গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘১৯৯১ সালের পর আজকে ২০২২ সাল, ৩১ বছর পর বিগত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এটা স্পষ্ট পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই দেশে যদি একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হয় তাহলে কখনোই একটি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না, জনগণের যে সমস্যা এই সমস্যা গুলোর সমাধান হবে না। গণতন্ত্রিক একটি সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মিত হবে না।'
'গণতন্ত্র মুখের কথা নয়, গণতন্ত্রকে চর্চা করতে হয়। গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলোকে গড়ে তুলতে হয়, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করতে হয়, আজকে বিশ্বের যে সকল দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে রূপ পেয়েছে তারা গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। দুর্ভাগ্য আজকের আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে যে গণতন্ত্রের জন্য ১৯৭১ সালে তারা যুদ্ধ করেছে লড়াই সংগ্রাম করেছে। আর ৯০ সালে ছাত্র-জনতার লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সেই গণতন্ত্রকে আবার ফিরিয়ে এনেছিল দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। সেই জায়গা থেকে আজকে দেশ ও সমগ্র সবকিছুকে দূরে সরে নিয়ে গেছে একটি মাত্র দল সেটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। একটি দল যারা গণতন্ত্রের কথা মুখে বলে কিন্তু কাজে বিশ্বাস করে না।'
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে একটি একদলীয় ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র তৈরি করেছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের কোনো বিকল্প নেই। দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে, এবং তাদের পদত্যাগ এর মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের মত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই শুধুমাত্র এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে। তাহলেই শুধুমাত্র জাতির একটা ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা হবে। আজকে যেভাবে সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে একটি দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা হয়েছে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনার একটু সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বুলবুল শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপির
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি।
দেশবাসী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন আর কোন দ্বিধা নয়, দ্বন্দ্ব নয়, দেশকে রক্ষা করবার জন্য গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করবার জন্য আমরা সবাই ঐক্য হই, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটা দুর্বার সংগ্রাম গড়ে তুলি। সেই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এই ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই তো জনগনের পার্লামেন্ট গঠন করতে পারব।’
ফখরুল বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা, সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন, তারা তাদের পছন্দমত দয়ালু ব্যক্তি ও রাজনীতিকে নির্বাচন করে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। সেজন্য এটাকে বলা হয় প্রজাতন্ত্র সেখানে, দেশের মালিক ও রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। সেই কারণেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন ব্যবস্থাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
একানব্বই সালে তখন যে ক্রাইসিস ছিল একটা স্বৈরাচারের হাত থেকে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের সরকার গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সেই সংগ্রামে জয়লাভ করার পরে তারি দিকনির্দেশনা সেদিন যে ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল তা পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন না হলে তা কখনোই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। সংবিধানে ব্যবস্থা না থাকার পরও জনগণের স্বার্থে জনগণের কথা চিন্তা করে, দেশের প্রয়োজনে বাস্তবতার প্রয়োজনে সেদিন কিন্তু সেই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন নিয়ে, প্রমাণ হয়েছিল বিচারপতি শাহাবুদ্দিন এর নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পেরেছিল।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শওকত মাহমুদ সহ বিএনপি ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।