ঝুটন দত্ত’র একগুচ্ছ কবিতা
বেলগাছ
মন খারাপের দেশে যাই,
তারপর জল হয়ে
ঝরে পড়ি তোমাদের কাচারি বাড়ির দক্ষিণ আঙিনায়।
লুকিয়ে মারবেল খেলার শৈশব স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একা বেলগাছ, আর সব হয়ে গেলো বিলুপ্তির
ইতিহাস।
অধরা আক্ষেপ
তোমাকে দেখার পর আর কিছুই দেখা হয়নি আমার,
অতঃপর ধোঁয়াসা আর শূন্যতার হাহাকারে সঁপেছি নিজেকে।
দূরদেশের মিসৌরির মতো তুমিও
প্রাণের স্পন্দনে জাগাতে পার ঢেউ,
তোমাকে ছাড়া সেই কবে থেকে পঙ্গু, বধির, অর্থহীন আমি;
একটা ঠিকঠাক ভাষার সেতু নির্মাণ করতে পারিনা বলেই
হয়তো আজও অধরা আক্ষেপে থাক নদীর দুই তীর হয়ে।
কাঁটাতারের দরজা
বৃষ্টিরাতে শেষ ট্রেন চলে যায়,
আমরা হাঁটতে থাকি একটি গন্তব্যহীন পথে।
মধ্যকাশে বিদ্যুৎ গতিতে বেজে উঠে হঠাৎ হুইসেল,
আর
আমাদের ছাতাবিহীন শরীর কাঁপতে থাকে শীতার্ত রাতের হরিণ শাবকের মতো।
সমস্ত দিন চলে যায় আঁধারে মিশে মুহুর্মুহু বেদনায়,
আমাদের চোখ হঠাৎ ধোঁয়াশা কোনো কাঁটাতারের দরজায় থমকে যায়।
মায়াটুকু
তোমাকে ভালোবাসার
বিনিময়ে হয়েছি অপরাধী,
হয়েছি ধূসর পান্ডুলিপির গাঙচিল,
তৃষ্ণার্ত সময়ে গভীর জঙ্গলে দাঁড়িয়ে
অতীতের নিরেট প্রেমের রোমন্থন করি।
তোমার মুখাবয়ব মনে এলে খুঁজে ফিরি আমার ভুল,
আর আনমনে গুনে যাই আকাশের যত ক্লান্ত তারা।
সভ্যতার লাঙ্গল
হারিয়েছি বহুবার আমি প্রচলিত ধারায়
চিরায়ত পথের বাঁকে ডেকে যায় বনমোরগ,
ঘোলাটে চোখের আকাশ থেকে
ঝরে পড়ে চৈত্রের বৃষ্টি অবিরাম।
অরণ্য গভীরে নেচে যায়
ঝুঁটি তুলে সময়ের ময়ূরী,
বড় বিস্ময় জাগে!
বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে চাষ হয় সনাতন পদ্ধতির,
গরুর কাঁধে ভর করে আজও চলে আমাদের সভ্যতার লাঙ্গল-জোয়াল।
কবি: ঝুটন দত্ত
আরএ/