বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

বিজয় দিবস: মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কবে বাস্তবায়ন হবে?

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াই সংগ্রাম করে চূড়ান্ত বিজয়ের মুহূর্তে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধা শীতের সকালে পূর্ব দিগন্তে লাল বৃত্তের সূর্য উদয়ের পূর্বেই ঝাঁকে ঝাঁকে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে উল্লাসে পূর্ব বাংলার মাটি কেঁপে ওঠেছিল।

সমবেত কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানের মধ্য দিয়ে প্রথম স্বাধীনতার বিজয় কেতন সোনালী বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। আর অপর দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাপটে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদররা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গিয়েছিল দেশের নানা প্রান্ত দিয়ে।

তবে দুঃখের বিষয় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসেও বাংলার মানুষকে মর্মাহত হতে হয়েছিল। কারণ, ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর এদেশের শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হানাদাররা তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকারদের সহযোগিতায় নির্মমভাবে হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার নীল নকশা তৈরি করেছিল। বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৫১ বছর। তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে বাংলাদেশে প্রকৃত বুদ্ধিজীবী কি আছে? হ্যাঁ আছে তবে হাতেগোনা কয়েকজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা যায় ধীরে ধীরে বুদ্ধিজীবীরা মাথা বিকিয়ে দিচ্ছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বুদ্ধিজীবী আর বর্তমান বুদ্ধিজীবীর মধ্যে পার্থক্য কী? উত্তর সবার জানা আছে।

বাংলাদেশের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, কৃষি, পরিবেশ, শ্রমিকের মজুরি, নারীর অধিকার, বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের সংকট নিয়ে যে সকল বুদ্ধিজীবী রাষ্ট্রের কাছে নির্ভয়ে প্রশ্ন তুলেন এবং রাজপথে এসে সংকটের মুক্তির পথ দেখান তারাই প্রকৃত বুদ্ধিজীবী। আর শোষণ মুক্তির জন্য যারা লড়াই সংগ্রাম করেছিলেন তারা দেশের প্রকৃত দেশবন্ধু। ফলে তাদের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের তুলে ধরতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্য মানেই সংগ্রামের ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া। ভাস্কর্য মানে শোষণকারীদের ভীতির জায়গায়। আমার জন্মের ত্রিশ বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা উনিশশো একাত্তর।পৃথিবীতে ছিলাম না বলেই দেখা হয়নি একাত্তর। সেই একাত্তরের কথা এখন শুনে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। রাষ্ট্রের শাসক এমনও হতে পারে?

বাঙালির নিজস্ব ভাষাও কেড়ে নিবে ওরা? ওরা বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির উপর আঘাত করেছিল। সাহস কত! কৃষককের বুক ভরা স্বপ্ন করেছিল খানখান। তবে শুনেছি দাদির কাছে কেমন করে পাক-হানাদাররা মোদের দেশে নির্মম গণহত্যা চালাত, রাজাকারের পরামর্শে কেমন করে মানুষের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে উল্লাস উদযাপন করত।পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট চালিয়ে ঘুমন্ত নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও গণহত্যার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। কেন যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল? এ যুদ্ধ তো একদিনে তৈরি হয়নি! ২৫ বছর ধরে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের শোষণ করেছিল। পাকিস্তানি শাসক প্রথম আঘাত করে নিরীহ বাঙালির অস্তিত্ব নিজের মাতৃভাষার উপর।

ওরা আমাদের মুখের ভাষা ‘মাতৃভাষা’ কেড়ে নিতে চেয়েছিল কারণ তারা জানত একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে সেই জাতির ভাষাকে ধ্বংস করলেই যথেষ্ট। ফলে বাঙালিকে ধ্বংস করতে তাদের প্রথম নজর পড়ে ভাষার উপর। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে প্রমাণ করল। মুখের ভাষা রক্ষা করল। এর পর ৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০- এর নির্বাচনসহ দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি ৭১ সালে এসে উপনীত হয়। অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ থেকে জেনারেল নিয়াজির এক লাখ পাকিস্তানি সেনাসদস্য কিছু বাঙালি দালালদ অর্থাৎ রাজাকার, আলবদর ও আলসামদের নিয়ে বাঙালির উপর তাণ্ডব চালিয়ে ত্রিশ লক্ষ মানুষ জীবন ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল। চারিদিকে ঘর বাড়ি জ্বালাও, পড়াও আর মানুষের কান্নার আওয়াজ এ দেশ যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল। দেশের প্রতিটি মানুষ জীবন-মৃত্যুর শঙ্কা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়িয়েছিল। পাকিস্তানি শাসক ধর্মের নামে রাজনীতি করে কৃষকের কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করেছিল, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত, সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত, ধর্মের নামে বিভাজন, বাঙালি জাতির নেতা নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি ইত্যাদি ঘোরতর অন্যায়-অবিচার ও চূড়ান্ত বর্বরতার মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানিরা জাঁতাকলে পিষ্ট করেছিল।

মানবমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিল বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সেই দিনটিতে সারা দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা আনন্দে-উল্লাসে ফেটে পড়ে, অভ্যুদয় ঘটে বিশ্বের বুকে বাঙালির একটি স্বাধীন রাষ্ট্র যার নাম হয় বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশে তখন ভৌত-অবকাঠামো, রাস্তাঘাট-ব্রিজ-যানবাহন, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন ইত্যাদি প্রায় সবকিছুই বিনষ্ট-বিধ্বস্ত। সেই সঙ্গে বিশ্বমন্দা ও নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বন্যা, খাদ্যাভাব, সামাজিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি। নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন কোটি শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন ছিল বড় চ্যালেঞ্জ বিষয়।

সেই চ্যালেঞ্জের বিষয় গুলো নিয়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সরকার গঠন করে এবং বিভিন্ন সরকারের পালাবদল করে আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বিজয় দিবস চলছে। স্বাধীনতার এত বছরে এসে স্বাভাবিক ভাবে একটা প্রশ্ন চলে আসে কেমন আছে বাংলাদেশ? মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কী দেশে শাসন ব্যবস্থা চলে? রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের পবিত্র সংবিধানের চার মূলনীতি মধ্যে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ কী যথাযথ ভাবে কার্যকর আছে? আমরা পাকিস্তান শাসকদের শাসন আমল ও বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের শাসন আমল মূল্যায়ন করে দেখতে চাই। সত্যিকারে মানুষ শোষণযন্ত্র থেকে তি মুক্তি পেয়েছে?

বর্তমানে দেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন, রক্তারক্তি, গুম ও খুন যেন নিত্যদিনের ঘটনা। ঘরে বাইরে নারী নির্যাতন, কলকারখানায় লুটপাট ও আগুনে শ্রমিকের কান্নায় বলে দিচ্ছে শ্রমিকরা শোষিত। মুনাফাখোর, মজুতদার ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অবিশ্বাস্য অগ্নিমূল্য। সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। ফলে সড়কে ছাত্রদের চিৎকার ও কান্নায় সংবাদমাধ্যমে হৈচৈ। সুন্দরবনসহ প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়নের বাজিমাত। বারশত নদীর দেশে নদীগুলো বিলীন হয়ে খালে পরিণত, শিক্ষা ব্যবস্থা বাণিজ্যিকীকরণ, ধনী গরিবের বৈষম্য যেন পিরামিড আকৃতি, যৌন সহিংসতা থেকে আত্মহত্যা বেড়েই চলছে, দেশে গণপিটুনিতে হাজার হাজার মারা গেছে, শহরে বস্তির সংখ্যা বেড়েই চলছে, ধান চাষিরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ধানে আগুন ও আত্মহত্যার খবর কানে আসে।

ফলে কৃষককের কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নেই, করোনাভাইরাস এসে চিকিৎসা খাতের নাজুক অবস্থা প্রকাশিত হয়েছে, গরিবের ত্রাণ চুরি, পাথর-কয়লাসহ জাতীয় সম্পদ চুরি, দুর্নীতি আর লুটপাট মহোৎসব ইত্যাদি সহিংসতা ব্যক্তি ও সমাজকে ক্ষত-বিক্ষত করেই চলছে। তাহলে এই সহিংসতা উপহার পাওয়ার জন্য কী আমাদের দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিল? রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করেছিল মানব মুক্তির জন্য। গর্বের বিষয় এখনো বাংলার বীর সৈনিক মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন। এই স্বাধীন দেশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারাই খুবেই উদ্বিগ্ন কারণ তারা এখনো বলছে দেশের এই সহিংসতা দেখার জন্য তো যুদ্ধ করেনি। তাহলে মেনে নিতেই হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আজ বিপন্নতার পথে। কে রক্ষা করবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিপন্নের পথে কারণ এ দেশে ব্যবসায়ীদের একাংশ রাজনীতির মধ্যে প্রবেশ করে নিজেদের মত মুনফা লুটে নিচ্ছে। তাদের দেশপ্রেম কোনো লক্ষ্য নয় তারা তো বাণিজ্য করতে কৌশলে রাজনীতিতে প্রবেশ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতেছে। একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের হলফনামায় কেমন করে রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের উত্থান হয়েছে। স্বাধীনতার দুই বছর পর প্রথম নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৫ শতাংশ। ১৯৯০ সালের পর থেকেই রাজনীতিতে' পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ১৯৯৬ সালে ব্যবসায়ী এমপির হার হয় ৪৮ শতাংশ, ২০০১ সালের সংসদে এ হার দাঁড়ায় ৫১ শতাংশ। ২০০৮ সালে মোট এমপির ৬৩ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোট এমপির ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদে এমপিদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৪০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ!

