বিএনপিকে একচুলও ছাড় দিতে রাজি না আওয়ামী লীগ
দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের দোহাই দিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছে নালিশ করায় বিএনপিকে একচুলও ছাড় দিতে রাজি নয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবিলার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এজন্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সহযোগি সংগঠনসহ দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দিচ্ছেন।
বিএনপির এই কাজকে দেশ বিরোধী, সর্বভৌমত্ব বিরোধী কাজ আখ্যায়িত করে মানুষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। এজন্য প্রথমে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে রাজনীতির মাঠে মোকাবিলা করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রথমে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছে সরকার। সেই চিঠির আলোকে আজ বৃহস্পতিবার ইসি সচিবালয়ে বৈঠক হবে। সেখানে ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কর্তৃক বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যয় বিবরণী নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত অডিট রিপোর্টে উল্লেখ না করে থাকলে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত পত্রের বিষয় কমিশনে উপস্থাপন করা হতে পারে।’
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৯ (খ) অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অডিট রিপোর্ট জমা সম্পর্কিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আগের পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়।গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী পর পর তিন বছর দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে। সবশেষ ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট আয় ব্যয়ের হিসাব দিয়েছিল বিএনপি। সেই হিসাবে ২০২০ সালে বিএনপির আয় হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ১৪৯ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৫১৩। ব্যয় বেশি হয়েছে ৫১ লাখ ৯৯ লাখ ৩৬৪ টাকা। সেটা বিএনপির তহবিল থেকে খরচ করা হয়েছে।
তবে কোন দল তথ্য গোপন করলে নির্বাচন কমিশনের হাতে শোকজ নোটিশ করা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী কোন দল তথ্য গোপন করলে নির্বাচন কমিশন তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে জবাব চাইতে পারে।
এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে তদবিরকারী বা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য বিএনপি সাড়ে ৩৭ লাখ ডলার খরচ করেছে, যা বর্তমান মূল্যে ৩২ কোটি টাকার মতো। প্রতিমন্ত্রীর এই চিঠির জবাবে কি রিপোর্ট আসবে সেসব দেখেই পরবর্তি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে আওয়ামী লীগ। দেশ বিরোধী চক্রান্ত প্রমাণিত হলে বিএনপির বিরুদ্ধে জনমত গড়ার জন্য কাজ করবে আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষের কাছে তাদের চেহারা উন্মোচন করে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বয়কটের আহ্বান জানানো হবে বলে জানাগেছে। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা সকল অঙ্গ সংগঠনকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
নির্বাচনের আগে অনেক ধরণের ষড়যন্ত্র হতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখে সবাইকে সর্তক থাকার জন্য হাইকমাণ্ড থেকে নির্দেশনা আসতে পারে।
গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের হল কমিটির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সকল ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ছাত্রলীগকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ কি ভাবছে এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপি যেটা করেছে সেটা দেশ বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিরোধী কাজ। বিএনপির এই কর্মগুলো তদন্ত করে দেখা হবে, তারা বিদেশে যে টাকা লগ্নি করেছে বা পাঠিয়েছে সেটা বিধি সম্মত কি-না। এটা মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশনেও এই অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দেশের সুনাম বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ বিচলিত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতে নির্বাচনের পর মোদি সরকার জয়ী হওয়ায় মিষ্টি বিতরণ শুরু করেছিল বিএনপি। সে কি আনন্দ! তারপরে মিষ্টি দেওয়ার জায়গা খুঁজে পায় নাই তারা। আমরা কারো বিজয়ে অতিমাত্রায় খুশিও না, কারো পরাজয়ে দু:খ অত্রিমাত্রায় ব্যথিতও না এরকম দল হলো আওয়ামী লীগ। এগুলো নিয়ে আমাদের প্রত্যাশারও কিছু নাই। আর দু:খ পাওয়ারও কিছু নাই। এই কাজগুলোর সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা তাদের বাংলাদেশের মানুষের কাছে উপস্থাপন করার মধ্য দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন করা হবে। তারা তো এমনিতেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শেষ জায়গাটুকতেও যাতে তারা না থাকে সেই চেস্টাই আমরা করব, দেশের মানুষের কাছে রাজনৈতিকভাবে তাদের এই নেতিবাচক রাজনীতি, দেশ বিরোধী রাজনীতি, অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সন্ত্রাসী রাজনীতি, দুর্নীতির রাজনীতির বিপক্ষে আমরা মানুষকে সচেতন করে তোলব। মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। এটা করার জন্য আমরা কাজ করছি।
এসএম/