মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

বঙ্গমাতা ব্যতীত মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস অসম্পূর্ণ

টুঙ্গিপাড়ার ছোট্ট খোকার জাতির জনক হয়ে ওঠা এবং বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনে সাফল্য পাওয়ার নেপথ্যে যে নারী জাদুর কাঠির মতো কাজ করে গেছেন তিনিই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। বাঙালির হৃদয়ে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার আরেক নাম বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব।তিনি প্রেরণা, শক্তি আর সাহসের উৎস হয়ে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিলেন।বাংলার মুক্তিসংগ্রামের মহানায়কের প্রেরণাদাত্রী সহধর্মিণীর আজ ৯২ তম জন্মবার্ষিকী।

বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শেখ জহুরুল হক এবং মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। শৈশবে বাবা-মাকে হারানোর পর শেখ ফজিলাতুন্নেছা বেড়ে ওঠেন দাদা শেখ কাশেমের কাছে। মাতৃস্নেহে আগলে রাখেন তার চাচি এবং পরবর্তী সময়ে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুর মা সায়েরা খাতুন। পিতার অভাব বুঝতে দেননি বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফুর রহমান। তাদের আদরেই বড় হয়ে ওঠেন তিনি। নিজের সন্তানদের সঙ্গে শৈশবে শেখ ফজিলাতুন্নেছাকেও ভর্তি করে দেন স্থানীয় মিশনারি স্কুলে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আর এগোয়নি। তবে ঘরে বসেই পড়াশোনা করেছেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সের শেখ মুজিবের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। বিয়ে হলেও বঙ্গবন্ধু এন্ট্রান্স পাস করার পরই মূলত তাদের সংসার জীবন শুরু হয়। তাদের বিয়ের ফুলশয্যা হয়েছিল ১৯৪২ সালে।

বেগম মুজিব ছিলেন একজন ন্যায়, ধর্মপরায়ণ, আদর্শবান, পরোপকারী ও সরল মনের মানুষ। দাম্ভিকতা কিংবা অহংকার তাঁকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ যেমন অভিন্ন সত্ত্বা ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু ও শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবও যেন একই আত্মা। জাতির পিতার জীবনে বঙ্গমাতার প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বেগম মুজিব মনেপ্রাণে একজন সর্বংসহা আদর্শ বাঙালি নারী। জীবনে নিয়েছেন ঝুঁকি, পোহাতে হয়েছে কষ্ট- দুর্ভোগ। বঙ্গবন্ধু জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছেন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। কখনো কারাগারে, কখনো  দেশে বা  দেশের বাহিরে। ফলশ্রুতিতে প্রিয়তম স্বামীকে কাছে না পেয়ে বঙ্গজননী কখনো বিচলিত না হয়ে বরং ধৈর্যশীল বাঙালি নারী হয়ে সন্তান ও পরিবারকে সামাল দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর লেখক হওয়ার উৎস ও অনুপ্রেরণাও বঙ্গমাতা নিজে। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম দলিল হিসেবে  " অসমাপ্ত আত্মজীবনী " এবং  " কারাগারের রোজনামচা " গ্রন্থ দুইটি আমরা পেয়েছি তাঁরই উৎসাহ ও উদ্দীপনায়। "অসমাপ্ত আত্মজীবনী"র শুরুতে সেই বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত আমরা পেয়ে থাকি। "আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বললো, বসেই তো আছো, লেখো তোমার জীবনের কাহিনী"।

দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধে অবিচল এক মা বঙ্গমাতা শেখ মুজিব। কারাবরণ ও রাজনৈতিক কারণে জাতির পিতা সংসারের দেখভাল করতে না পারাটা বেগম মুজিবের কাছে কখনো দৃষ্টিকটু ছিল না বরং স্বামীকে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। স্বামীর বন্দিকালে সংসারের ভার বহন করেছেন, সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের। অগণিত কর্মীর খোঁজ রেখেছেন, যাদের বাড়িতে খাবার ছিল না তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। নেতা-কর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। সত্যিকারের মায়ের মত পরম যত্নে মমতার আঁচলে সবাইকে এভাবেই আগলে রাখতেন।

বঙ্গমাতার অন্যতম একটি শখ বই পড়া। বঙ্গবন্ধু যখন রাজনৈতিক কারণে  বাহিরে বাহিরে থাকতেন তখন সাংসারিক কাজের অবসরে  তিনি শরৎ,নজরুল, বিভূতিভূষণ প্রমুখকে পড়তেন। গানও শুনতেন। স্বামী বাড়িতে ফিরলে পঠিত বইয়ের বিষয়বস্তু  নিয়ে আলোচনা করতেন।

শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কেবল একজন মা- ই নন পিতাও বটে। স্বামীর জেলে থাকাকালীন সন্তানদের পিতৃস্নেহ দিয়েছেন তিনি। কখনোই পিতার অভাব সন্তানদের বুঝতে দেননি। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুর উপর জেল- জুলুম, মামলা অব্যাহত রেখেছিল, নিজের ঘরের আসবাবপত্র, অলংকার বিক্রি করে সংসার এমনকি সংগঠন ও নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন বঙ্গমাতা। আমেরিকা থেকে আনা ফ্রিজটিও সেদিন বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি। সংসারে টাকার অভাব ছিল সেটা সন্তানদের বুঝতে না দিয়ে বরং তাদের বলেছিলেন- "ঠাণ্ডা পানি খেলে সর্দি- কাশি হয়, গলা ব্যথা হয়, ঠাণ্ডা পানি খাওয়া ঠিক না। কাজেই এটা বিক্রি করে দিই "। সংসারের অভাব অনটনের কথা তাঁর মুখে কখনো শোনা যায়নি। শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পর্বতের ন্যায় অবিচল ছিলেন বঙ্গমাতা।

বাঙালির ত্যাগ, সংগ্রাম ও অর্জনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। জাতির পিতা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দুটি জিনিসকে প্রধান শক্তি হিসেবে মানতেন। একটি এদেশের স্বাধীনতাকামী জনতা অপরটি প্রিয়তমা স্ত্রী বেগম মুজিব।

বঙ্গমাতার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি না হলেও তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, জ্ঞানী ও বিচক্ষণতা সম্পন্না নারী ছিলেন। যা খুব ভালো করেই জানতেন বঙ্গবন্ধু। লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু বঙ্গমাতা প্যারোলে মুক্তি মানতে নারাজ। এমনকি এতে কঠোর আপত্তিও জানিয়েছিলেন। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সেদিন বঙ্গমাতা পূর্ববাংলার আন্দোলনের গতি দেখে ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন - বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তিই হবে। আর সেটাই হয়েছিল। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুসহ সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। ঠিক পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালি শেখ মুজিবকে  " বঙ্গবন্ধু " উপাধিতে ভূষিত করেছিল।

বাংলাদেশের প্রথম ফার্স্টলেডি হয়েও জীবন যাপন করেছেন অতি সাধারণ নারীর মতো। একজন মন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও বিলাসিতাপূর্ণ আড়ম্বর জীবন অতিবাহিত না করে সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন। দামি শাড়ি, গহনা, অলংকার এগুলোর প্রতি তাঁর কখনো লোভ ছিল না। স্বামীর কাছে চাওয়া বা দাবি করতেন না। এবিএম মূসার এক কলামে ৩২ নম্বরের ঐ বাড়ির সেই বঙ্গজননীর সাদামাটা জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে এভাবে- "বঙ্গবন্ধু যখন দেশের প্রেসিডেন্ট তখন একদিন তার বাড়িতে গেলাম তার সঙ্গে দেখা করতে।ভাবি পানের থালাটা হাতে নিয়ে সামনে এলেন। পান বানিয়ে একখানা আমার দিকে দিলেন। আর একখানা নিজে মুখে দিলেন"।

বঙ্গমাতা কখনো মিডিয়া কিংবা পত্র-পত্রিকায় এমনকি খবরেও আসতে চাইতেন না। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাহিরের কোনো অনুষ্ঠানেও যেতে পছন্দ করতেন না।  কিন্তু পর্দার আড়াল থেকে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য বঙ্গপিতাকে উৎসাহ, শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। বেগম মুজিব আসলেই বাঙালি জাতির মাতা, যিনি ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেও একজন অতি সাধারণ নারী। ভিনদেশী মেহমানরাও বঙ্গমাতার এই রূপ দেখে মুগ্ধ।

উত্তাল মার্চে ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুকে  তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিতে হবে। ইতোমধ্যে বাড়িতে অনেকেই এসেছে। এ বলছে এটা বলতে হবে, ও বলছে না এটা বলতে হবে। এসব শুনে জাতির পিতা বিচলিত। কারটা শুনবে, আর কারটা বলবে এটা ভেবে চিন্তিত । কিন্তু সেদিন শান্তির দূত হয়ে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুকে আলাদা ঘরে নিয়ে, ১৫ মিনিট বিশ্রাম নিতে বললেন। বঙ্গমাতা বললেন - " অনেকেই অনেক কথা বলবে। তুমি সারা জীবন আন্দোলন সংগ্রাম করেছ, তুমি জেল খেটেছ।তুমি জান কী বলতে হবে? তোমার মনে যে কথা আসবে সে কথাই বলবা "। তিনি আরও বলেছিলেন,  " মনে রেখো- তোমার সামনে আছে জনতা, এবং পিছনে বুলেট। তোমার মন যা চাইছে তুমি শুধু সেটাই আজ করবে "। সেদিন প্রিয়তমা স্ত্রীর কথাই মন দিয়ে শোনেন এবং উজ্জীবিত জনসমুদ্রে তর্জনী উঁচিয়ে ঘোষণা দেন,  " এবারের সংগ্রাম- আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম- আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ;"। স্বাধীনতাকামী বাঙালি ভাষণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই মুক্তির নেশায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং কাঙ্ক্ষিত মুক্তি লাভ করে।