রাজনীতি যদি রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত না হয়ে ব্যবসায়ীদের দ্বারায় নিয়ন্ত্রণ হয় তাহলে সেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে না বরং মানুষ শোষিত হবে। কৃষিতে উৎপাদন বাড়লেও ভূমিহীনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এর কারণ কী? বর্তমানে আমাদের দেশে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৪০ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯টি, যা শতকরা হিসাবে দাঁড়ায় ১১.৩৩ শতাংশ। কেন দিনের পর দিন ভূমিহীনের সংখ্যা বাড়ছে? আর অপর দিকে ক্ষমতাসীনদলের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রসংগঠন গুলো সন্ত্রাসী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গুটিকয়েক ছাত্রদের জন্য ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য কেন হারিয়ে যাবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকলে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা সুযোগ থাকবে। সেই সঙ্গে সকল মত ও পথের গণতান্ত্রিক চর্চা থাকবে তাহলে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করতে পারবে না।

বিজয় দিবসে ভাবতে হচ্ছে আমাদের দেশের নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে। ধর্মের অবমাননা গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা, সারা দেশে নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দুই বছরের শিশুকন্যা থেকে শুরু করে বৃদ্ধাসহ যেকোনো বয়সের নারী সে হিন্দু হোক বৌদ্ধ হোক, খ্রীষ্টান হোক অথবা মুসলমান হোক যেকোনো ধর্মের নারী পাহাড় বা সমতল, ঘরে-বাইরে, স্কুল-মাদ্রাসা, কলকারখানা যেকোনো স্থানে, দিনে কিংবা রাতে যেকোনো সময়ে বাংলাদেশের একজন নারী নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি সমমজুরি আইনে থাকলেও বাস্তবে প্রায় সমস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পেয়ে থাকেন।
সম্পত্তি বণ্টনবৈষম্যের আচারণে শিকার নারী সমাজ। নারী তো পণ্যের বস্তু নয় তাহলে তাদের অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে?

মানুষ সহিংসতা বলতে কেবল শারীরিক খুন, জখমই বুঝে কিন্তু বাস্তবে সহিংসতা মানসিক ও আবেগগত ভাবে ঘটে। দেশের মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঠামোগত সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কখনো কখনো সেই সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার চেষ্টাও করে। কাঠামোগত সহিংসতা থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শিক্ষাকে পণ্যে নয় সকলের মৌলিক অধিকার হিসাবে নিশ্চিত করা হবে, নারীকে পণ্য হিসেবে নয় মানুষ হিসাবে মানবিক মর্যাদা দিবে, চিকিৎসা সেবাকে বানিজ্যিক নয় মৌলিক অধিকার হিসাবে প্রাধান্য পাবে, কৃষককের কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হবে, বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা হবে, ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন ব্যবস্থা হবে, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকবে, একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র পরিচালনা হবে তাহলে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবসে আবালবৃদ্ধবনিতা আনন্দে-উল্লাসে আবারও ফেটে পড়বে।

ফলে বিজয়ের উল্লাস ম্লান হয়ে যাক আমরা তা চাই না। আমরা বাঙালি জাতি যে বীরের জাতি তা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। মহান মুক্তিযুদ্ধ নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। সেই প্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের অতীত ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি সুখি সমৃদ্ধশালী সাম্যের সমাজ ও দেশ গড়াতে জনগণের পাশাপাশি রাষ্ট্রকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাশেদুজ্জামান রাশেদ: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

