সরকার মানুষ ও গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরছে: জোনায়েদ সাকি
সরকার দেশ ও স্বাধীনতা নিয়ে তামাশা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, ‘মানুষ যখন বাজারে গিয়ে চাল কিনতে পারে না, তখন আওয়ামী লীগের অনেকেই পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে বলেন, তাদের চেয়ে ভালো আছি। তারা এখন পাকিস্তানের সঙ্গে বাজারের খারাপ অবস্থার তুলনা দেন।’
শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোসহ নানা দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির জন্য বাজার সিন্ডিকেট দায়ী, টাকা পাচার দায়ী। তা সরকার স্বীকার করতে চায় না। সরকারের কাজ এগুলো সমাধান করা; কিন্তু তা না করে মানুষ ও গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ মানেই সংবাদ মাধ্যমের গলা টিপে ধরা। তথ্যমন্ত্রী আছেন একজন, তিনি মিথ্যা কথা বলে সব কিছু জায়েজ করতে চায়। তারা বলে এটা নাকি স্বাধীনতার ভিত্তিতে আঘাত, এত সহজেই স্বাধীনতার হুমকিতে পড়ে? আমি বলতে চাই, আপনারাই ভয় ভীতি দেখিয়ে স্বাধীনতা হুমকিতে ফেলছেন। যেই সরকার জনগণকে সমস্যায় রাখে তারা স্বাধীনতার সরকার হতে পারে না। এই সরকার নানা সময়ে নানা কথা বলে ভোটবিহীন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। তারা এখন নির্বাচনে হারবে বিধায় সব ধরনের নির্বাচন ভয় পায়। তারা বলে, তারা নাকি ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন, মিথ্যা কথা। তারা বলে, তারা নাকি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চিন্তা করে না। আবারো র্যাব একজন নারীকে হেফাজতে নিয়ে হত্যা করল। র্যাবকে সরকার গুম খুনে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে সব কাজ করছে। গত ২৬ তারিখে প্রথম আলো নিউজ করেছে, যেখানে ভাত মাছ খাওয়ার কথা বলেছেন একজন দিনমজুর জাকির হোসেন। সেখানে একটি শিশুর ছবি দিয়ে খবর প্রচার করা হয়েছিল, প্রথম আলো ১৭ মিনিটের মধ্যে ছবি সরিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করেছে।
সেই খবর প্রচার করায় গভীর রাতে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে আনা হয়। সারাদিন তিনি কোথায় ছিলেন তাও কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেননি। তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে অন্য একটি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এক ব্যক্তির গভীর রাতে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একটা সরকার কতো নির্লজ্জ হলে এই চেহারা দাঁড়ায়। পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও আইন ব্যবস্থা ধংস করে তাকে গ্রেপ্তার করে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরে রাখতে চায়। মতিউর রহমানকে দিয়ে বাকি সবাইকে শিক্ষা দিতে চায়। আসুন, সবাই মিলে তাদের ভয় ভেঙে ফেলি, তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। রাতের আঁধারে ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে তুলে আনা যায় না, আমরা এই আইনের পরিবর্তন করব। এই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক তাই এটা পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে, যেই কয়দিন ক্ষমতায় আছেন মানুষকে ভয় দেখিয়ে যাবেন। আমাদের এবারের লড়াই স্বাধীনতার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। মতিউর রহমান ও শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা জানাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই। আপনাদের গলায় গামছা পেঁচিয়ে নামাব, সেই আন্দোলন শুরু হয়েছে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুইয়া, সদস্য জুলহাসনাইন বাবু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পপি রানী সরকারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এমএইচ/এমএমএ/