রাজনীতির দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে মানবিক নারীর সহযোগিতা প্রদানে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ভূমিকা সত্যিই ব্যতিক্রম। মেয়েদের আত্মমর্যাদাশীল করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান বঙ্গমাতার। মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে নিজের বাড়িতে স্কুল খুলেছেন, মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। এমনকি স্বাধীনতার পর বীরাঙ্গনাদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখতে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। বীরাঙ্গনাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, " আমি তোমাদের মা "তিনি আরও বলেন, " এই বীরাঙ্গনা রমণীদের জন্য জাতি গর্বিত। তাদের লজ্জা কিংবা গ্লানিবোধের কোনো কারণ নেই। কেননা তারাই প্রথম প্রমাণ করেছেন যে কেবল বাংলাদেশের ছেলেরাই নয়, মেয়েরাও আত্মমর্যাদাবোধে কী অসম্ভব বলীয়ান "। ( দৈনিক বাংলার বাণী, ১৭ ফাল্গুন ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ককে আড়াল থেকে সাহস ও প্রেরণাদাত্রী  বেগম মুজিব ৭১ - এ নিজের ডানার আড়ালে সন্তানদের আগলে রেখে নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতেন। সন্তানদের বলতেন,  "কতবার কত দুর্দশায় পড়েছি,এবার না হয় একটু বেশি কষ্ট হবে "।

বঙ্গজননী প্রিয়তম স্বামীকে আমৃত্যু ভালোবাসতেন। সে ভালোবাসা কতটা হৃদয়াঙ্গম ছিল সে চিত্র ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যারকালে নিদারুণ ভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বঙ্গমাতা সেদিন সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে ঘাতকদের বলেছিলেন, "তোমরা আমাকে এখানেই মেরে ফেল "। শুধু জীবদ্দশায় না বরং মরণাকলেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী হয়েছেন মহীয়সী এই নারী।

রাজনীতির কবি, ইতিহাসের রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সাফল্যের মূলে বেগম মুজিবের অবদান সত্যিই ক্যারিশম্যাটিক ও  একই সঙ্গে মুজিব এবং বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ছিল। রাজনীতি ও সংগঠন চালাতে অর্থের প্রয়োজন। তা সাধ্যমত বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুকে জোগাড় করে দিতেন। নিজের হাত খরচের টাকা কিংবা পৈতৃক সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত টাকা স্বামীকে দিতেন। যা ’ অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে বঙ্গবন্ধু লিখে গেছেন। " রেণু খুব কষ্ট করত, কিন্তু কিছুই বলত না, নিজে কষ্ট করে আমার জন্য টাকা-পয়সা জোগাড় করে রাখত যাতে আমার কষ্ট না হয় "।  

মামলার বিষয়ে কোর্টে গেছেন, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন, পরিবারের ভার বহন করেছেন। নেতা- কর্মীদের দেখভাল করেছেন।একজন দক্ষ ও নীরব সংগঠক হয়ে বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর নিভৃত সম্রাজ্যের একমাত্র সম্রাজ্ঞী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তিন ছেলে, দুই পুত্রবধূ, আত্মীয়-স্বজনসহ সেনাবাহিনীর বিপথগামী  কিছু দুষ্কৃতকারীর বুলেটের আঘাতে তিনি শাহাদতবরণ করেন। বঙ্গমাতা  আজ আমাদের মাঝে নেই। তবে  প্রতিটি দেশপ্রেমিক জনতার হৃদয়ের মণিকোঠায় তিনি চিরকাল  থাকবেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাঁর দেশপ্রেম ও আদর্শ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

লেখক: মো. আহসান হাবিব, তরুণ কলামিস্ট, সদস্য, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম ও সাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 
 
Header Ad
Header Ad

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

ছবি: সংগৃহীত

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সোমবার গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি জানায় ডিএসসিসি।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, এতে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের অভ্যন্তরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত নকশায় না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ (রেস্টুরেন্ট) পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ভবনের ছাদে অবৈধভাবে রুফটপ রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে, যা জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করায় এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদহানির ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনৈতিক উপায়ে করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে।

ডিএসসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্পদ ও জানমালের ঝুঁকি এড়াতে নকশাবহির্ভূত সব রেস্তোরাঁ এবং ভবনের ছাদে স্থাপিত রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করা হলো। বাতিল করা লাইসেন্স দিয়ে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যেসব রেস্তোরাঁ সঠিক তথ্য না দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে ভবনের অনুমোদন কিন্তু বাতিল করা হয়নি। ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সশরীর উপস্থিত হয়ে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত দিলে সেগুলো সচল করা হবে।’

বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি জানায় ডিএসসিসি। ছবি: সংগৃহীত

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিটি রেস্তোরাঁকে আলাদা করে চিঠি পাঠাব।’

ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা না করেই ডিএসসিসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম চলছে। ব্যবসাগুলো এক দিনে গড়ে ওঠেনি। রাজউকের পাস করা ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ নেই বললেই চলে। বিগত সরকারের সময় এই জটিলতা নিরসনে একটা টাস্কফোর্স করা হয়েছিল। সেই টাস্কফোর্সের দুটি বৈঠক হয়েছিল। তারপর তো সরকার বদল হয়ে গেল।

ইমরান হাসান বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে এখন যদি ডিএসসিসি অভিযানে নামে, তাহলে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি হলে আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর রেস্তোরাঁর অনুমোদন ও অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি সামনে আসে। ওই ভবনে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল, তবে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদন ছিল না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চার বছর আগে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ করে। সেই জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৫২টি। বাকি সব ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন।

রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারীকে সরকারের সাতটি সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয়। রেস্তোরাঁর জন্য প্রথমে নিবন্ধন ও পরে লাইসেন্স নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সব সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে মাত্র ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১২৮টি রেস্তোরাঁ।

Header Ad
Header Ad

মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বান। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ ও জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কমিয়ে এনে মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী শাসনের অবৈধ আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশের অনেক সদস্য জনরোষের মুখে পড়েছেন।” পুলিশকে জনগণের বন্ধু হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা জানান, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ সদস্যদের আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো

নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ছবি: সংগৃহীত

বারবার নিলাম ডেকেও এস আলম গ্রুপের বন্ধকী সম্পত্তির কোনো ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছে না দেশের ব্যাংকগুলো। ফলে ঋণ আদায়ে এখন বাধ্য হয়ে অর্থ ঋণ আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে তারা। এতে পুরো প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত ও জটিল হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রামভিত্তিক এই শিল্পগোষ্ঠী ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জনতা ব্যাংক ১০,৭০০ কোটি টাকার বিপরীতে ছয়বার নিলাম ডেকেও কোনো সাড়া পায়নি। একইভাবে ইসলামী ব্যাংকও সাত দফা নিলাম আয়োজন করেও ব্যর্থ হয়েছে, যার মধ্যে আইডিয়াল ফ্লাওয়ার মিলসের ১,১০০ কোটি টাকার ঋণ সংক্রান্ত নিলামও অন্তর্ভুক্ত।

সাম্প্রতিক সময়ে এস আলম গ্রুপের একাধিক স্টিল মিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জমি নিলামে তোলা হলেও দরপত্র জমা পড়েনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়া পূরণের জন্যই তারা এসব নিলাম ডাকছেন, যদিও আগ্রহী ক্রেতার দেখা মিলছে না। অনেকেই এই বিষয়টিকে ভয় পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, এস আলম গ্রুপ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণ জব্দ করে।

বর্তমানে এস আলম গ্রুপের ওপর কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে ১৪ সদস্যের বিশেষ লিগ্যাল টিম। একই সঙ্গে তাদের জব্দকৃত শেয়ার বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

 

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল
মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো
সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই চার বছর পর সাদমানের সেঞ্চুরি
স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন প্রধান উপদেষ্টার, মাসিক খরচের বিষয়ে যা জানা গেল!
রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডরের বিষয়টি স্পষ্ট করুন: জামায়াত আমির
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন দশম গ্রেড, সহকারী শিক্ষক ১২তম
এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই: উমামা ফাতেমা
আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিল: প্রধান উপদেষ্টা
আত্মসমর্পণ করলেন তারেক রহমানের খালাতো ভাই
চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ল বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট
রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল: ফখরুল
দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শাটডাউন কর্মসূচি
ভারতের সামরিক আক্রমণ আসন্ন,পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি পাকিস্তানের
কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত মার্ক কার্নি
নওগাঁয় ডাকাত দলের ৩ সদস্যসহ ৮ জন গ্রেপ্তার, উদ্ধার লুণ্ঠিত মালামাল
নিজের মূত্র পান করেছিলেন বলিউড অভিনেতা পরেশ রাওয়াল
নাহিদ ইসলামকে বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
কিছু লোডশেডিং না হলে ভর্তুকি বেড়ে যাবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা
গণপিটুনির পর কারাগারে ইমামের মৃত্যু, গাজীপুরের পূবাইলে চাঞ্চল্য