Header Ad
Header Ad

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি মির্জা ফখরুলের

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি জানান।

বুধবার মধ্যরাতে সচিবালয়ের মতো নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তামূলক স্থানে আগুন লাগা এবং ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীর মৃত্যু ও দুই-তিনজন আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং হতাহতদের জন্য শোক ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সচিবালয়ের মতো স্পর্শকাতর ভবনে ভয়াবহ আগুন, ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীর মৃত্যু ও দুই-তিনজনের আহত হওয়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ভস্মীভূত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরণের অগ্নিকাণ্ডে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়া অস্বাভাবিক নয়।’

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির জোর দাবি করছি। নিহতের পরিবারসহ আহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জোর আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

Header Ad
Header Ad

বিপিএলে সাকিব না থাকায় হতাশ সুজন

ছবি: সংগৃহীত

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে খেলতে পারছেন না সাকিব আল হাসান। নিজের ক্যারিয়ারে প্রথমবার মিস করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছে যা দেশের ক্রিকেটের জন্য বড় ব্যর্থতা।

বৃহস্পতিবার ( ২৬ ডিসেম্বর) মিরপুরে ঢাকা ক্যাপিটালসের অনুশীলন শেষে খালেদ মাহমুদ সুজন জানিয়েছেন, ‘সাকিব বাংলাদেশে খেলতে পারছে না এটা আমাদের সবার জন্য ব্যর্থতা। সেখানে যদি আমরা একটু বিচক্ষণ হতাম তাহলে ভালো হতো। দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেটার সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না, এটাতে ক্রিকেটাররা সবাই হতাশ। ওর না থাকা সবারই খারাপ লেগেছে।’

সাকিবের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে আলোচনা থাকলেও সুজন মনে করেন, ‘ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে সাকিব রাজনীতি করেছে। তবে সারা বাংলাদেশ ওকে চেনে ক্রিকেটার হিসেবে। ওর উত্থান ক্রিকেটার হিসেবে। সারা বিশ্বে পরিচিতি ক্রিকেটার হিসেবে। রাজনীতি করেছে, কতটা অন্যায় করেছে সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে ওই ৭-৮ মাস সময়টা ওর এত লম্বা ক্যারিয়ারের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললাম এটাই আমার কাছে সবচেয়ে অবাক লাগে। সেখানে আমরা যদি একটু বিচক্ষণতার পরিচয় দিতাম... দেশের একটা ক্রিকেটার, দেশের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে না। ক্রিকেটাররাও সবাই হতাশ আমার মনে হয়। সবাই হয়তো মাইকের সামনে বলতে পারে না। কিন্তু ক্রিকেটাররাও হতাশ। কারণ সাকিবের সব ক্রিকেটারের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সবাইকে সবভাবে সহযোগিতা করে সে। তো খারাপ লাগছে, এটাই।’

শাকিব খানের দল ঢাকা ক্যাপিটালসের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। যদিও এখনও মালিকের সাথে কোন কথা হয়নি তার, ‘ভেরি আনফরচুনেটলি এখনও আমার সঙ্গে দেখা হয়নি। ডেফিনিটলি হয়তো বা হবে। দুই একদিনের মধ্যে হয়তো হবে। আমি ব্যস্ত ছিলাম, উনিও ব্যস্ত থাকেন অবশ্যই। ডেফিনিটলি ঢাকা টিম বানিয়েছে, প্রত্যেকটা টিম তো বানায় ভালো কিছুর আশায়, ফাইনাল খেলার আশায়, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশায়। এই ফরম্যাটটায় তো অবশ্যই লাক লাগে, যদি লাক ফেভার করে তাহলে হোয়াই নট? কথা হলে বুঝতে পারবো, ওনার প্রত্যাশাটা কী।’

