আওয়ামী লীগের লবিস্ট নিয়োগের তথ্য দিলেন রুমিন ফারহানা
বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, সম্প্রতি সময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের বিভৎস মানবাধিকার পরিস্থিতিকে নতুন করে দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক মহলের সামনে নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি র্যাবের বর্তমান এবং সাবেক ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই দফায় বাংলাদেশের সঙ্গে চীন, উত্তর কোরিয়া এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যদিও গণতন্ত্র মানবাধিকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়গুলোতে সরকার বাংলাদেশকে উত্তর কোরিয়া কিংবা মিয়ানমারের কাতারে নিয়ে গেছে আরো আগে।
রবিবার (২৩ জানুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, পরিস্থিতি দেখে এটা স্পষ্ট। নিষেধাজ্ঞা এখানেই শেষ হচ্ছে না। অ্যামিনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বের সনামধন্য ১২টি মানবাধিকার সংস্থা র্যাবের সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে পদায়নের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘে জোর দাবি জানিয়েছে এবং জাতিসংঘ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে।
বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, জনগণের করের টাকায় চলা একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার করে এবং তাতে কর্মরত বহু নিরাপরাধ মানুষ এবং তাদের পরিবারের জীবনে সংকট তৈরি করেছে এই সরকার। মানবাধিকার সংস্থাগুলো, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলগুলো বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, গায়েবী মামলা ইত্যাদি বার বার বলেছে। তাতে কিছু আসে যায়নি সরকারের। পররাষ্ট্র মন্ত্রীসহ আর সব মন্ত্রীরা প্রথমে খুব কড়া ভাষায় আমেরিকাকে আক্রমণ করলেও তাদের গলার স্বর এখন যথেষ্ট নিচু। এখন নিজেদের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করছে। প্রয়োজনে লবিস্ট ল ফার্ম নিয়োগের কথা বলছে।
তিনি আরো বলেন, লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ নতুন কোনো বিষয় না। জনগণের করের কোটি কোটি টাকা খরচ করে দীর্ঘদিন ধরে লবিস্ট ফার্ম পুষছে এই সরকার। এমন একটি ফার্মে গত বছর সরকার ত্রৈমাসিক ৮০ হাজার ডলার করে দিয়েছে। বছরে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার বা আনুমানিক ২ কোটির উপরে। সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফিডল্যান্ডের গ্রুপের সঙ্গে ৪০ হাজার ডলারে এক মাসের জন্য একটি চুক্তি করেন ওয়াশিংটনে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম। এ ছাড়া কোনওয়াদো কনসালটিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজে ইনস্টিটিউটের (বিইআই) মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এক মাসের জন্য আর একটি চুক্তি করে। অগ্রীম দেওয়ার শর্তে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। তাতে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে মার্কিন লবিস্ট নিয়োগ শিখিয়েছে আওয়ামী লীগ। এদেশের রাজনীতিতে লবিস্ট সংস্কৃতি শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ অ্যালগেস্ট অ্যাল পাই নামে লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ১২ লাখ ডলার দিয়েছে। কোনো সংকটে পড়লেই সরকার সেটাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নতুন ইস্যু বানিয়ে সেটা ধামাচাপা দেওয়ার চেস্টা করে। এবার নিষেধাজ্ঞার পরেই বিএনপি লবিং করেছে, টাকা পাচার করেছে ইত্যাদি তথ্য দেওয়া হচ্ছে।
রুমিন ফারহান বলেন, তর্কের খাতিরে যদি বিএনপির লবিংয়ের সত্যতা স্বীকারও করে নেই। তবুও মনে রাখতে লবিস্ট ফার্ম বা ল ফার্ম নিয়োগ কোনো বেআইনি বিষয় না। সরকার দলীয় নেতাদের কথা শুনে মনে হয় লবিং গ্রুপটি আমাদের দেশীয় তদবিরের মতো। কোনো প্রভাবশালীকে টাকা ধরিয়ে দিয়ে যেকোনো বেআইনি কাজ করে ফেলা যায়। আমেরিকার লবিস্ট ফার্মের কাজ হচ্ছে সরবরাহকৃত তথ্য (সত্য তথ্য) ব্যবহার করে ক্ষমতার জায়গায় প্রভাব তৈরি করা। মিথ্যা তথ্য দিয়ে লবিং করলে যেকোনো ফল পাওয়া যায় না তার প্রমাণ হচ্ছে সাম্প্রতিক এই নিষেধাজ্ঞা। আওয়ামী লীগ তো লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল কিন্তু সেটি আওয়ামী লীগকে নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে নাই।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর এখন আর র্যাব গভীর রাতে সন্ত্রাসীদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যাচ্ছে না। কিংবা গোপন সংবাদ পেয়ে কোনো সন্ত্রাসীকে ধরতে গিয়ে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশ বা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলিও ছুড়ছে না। তারপর পালানার সময় মারা যাচ্ছে না কোনো নির্দিষ্ট মানুষ। ঠিক যেন সন্ত্রাসীরা সাধু হয়ে গেছে। র্যাবকে গুলি করা বন্ধ করেছিল মেজর সিনহা রাশেদ হত্যার পর পর।
রুমিন ফারহান বলেন, মার্কিন চাপে নানা দিকে তোরজোর শুরু করেছে সরকার। এখানেও সঠিক পথে না গিয়ে উল্টো পথে হাটছে তারা। গুম হওয়া বেশ কিছু মানুষের ব্যাপারে যেহেতু মানুষ তথ্য চেয়েছে তাই সরকার ব্যাপারটি সমাধান করতে চাইছে। গুম হওয়া মানুষদের পরিবারের উপর নতুন করে নিপীরণ। তাদের পরিবারের সদস্য বা স্বজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে লিখিত বিবৃতি দিতে বাধ্য করছে পুলিশ।
এ ছাড়াও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির এই সাংসদ বলেন, নির্বাচন কমিশনে যদি পাঁচজন ফেরেশতাও নিয়োগ করা হয় তারপরও কিছু যায় আসে-না, যদি না নির্বাচনকালীন সরকারটি নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ হয়। খুব সঠিকভাবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছিল বলে তারা নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো আন্দোলন করে নাই। আন্দোলন করেছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার যাতে বহাল করা হয়। আজেকে পাশার দান উল্টে গেছে এবং আওয়ামী লীগ যখন ভোট ছাড়া ক্ষমতায় আছে দীর্ঘ ১৩ বছর একাধিকক্রমে। তখন তারা অবলীলায় বলতে পারে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে। সেই নির্বাচন কেমন হয় সেটা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখেছি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস, বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম, খুন, হেফাজতে মৃত্যু, বিরোধী মত বিচার দমন বিরাজনীতিকরণ বিভাগের স্বাধীনতা নষ্ট করা। বিভৎস দুর্নীতি সব কিছুর ফল দেখে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের মেরেলিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশনের প্রকাশিত রিপোর্টে। এ ছাড়াও গণতন্ত্রের সূচক প্রকাশকারী ইকোনিমক ইনটেলিজেন্সসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টে দেখা গেছে বাস্তব চিত্র। এসব থেকে বোঝা গেছে সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এসএম/এসআইএইচ