ডিজিটাল ইভটিজিং ‘ক্রাশ অ্যান্ড কনফেশন’
প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে ভালোবাসার আদান প্রদান। কবি-লেখকদের লেখায় উঠে এসেছে অসংখ্য অসমাপ্ত, অর্ধসমাপ্ত এবং পূর্ণতাপ্রাপ্ত ভালোবাসার কাহিনি। তাজমহলের মতো রয়ে গেছে অসংখ্য ভালোবাসার নিদর্শন। সেসব নিদর্শন আজও ঝড় তুলে প্রেমিক মনে। ভালোবাসার মানুষের কপালের টিপ, নাকে জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম মোছা রুমাল, রাত জেগে লেখা চিঠি, দাঁতের আঘাতে থেঁতলে যাওয়া কলমের খাপ, চুলের ঘ্রাণ লেগে থাকা ক্লিপ জমায়নি এমন প্রেমিক খুঁজে পাওয়া দায়। কখনো হয়তো চাতক পাখির মতো দাঁড়িয়ে থেকেছে–কখন একটু প্রিয়তমার দেখা মিলবে, কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে দিবে চিঠিখানা, সাহস করে বলে দিবে নির্ঘুম রাতে জমানো সকল কথামালা।
ভালোবাসার সেই ঐতিহ্য এখনো রয়ে গেছে, শুধু বদলে গেছে ভালোবাসা প্রকাশের ধরণ। আগে চিঠি বিনিময়ের মাধ্যমে ভাব ও ভালোবাসা প্রকাশ করা হলেও বর্তমানের রোমিও জুলিয়েটরা ব্যবহার করতে শুরু করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখে প্রিয় মানুষের কাছে মনের অব্যক্ত কথামালা পৌঁছে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেইসবুক বা ইন্সটাগ্রাম সাইটের ‘ক্রাশ অ্যান্ড কনফেশন’ পেইজগুলো। নিজের বার্তাটি ‘সেন্ড মেসেজ’ অপশন অথবা ‘ই-মেইল’ এর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিলে এডমিনরা সেটা পেইজে প্রকাশ করে আর লেখার সাথে জুড়ে দেয় প্রাপকের ছবি।
সাম্প্রতিক এইসব পেইজে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অস্বাস্থ্যকর, অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ব্যক্তির গোপনীয়তা, ঘটছে সম্মান হানিও।
একটা ছেলে-মেয়ের নামে কনফেশন বা প্রেম নিবেদন ঘুরছে তাদের পরিবারের সদস্যদের ফোনে ফোনে। ব্যাপারটা সেই ছেলে বা মেয়ের কাছে যেমন বিব্রতকর, ঠিক একইভাবে বিব্রতকর পরিবারের কাছেও।
এসব সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া ছেলে-মেয়েরা পরবর্তীতে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে, লোকলজ্জায় সমাজে বের হতে পারে না এবং একপর্যায়ে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-২০১৮’ এর ২৬ ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির পরিচিত তথ্য (পরিচিত তথ্য বলতে নাম, ছবি, ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জন্মতারিখ, ফোন নাম্বার ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে) সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করেন তাহলে উক্ত ব্যক্তি উপধারা ২ অনুসারে অনধিক ৫ (পাঁচ) বছরের কারাদণ্ড বা ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
উক্ত আইনের ৩৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন, তাহলে উক্ত কাজটি আইনের চোখে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এমনকি শাস্তির ক্ষেত্রে মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে, সহায়তাকারী ব্যক্তি সেই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
তাই বলা যায়, কনফেশন পোস্টদাতা এবং পোস্টদানে সহায়তাকারী (এডমিন) উভয়ই অপরাধমূলক কাজ করছে। কনফেশনের নামে এসব কুরুচিপূর্ণ কাজ এবং মানহানিকর মন্তব্য থেকে তরুণ সমাজকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসতে হবে সচেতন মহলকেই। পরিবার থেকেই ছেলে-মেয়েদের এসব সাইবার বুলিংয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। এ শিক্ষাটা পাঠ্যবইয়েও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কারণ সাইবার বুলিং অন্য পরিবার বা অন্য ছেলে-মেয়েদের জন্য যেমন বিব্রতকর, ঠিক তেমনি আপনার পরিবার বা আপনার ছেলে-মেয়েদের জন্যও বিব্রতকর।
পরিশেষে একটাই চাওয়া, সাইবার বুলিংয়ের মতো এসব ঘটনা যেন আর না ঘটে এদেশে।
লেখক: আরাফাত আহমেদ রিফাত
শিক্ষার্থী, একাদশ শ্রেণি, টঙ্গী সিটি কলেজ
এসএ/