নৌকাকে চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা বাড়ছেই
শেষ হলো ৬ষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন) বড় কাজ শেষ হলো। এবারই প্রথম সর্বাধিক ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার হয়েছে।
প্রযুক্তি নির্ভর এই ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে নানা মহলের অভিযোগ থাকলেও মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলে মর্যাদার লড়াই হয়ে দাড়িয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলো। তবে সেই মর্যাদার লড়াইয়ে নিজের সঙ্গে নিজে লড়াই করছে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় প্রতিটি ভোটের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে। সেই বোর্ডের প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারও ৬ষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যাদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দ করেছিল আওয়ামী লীগ সেই নৌকার প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিল অনেক ইউনিয়নে। তাদের সেই চ্যালেঞ্জে এই ধাপেও ৯৫টি ইউনিয়নে নৌকাকে পরাজিত করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্যদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিজয়ী হয়েছে ৮৩ জন। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত ১২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতাসহ নৌকার বিজয় হয়েছে ১১৭টিতে।
সাধারণত দলের মনোনয়ন না পেয়ে নৌকাকে চ্যালেঞ্জ করে আওয়ামী লীগের নেতারাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থী হয়ে থাকেন। তবে অন্য দলের প্রার্থীরাও ছিলেন। আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী দমনে বার বার চাপ প্রয়োগ করা হলেও দমাতে পারছে না বিদ্রোহীদের। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়জয়কার আওয়ামী লীগের জন্য বড় থ্রেট হয়ে দাড়াচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এর আগের ৫ ধাপের নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়জয়কার ছিল। প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী ছিল ১৪৮ জন আর স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী ৪৯ জন। দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন ৪৮৬ জন আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিজয়ী ছিলেন ৩৩০ জন। তৃতীয় ধাপে নৌকার বিজয়ী ৫২৫ জন তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিজয়ী ছিলেন ৪৪৬ জন। চতুর্থ ধাপে নৌকাকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের পাল্লা প্রায় সমান সমান। সেই ধাপে নৌকার বিজয়ী প্রার্থী ছিল ৩৯৬ জন আর স্বতন্ত্র বিজয়ী প্রার্থী ছিল ৩৯০ জন। পঞ্চম ধাপে নৌকার চাইতে স্বতন্ত্ররা এগিয়ে ছিলেন। সেখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন ৩৪১ জন বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয় ৩৪৬ জন।
এছাড়া সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে ৩ জন বিজয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকেও ১ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এই ২১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ২ ইউপিতে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এবারের ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ইউনিয়নে প্রার্থী ছিল না। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে অনেক ইউনিয়নে বিএনপির নেতারা প্রার্থী হয়েছিলেন।
এ নিয়ে ছয় ধাপে দেশের মোট ৩ হাজার ২৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ৬ষ্ঠ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ০৭ শতাংশ।
এসএম/