'আবারও ক্ষমতায় আসতেই আদানির সঙ্গে চুক্তি'
বর্তমান সরকার নিজ স্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করেছে শুধুমাত্র আবারও অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার জন্য। শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এসব অভিযোগ করেন।
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির অসম চুক্তি বাতিলের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্নয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নিজ দেশের স্বার্থ বলি দিয়ে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করেছে। এ কোম্পানি নিজ দেশেই বিতর্কিত। এ চুক্তির বিরুদ্ধে খোদ ভারতেই সমালোচনার ঝড় বইছে।
আজকে ৭ টাকার বিদ্যুৎ কেনো ১৮ টাকায় কিনবো? আপনার ক্ষমতার স্বার্থে এগুলো করলেও কার টাকা দিয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছেন? এ টাকা আপনার ( প্রধানমন্ত্রী) বা আওয়ামী লীগের না, জনগণের কষ্টার্জিত টাকা। এ টাকা লুটপাট করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর এই অবৈধ চুক্তি হলেও সরকার তা প্রকাশ করেনি। দেশের লোকাল কোম্পানি ৬. ১২ টাকায় ইউনিট দেয়ার কথা বললেও সরকার কর্ণপাত করেনি। এমনকি সরকারের আর্শীবাদপুষ্ট এস আলম গ্রুপও ৭ টাকা ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাইলেও সরকার সায় দেয়নি। সে বিদ্যুৎ সরকার আদানির সঙ্গে ১৮ টাকা ইউনিটে চুক্তি করলো। যেখানে নেপাল ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে মাত্র ৭ টাকায়।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা বিদুৎকেন্দ্রের সঙ্গে আদানির বিদ্যুৎ চুক্তির কোনো মিল নেই। এ চুক্তি দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়ার চুক্তি। অবৈধভাবে আবারও ক্ষমতায় থাকার জন্য একটি দেশকে ঘুষ স্বরূপ এই চুক্তি। ৭২ সালেও আপনার (প্রধানমন্ত্রী) পিতা ভারতের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করেছিলো। তখন মুক্তিযোদ্ধারা বলেছিলো এটি ভারতের সঙ্গে গোলামী চুক্তি। আজ আপনি তার কন্যা হয়ে এরচেেয়ে ভালো আর কি চুক্তি করতে পারেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, সরকার আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করে জনগণ ও দেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কার স্বার্থে, কাকে খুশি করার জন্য আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের চেয়ে তিনগুন বেশি দাম দিয়ে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করেছে জাতি তা জানতে চায়।
তিনি বলেন, এটি এতটাই ভয়ানক চুক্তি যে, আগামী ১৫ বছর এই কোম্পানির কাছ থেকে আমরা এই বেশি বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য। অন্য সরকার এসে তা পরিবর্তন করতে পারবে না। পরিবর্তন করলেও বাংলাদেশ সরকারকে তার চুক্তির পুরো অর্থই পরিশোধ করতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, কেনো এ চুক্তি এতদিন গোপন রাখা হলো। সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে রাষ্ট্রের প্রধান যদি অন্যকোন রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে কোনো চুক্তি করা হয় তা সংসদ তুলতে হবে। কেনো তা করা হলো না। কেনো গোপন আঁতাত? আমরা নিজ থেকে এ চুক্তির বিষয়ে কিছুই জানলাম না, অথচ বহিঃবিশ্বে এই চুক্তির সমালোচনার ঝড় ওঠলেও সরকার এখনো এ বিষয়ে কোনো ব্যাখা দেয়নি। শুধুমাত্র অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে একটি রাষ্ট্রকে খুশি রাখতেই এ চুক্তি।
সমাবেশে মিরাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান বিজু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, আয়োজক সংগঠনের বাবুল বিশ্বাস, মুকিম খান, রাজু আহমেদ খান প্রমুখ।
এএজেড