সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নবিদ্ধ হবেন: তৈমূর
ছবি: সংগৃহীত
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। সেক্ষেত্রে এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবেও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের একটি গণমাধমে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি ।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রায় সবাই সরকারি দলে গেছেন। আমরা সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করিনি। নৌকার বিরুদ্ধে দলীয় ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীকে নির্বাচন করছি। জনগণ যদি মনে করে, গণতন্ত্রকে রক্ষা ও শক্তিশালী করার জন্য ‘শক্তিশালী বিরোধী দল’ প্রয়োজন, তাহলে আমাদের ভোট দেবেন। সেক্ষেত্রে আমরা ‘প্রধান বিরোধী দল হব।’
নির্বাচনী বর্তমান পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো সংশয় দেখছি না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী সেখানে কমিটমেন্ট করেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। আমাদের দাবি, ভোটারের নিরাপত্তা, কেন্দ্রের নিরাপত্তা, প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।দেখা যায়, দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় এমপিদের নিজস্ব একটি বাহিনী থাকে। এরা বিভিন্ন লোকজনকে হুমকি-ধমকি দেয়। এগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য অন্তরায়।
আমাদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্র যেন সেটা বাস্তবায়ন করেন। আশা করি, সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সতর্ক আছেন।’
বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রসঙ্গে তৈমুর বলেন, ‘‘২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কিন্তু তাতে নির্বাচন ও সরকার গঠন ঠেকানো যায়নি। বিদেশিরাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি, সম্পর্ক অটুট রেখেছে। ২০১৮ সালে যাবে না যাবে না বলে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে গেল। কেন গেল, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। প্রতি আসনে ৪-৫ জন করে মনোনয়ন দিলেন। নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন পেলেন। নির্বাচনের দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। এরপর বললেন, যারা সংসদে যাবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন গেলেন, তাকে বহিষ্কার করা হলো। এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়া সবাই গিয়ে হাজির হলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে না, জাতীয় নির্বাচন করবে না। তাহলে আমরা সবখানে কি আওয়ামী লীগকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে দেব? আওয়ামী লীগকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দেওয়ার লোক তৈমূর আলম খন্দকার নন, তৃণমূল বিএনপি নয়। নির্বাচন একতরফা করতে করতে সারা দেশে এমপিদের নেতৃত্বে একটি নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে, মানুষ এগুলোর অবসান চায়। তবে প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার এই প্রতিশ্রুতির জন্য আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। এখন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, তাহলে প্রশ্নবিদ্ধ হবেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব।’’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হতে চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আমরা তৃণমূল বিএনপি থেকে ২৮০ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিলাম। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে ১৫১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছেন। এদের মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত ১৪০ জনের মতো প্রার্থী দলীয় ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চারজন সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন। সব মিলিয়ে তৃণমূল বিএনপি থেকে বিজয়ী হওয়ার মতো অনেক প্রার্থী রয়েছেন। আমাদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হলে তৃণমূল বিএনপির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী বিজয়ী হবেন ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘জাতীয় পার্টি তো এখন বলতে পারবে না যে, তারা বিরোধী দল। তারা নৌকায় উঠেছেন। ১৪ দলের নেতারাও নৌকা নিয়েছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রায় সবাই সরকারি দলে গেছেন। আমরা জাতীয় পার্টি কিংবা ১৪ দলের মতো সরকারের সাথে আঁতাত-সমঝোতা করিনি। আমরা নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করছি। আমরা আগেই বলেছি, তৃণমূল বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হতে চায়। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এখন আমাদের মধ্যে সাহসও বেড়েছে, আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে। জনগণ যদি মনে করে, গণতন্ত্রকে রক্ষা ও শক্তিশালী করার জন্য জাতির স্বার্থে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন, জনগণ আমাদের ভোট দেবে। সেক্ষেত্রে আমরা ‘প্রধান বিরোধী দল’ হবো।’’
বিএনপির আলোচিত নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। এর তিন দিন পরই সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা মারা যান। এরপর দল পরিচালনার দায়িত্ব নেন তার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তৃণমূল বিএনপির প্রথম সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যোগ দিয়েই মহাসচিব নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার । এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত বছরের জানুয়ারিতে তৈমূর আলম খন্দকারকে বহিষ্কার করেছিল বিএনপি।