আওয়ামী লীগ ‘ইনডেমনিটি’র রাজনীতি করে না: আইনমন্ত্রী
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগ বিল-২০২২ চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। প্রস্তাবিত বিলের কিছু দফায় আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য। তারা দাবি করেছেন বর্তমান সিইসি ও ইসি এবং আগের কমিশনের সিইসি, ইসিদের ইনডেমনিটি দেওয়া হচ্ছে আইনে। এই বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির শিকার। ইনডেমনিটি দেয় না।’
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। তবে একই জায়গায় দাড়িয়ে বিএনপির সংরক্ষিত সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগই ইনডেমনিটি দেয়।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটি দেয় না, এটা জানা উচিত। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি কারা দিয়েছিল? ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স কারা করেছিল? বরং আওয়ামী লীগই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেছিল। এখানে কাউকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয় নাই।’
তিনি বলেন, ‘আইনে দুটো জিনিস আছে। একটা হচ্ছে ইনডেমনিটি আর একটা হচ্ছে লিগ্যাল কাভারেজ। দুটো কিন্তু এক জিনিস না। ইনডেমনিটি হচ্ছে মাফ করে দেওয়া, তাদের আইনের আওতা থেকে বের করে দেওয়া। লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে আইনের ভেতরে আনা। দফা-৯ এ পরিষ্কারভাবে পড়ে দেখেন কারো কৃতকর্মকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয় নাই।’
এদিকে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, নিশ্চয়ই সব ব্যাপরে একমত হওয়া যায় না। একমত হয়ও নাই। খুব তড়িঘড়ি করে আইনটি হয়েছে। নিঃসন্দেহে তড়িঘড়ি করে আইনটি হয়েছে। একদিনের বৈঠকে আইনটিতে পৌঁছে গেছি। আইনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার দরকার ছিল, কিন্তু সেটা করা হয়নি।
কিছু বিষয়ের উত্তর পাননি বলে জানিয়ে রুমিন বলেন, ‘সার্চ কমিটিতে যে নাম গুলো রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন, সেই নামগুলোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য দিতে হবে এটা আমি বলেছি। জাতিকে জানতে হবে সার্চ কমিটি কোন কোন নামগুলো প্রস্তাব করছে রাষ্ট্রপতির কাছে। এসব প্রশ্নের ব্যাপারে আশানুরূপ উত্তর পাইনি।’
রুমিন আরও বলেন, ‘তা ছাড়া সার্চ কমিটিতে যে নামগুলো আছে। তারা সৎ, যোগ্য, সাহসী বা নির্বাচন কমিশনার হওয়ার মতো যোগ্যতা রাখেন কি-না সেটা জানার অধিকার আছে মানুষের। সুতরাং তাদের ব্যাপারে গণ শুনানির কথা বলেছি। আমি বলেছি যোগ্যতায় সম্পদের হলফ নামা দিতে হবে। আমি আশানুরূপ কোন উত্তর পাইনি। যে দফায় সার্চ কমিটি আছে সেই ধারার বিরোধীতা করেছি। সার্চ কমিটিতে যারা আসবেন তাদের তালিকা যেন দেওয়া হয়, তাদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা যেন প্রকাশ করা হয়।’
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বিলে দফা (৮) এ বলা আছে মন্ত্রিপরিষদ সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। এখানে আমি বিরোধীতা করেছি। কারণ আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন তিনি খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে তিনি (আব্দুল মতিন) দুদকের সার্চ কমিটিতে ছিলেন।
‘সেখানে দেখেছি তারা সার্চ কমিটিতে যাদের চাচ্ছেন তাদের সিভি জমা দেয়। এখানে আসলে সার্চ কমিটির তেমন কিছু করার থাকে না। তারা শুধু সিভিগুলো দেখেই সেই নাম প্রস্তাব করতে বাধ্য হয়। সেখানে কোন স্বাধীনতা থাকে না। তা ছাড়া আমি দফা (৭) এর বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি এবং দফা (৯) এর ব্যাপারেও আপত্তি জানিয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘একটা কথা এসেছে আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটি দেয় না। আওয়ামী লীগই ইনডেমনিটি দেয়। কারণ, খন্দকার মোস্তাক আহমেদ আওয়ামী লীগেরই সদস্য ছিলেন, তিনিই ইনডেমনিটি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে কুইক রেন্টালের ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে, আজকে এই আইনের ক্ষেত্রেও ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। যদিও লিগ্যাল কাভারেজ বলে এটাকে ভিন্নভাবে সৌন্দর্য্য বর্ধিত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এটা একেবারেই ইনডেমনিটি। আগের দুই কমিশন কি কাজ করেছে, তাদের কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এটা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। এটা যদি ইনডেমনিটি না হয়, ইনডেমনিটির সংজ্ঞা জানতে চাই।
এসএম/এমএমএ/