লাকসাম জেলা বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নিকট খোলা চিঠি
লাকসাম জেলা বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নিকট খোলা চিঠি
মো. তাজুল ইসলাম
মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়
মাননীয় মন্ত্রী, আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
বাংলাদেশের মানচিত্রে লাকসাম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। নানা ঐতিহ্য সমৃদ্ধ লাকসামকে জিলা বাস্তবায়নের দাবি ১৯৭২ সাল থেকে। আপনার পূর্বসূরি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্য বৃহত্তর লাকসামের দুই কৃতি সন্তান রাজনীতিবীদ মরহুম আবদুল আউয়াল এবং মরহুম জালাল আহমেদ ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে লাকসামকে জেলা করবার দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছিল। এটিই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে দেওয়া প্রথম দাবি। ১৯৭২ থেকে ২০২২ সালে এই দাবির পঞ্চাশ বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু লাকসামবাসীর স্বপ্নের এই লাকসাম জেলা আজো বাস্তবায়িত হয়নি।
মাননীয় মন্ত্রী,
আলোর শহর লাকসাম। এই লাকসামে আলোকিত মানুষের বসবাস। ‘কত লাকসাম কত বাত্তি’ নামে খ্যাত এই লাকসাম এর প্রায় চার শত একর জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন যার মাধ্যমে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ভ্রমণ করা সম্ভব। এক সময়ের বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম থানা লাকসামকে বিভক্ত করে ইতিমধ্যে চারটি উপজেলা গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ চারটি উপজেলায় সর্বমোট ভোটার সংখ্যা প্রায় দশ লাখ। বৃটেনের মহারাণী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক উপাধী প্রাপ্ত নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর স্মৃতি বিজড়িত শহর এই লাকসাম।
মাননীয় মন্ত্রী,
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত ভোটার তালিকা অনুযায়ী এই রকম প্রায় ২৫টি জেলা পাওয়া যাবে যার ভোটার সংখ্যা লাকসাম জেলা রূপরেখার ভোটার সংখ্যার চাইতেও কম। লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন পরিষদ কর্তৃক প্রণীত লাকসাম জেলার সম্ভাব্য রূপরেখা অনুযায়ী লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন বিজ্ঞ মহল। আর লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন করা হলে অত্র এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তনের পাশাপাশি লাকসামকে শিল্প ও বাণিজ্য নগরে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে। দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক অঞ্চলের পুন বিন্যাস করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন জেলা ও বিভাগের সৃষ্টি হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কুমিল্লা জেলার অন্তঃর্গত লাকসামকে জেলা ঘোষণা করার জন্য আপনার নেতৃত্ব ও সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।
মাননীয় মন্ত্রী,
বৃহত্তর লাকসামের সঙ্গে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলা এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও বরুড়া উপজেলা যুক্ত করা গেলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার লিষ্ট অনুযায়ী প্রস্তাবিত লাকসাম জিলার সর্বমোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় বিশ লাখ। এক্ষেত্রে ইতিহাস, ঐতিহ্য, আয়তন, জনসংখ্যাসহ সকল দিক বিবেচনায় লাকসাম জিলা বাস্তবায়নের যৌক্তিক দাবিদার। বাংলাদেশে ইতিপূর্বে অনেক জিলা ঘোষিত হয়েছে যার ভোটার সংখ্যা বর্তমান লাকসাম জেলা রূপরেখার ভোটার সংখ্যার চাইতে অর্ধেক বা তার চেয়েও কম। উদাহরণস্বরূপ মেহেরপুর জিলা মাত্র ৩টি উপজিলা নিয়ে গঠিত, ঝালকাঠি জিলা মাত্র ৪টি উপজিলা নিয়ে গঠিত এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার লিস্ট অনুযায়ী এ জিলার সর্বমোট ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ। নড়াইল জেলা মাত্র ৩টি উপজিলা নিয়ে গঠিত এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার লিস্ট অনুযায়ী এ জিলার সর্বমোট ভোটার সংখ্যা সোয়া ৪ লাখ মাত্র।
মাননীয় মন্ত্রী,
১৯৮৭ সালে লাকসাম পৌরসভার নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করতে লাকসাম এসেছিলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি (তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী) মরহুম জিল্লুর রহমান। ওই সময় লাকসামবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান লাকসামকে জিলা বাস্তয়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে লাকসাম পাইলট স্কুল মাঠে বিশাল নির্বাচনী জনসভায় লাকসামবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
মাননীয় মন্ত্রী,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন আস্থাভাজন সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী আপনি। আপনার উপর আস্থারেখে জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে পাঁচবার মনোনয়ন দিয়েছেন এবং আপনি বৃহত্তর লাকসামবাসীর হয়ে সংসদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনার উপর আস্থা রেখে আপনাকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। আপনার এই সাফল্যে আমরা গর্বীত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আপনি একজন আস্থাভাজন বিশ্বস্ত কর্মী। আপনি চাইলেই সহজেই লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন সম্ভব। আর আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে লাকসাম জেলা বাস্তবায়িত হলে ইতিহাসের পাতায় আপনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যতদিন লাকসাম থাকবে ততদিন আপনার নাম উচ্চারিত হবে বৃহত্তর লাকসামের মানুষের মুখেমুখে।
মাননীয় মন্ত্রী,
উপরোল্লিখিত বিষয়াদি সু-বিচেনাপূর্বক লাকসামকে জেলা ঘোষণার জন্য আপনার সু-মহান কৃপাদৃষ্টি কামনা করছি। আপনার আন্তরিকতায় আপনার নেতৃত্বে লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন হলে বৃহত্তর লাকসামবাসী আজীবন আপনার নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকবে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
জয় হোক লাকসামের মানুষের।
বিনীত,
শিব্বীর আহমেদ, আহ্বায়ক, লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন পরিষদ