সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস
পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন-২০২২ নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস।’
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে বনানী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছিলাম আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তার জন্য উপরোক্ত সংবিধানের বিধান অনুসারে একটি আইন করা দরকার। আইনের উদ্দেশ্য হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন ও সেই অনুযায়ী যোগ্য ও মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই করার মাপকাঠি ও পন্থা সুনির্দিষ্ট করা। আমরা যোগ্যতার মাপকাঠি বলতে দায়িত্ব পালনের দক্ষতাকে বুঝিয়েছি। মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলতে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে নিরপেক্ষ ব্যাক্তি নির্বাচনের কথা বুঝিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, বর্তমান যে আইনটি পাশ হয়েছে তাতে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে, তাদের যথাযথ ক্ষমতার বিষয়টি বিদ্যমান আইনের আওতায় আনা
হয়নি। আমরা মনে করি বিষয়টিও বিদ্যমান আইন বা আলাদা একটি আইন হিসেবে আনা দরকার ছিল। সম্প্রতি প্রনীত আইনে একটি সার্চ কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রুপরেখা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সার্চ কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়নি।
জি এম কাদের বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে মনোনীত ব্যাক্তিদের নাম ও পরিচয় সম্বলিত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান ব্যবস্থায় প্রকাশ করার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তা ছাড়া মাত্র ১৫ (পনের) কর্মদিবসের মধ্যে নাম প্রস্তাব করার বিধানটি বেশি তাড়াহুড়ো বলে মনে হয়, যা জনমনে সংশয় সৃষ্টি করতে পারে। ফলে সার্চ কমিটির কাজের স্বচ্ছতা থাকছে না।
তিনি আরও বলেন, এ আইন প্রনয়ন করার ফলে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কার্যকর ভাবে পালনের ক্ষমতায়নে আগের তুলনায় কোনো উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। আগের মতোই উপরোক্ত বিষয়সমূহ পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে অর্থাৎ নতুন করা আইনটি পুরাতন পদ্ধতিকে একটি আইনগত কাঠামোতে এনে আইন সম্মত করা হচ্ছে। এক কথায় এই আইনটি করার পরেও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, বিরোধী দলের কাজ হচ্ছে সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বিরোধী দলের এর বাইরে কিছুই করার নেই। বর্তমান সংবিধান এক ব্যাক্তিকে ক্ষমতা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন তাই হবে, যেটুকু বলবেন তার বাইরে সংসদে কিছুই পাশ হবে না। তাই আমরা সরকারের সমালোচনা ও গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে বিরাধী দলের দায়িত্ব পালন করছি। এ ছাড়া সংবিধানের কিছু ধারা একটির সঙ্গে অন্যটি সাংঘর্ষিক। বিরোধী দল হিসেবে আমরা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আমাদের দাবি তুলে ধরছি, মানা না মানা সরকারের ব্যাপার।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, এসএম আব্দুল মান্নান, ফখরুল ইমাম এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এটিইউ তাজ রহমান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, নাজমা আখতার এমপি, আব্দুস সাত্তার মিয়া, উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, হেনা খান পন্নি, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি প্রমুখ।
এসএম/এসআইএইচ