বৃহস্পতিবার প্রথম বারের মতো অনুশীলন করেছে ঢাকা। যদিও অনুশীলনে কোন প্রাণ ছিল না। কেননা বিদেশি ক্রিকেটাররা দলের সাথে যুক্ত হন না। এই কারণে দেখা যায় অনুশীলনে সেভাবে প্রাণ থাকে না। প্রথম দিনের অনুশীলন নিয়ে সুজন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘যেটা হয় বিপিএলের ফার্স্ট ডেতে অনুশীলন খুব একটা ভালো হয় না। ফরেইন প্লেয়াররা আসে না, লোকাল প্লেয়াররা অনেকে রেস্টে থাকে। একটা টুর্নামেন্ট শেষ হলো, অবশ্যই তাদের একটা রেস্ট দরকার, ফাস্ট বোলার যারা আছে বা যারা ন্যাশন্যাল প্লেয়ার আছে তারাও উইন্ডিজ থেকে একটা লম্বা ট্যুর করে এসেছে। তাদের বিশ্রাম দরকার। তারপরও মোস্তাফিজ এসেছে, লিটন আসেনি, মুগ্ধকে পাইনি, তামিম ছিল না। বাট অ্যাগেইন একটা গেট টুগেদার। ইনফ্যাক্ট তাদের ট্রেনিংয়ের থেকে ছেলেরা খেলার মধ্যেই ছিল, তবে যখন সম্পূর্ণ টিম আসবে, তখন ভালো লাগবে।’

আগামী ৩০ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে বিপিএল। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে উইকেটের আচরণ নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। এবারের আসরে ভালো উইকেটের প্রত্যাশা সুজনের, ‘টি-টোয়েন্টির উইকেট যে রকম হয় ওই রকম প্রত্যাশা থাকবে। আশা করি, কিউরেটররা সেভাবেই বানাবে। অবশ্যই তারা চেষ্টা করে ভালো কিছু দিতে। আশা করি, এবারও ভালো দিতে পারবে। যদি ফ্ল্যাট উইকেট হয়, রানের খেলা হয়, যেখানে বোলারদের স্কিলের ব্যাপার থাকে। ভালো উইকেটে অবশ্যই বোলারদের স্কিলের প্রয়োজন ব্যাটারদের ডিফেন্ড করার জন্য। আমি বিশ্বাস করি বেশি রানের খেলা হলে সাপোর্টাররাও মজা পায়। দর্শকরা আনন্দ পায়। আমি চাই যে রানের খেলা হোক, ভালো উইকেট থাকুক সেটা আমি চাই।’

Header Ad
Header Ad

বুধবার রাতে আগুন লেগেছিল ইস্কাটনের সচিব নিবাসেও

ছবি: সংগৃহীত

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এটি নাশকতা হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এদিকে ওই রাতেই আরেকটি আগুনের ঘটনা ঘটে। সেটি রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার সচিব নিবাসে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

একই রাতে আরেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে রাজধানীর ইস্কাটনের সচিব নিবাসে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন জানান, রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে অবস্থিত সচিব নিবাসের ২০ তলা ভবনের ৪ তলার একটি বাসার রান্নাঘরে আগুন লাগে।

সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে কেউ হতাহত হয়নি।প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় নাশকতার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। একই রাতে দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় এ বিষয়ে যথাযথ তদন্তের দাবি উঠেছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ উভয় ঘটনাস্থলে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র বা নাশকতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি মির্জা ফখরুলের
বিপিএলে সাকিব না থাকায় হতাশ সুজন
বুধবার রাতে আগুন লেগেছিল ইস্কাটনের সচিব নিবাসেও
পূর্বাচলে হাসিনা পরিবারের প্লট নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু  
চোখের জলে এক বীরকে বিদায় দিল ফায়ার সার্ভিস, পরিবারে শোকের মাতম
বিডা’র আমন্ত্রণে ঢাকায় আসছেন ইলন মাস্ক
সচিবালয়ে আগুন: কারণ খুঁজতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
সরকার হাসিনা আমলের নথি চাওয়ার পরই সচিবালয়ে আগুন: রিজভী
ময়মনসিংহে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষ, একই পরিবারের ৪ জন নিহত
হাসিনার দালালেরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইল পুড়িয়ে দিয়েছে: সারজিস
লামায় ত্রিপুরাদের পাড়ায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা
সচিবালয়ে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করলেন উপদেষ্টারা
সচিবালয়ের আগুন পরিকল্পিত হতে পারে: নৌবাহিনী কর্মকর্তা
বগুড়া কারাগারে সাবেক এমপি রিপুর ‘হার্ট অ্যাটাক’, আনা হয়েছে ঢাকায়
নিখোঁজের ৪২ ঘণ্টা পর কর্ণফুলী নদীতে মিলল ২ পর্যটকের লাশ
ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় নারী-শিশুসহ আটক ১৬
রাফসানের সঙ্গে প্রেম নিয়ে মুখ খুললেন জেফার
সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে বোমা হামলায় ৫ সাংবাদিক নিহত
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা