিল? রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করেছিল মানব মুক্তির জন্য। গর্বের বিষয় এখনো বাংলার বীর সৈনিক মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন। এই স্বাধীন দেশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারাই খুবেই উদ্বিগ্ন কারণ তারা এখনো বলছে দেশের এই সহিংসতা দেখার জন্য তো যুদ্ধ করেনি। তাহলে মেনে নিতেই হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আজ বিপন্নতার পথে। কে রক্ষা করবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিপন্নের পথে কারণ এ দেশে ব্যবসায়ীদের একাংশ রাজনীতির মধ্যে প্রবেশ করে নিজেদের মত মুনফা লুটে নিচ্ছে। তাদের দেশপ্রেম কোনো লক্ষ্য নয় তারা তো বাণিজ্য করতে কৌশলে রাজনীতিতে প্রবেশ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতেছে। একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের হলফনামায় কেমন করে রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের উত্থান হয়েছে। স্বাধীনতার দুই বছর পর প্রথম নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৫ শতাংশ। ১৯৯০ সালের পর থেকেই রাজনীতিতে' পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ১৯৯৬ সালে ব্যবসায়ী এমপির হার হয় ৪৮ শতাংশ, ২০০১ সালের সংসদে এ হার দাঁড়ায় ৫১ শতাংশ। ২০০৮ সালে মোট এমপির ৬৩ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোট এমপির ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদে এমপিদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৪০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ!

রাজনীতি যদি রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত না হয়ে ব্যবসায়ীদের দ্বারায় নিয়ন্ত্রণ হয় তাহলে সেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে না বরং মানুষ শোষিত হবে। কৃষিতে উৎপাদন বাড়লেও ভূমিহীনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এর কারণ কী? বর্তমানে আমাদের দেশে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৪০ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯টি, যা শতকরা হিসাবে দাঁড়ায় ১১.৩৩ শতাংশ। কেন দিনের পর দিন ভূমিহীনের সংখ্যা বাড়ছে? আর অপর দিকে ক্ষমতাসীনদলের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রসংগঠন গুলো সন্ত্রাসী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গুটিকয়েক ছাত্রদের জন্য ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য কেন হারিয়ে যাবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকলে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা সুযোগ থাকবে। সেই সঙ্গে সকল মত ও পথের গণতান্ত্রিক চর্চা থাকবে তাহলে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করতে পারবে না।

বিজয় দিবসে ভাবতে হচ্ছে আমাদের দেশের নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে। ধর্মের অবমাননা গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা, সারা দেশে নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দুই বছরের শিশুকন্যা থেকে শুরু করে বৃদ্ধাসহ যেকোনো বয়সের নারী সে হিন্দু হোক বৌদ্ধ হোক, খ্রীষ্টান হোক অথবা মুসলমান হোক যেকোনো ধর্মের নারী পাহাড় বা সমতল, ঘরে-বাইরে, স্কুল-মাদ্রাসা, কলকারখানা যেকোনো স্থানে, দিনে কিংবা রাতে যেকোনো সময়ে বাংলাদেশের একজন নারী নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি সমমজুরি আইনে থাকলেও বাস্তবে প্রায় সমস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পেয়ে থাকেন।
সম্পত্তি বণ্টনবৈষম্যের আচারণে শিকার নারী সমাজ। নারী তো পণ্যের বস্তু নয় তাহলে তাদের অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে?

মানুষ সহিংসতা বলতে কেবল শারীরিক খুন, জখমই বুঝে কিন্তু বাস্তবে সহিংসতা মানসিক ও আবেগগত ভাবে ঘটে। দেশের মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঠামোগত সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কখনো কখনো সেই সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার চেষ্টাও করে। কাঠামোগত সহিংসতা থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শিক্ষাকে পণ্যে নয় সকলের মৌলিক অধিকার হিসাবে নিশ্চিত করা হবে, নারীকে পণ্য হিসেবে নয় মানুষ হিসাবে মানবিক মর্যাদা দিবে, চিকিৎসা সেবাকে বানিজ্যিক নয় মৌলিক অধিকার হিসাবে প্রাধান্য পাবে, কৃষককের কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হবে, বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা হবে, ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন ব্যবস্থা হবে, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকবে, একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র পরিচালনা হবে তাহলে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবসে আবালবৃদ্ধবনিতা আনন্দে-উল্লাসে আবারও ফেটে পড়বে।

ফলে বিজয়ের উল্লাস ম্লান হয়ে যাক আমরা তা চাই না। আমরা বাঙালি জাতি যে বীরের জাতি তা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। মহান মুক্তিযুদ্ধ নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। সেই প্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের অতীত ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি সুখি সমৃদ্ধশালী সাম্যের সমাজ ও দেশ গড়াতে জনগণের পাশাপাশি রাষ্ট্রকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাশেদুজ্জামান রাশেদ: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

Header Ad

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের এ কুশল বিনিময় হয়।

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া পৌঁছালে উপস্থিত সবাই তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা তার পাশে এসে দাঁড়ান এবং শারীরিক খোঁজখবর নেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের অভিনন্দন জানান এবং দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় এই ৩ উপদেষ্টা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দোয়া চান এবং সরকারের সংস্কার কাজে তার সর্বাত্মক সহযোগিতা চান।

এদিকে সেনাকুঞ্জে গেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। একযুগ তিনি আসার সুযোগ পাননি। আমরা গর্বিত এই সুযোগ দিতে পেরে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

Header Ad

দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম

ছবি: সংগৃহীত

আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আজকেও ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩ হাজার ৬৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গয়নার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকায়। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৬ টাকায়।

এর আগে, সবশেষ গত ১৯ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় টানা চার দফা কমার পর ভরিতে ২ হাজার ৯৪০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে গত ২০ নভেম্বর থেকে।

এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৫১ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ৩০ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার।

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম
‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত