ইংল্যান্ড-জার্মানিতেও এত স্বচ্ছভাবে ইসি নিয়োগ হয় না: আইনমন্ত্রী
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন নিয়ে বিএনপি নেতারা না বুঝে কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আসলে কোথায় ধাক্কা লেগেছে জানেন? এভাবে যদি নির্বাচন কমিশন গঠন হয়, আর সেই নির্বাচন কমিশন গঠন করার পর উনারা (বিএনপি) আর ভোট চুরি করতে পারবেন না। এতেই উনাদের গাত্রদাহ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘নিউজল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, ভুটান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, ইংল্যান্ড প্রত্যেকটা রাষ্ট্রে এরকম স্বচ্ছভাবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ব্যাপার নেই। জার্মানিতে অন্তবর্তী সরকার নিয়োগ দেয়, অস্ট্রেলিয়ায় গভর্নর জেনারেল নিয়োগ দেয়, নিউজিল্যান্ডেও তাই করে। সংসদীয় গণতন্ত্র যেখানে চলে সেখানে যেভাবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত হন বা নির্বাচন কমিশনার মনোনিত হয় সেভাবে করার জন্য এ আইন করেছি।’
রোববার (২৩ জানুয়ারি) সংসদ অধিবেশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২ উত্থাপনকালে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য বিরোধিতা করে দেওয়া বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
‘সার্চ কমিটির সিদ্ধান্ত কখন নেওয়া হয়? প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সাহেব যখন সংলাপের আয়োজন করেন, সংলাপে দাওয়াত দেন। তখন সবাই মিলে সংলাপে যান। তখন একটা জনমত হয়েছিল একটা সার্চ কমিটি হবে এবং সার্চ কমিটি হয়ে সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের জন্য ১০ জনের নাম এ সার্চ কমিটি প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি ১০ জনের মধ্যে থেকে ৫ জন দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এভাবেই সার্চ কমিটি আসে। এটা আইন ছিল না। সেই সার্চ কমিটির মাধ্যমে যখন নির্বাচন কমিশনার হলো এবং দুইটা নির্বাচন হলো তখন উনাদের আপত্তি ছিল না’- যোগ করেন মন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, ‘যদি কোনো নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনের কোনো সদস্য অন্যায় করেন তাহলে কি প্রস্তাবিত আইনের ৯ দফায় ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে? এটা কি তাই বোঝায়? এটা তা না। যেই দুইবার সার্চ কমিটির মাধ্যমে করেছেন সেটাও আইনসিদ্ধ ছিল, সেটাও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের কথা হচ্ছে যাই করেন তাল গাছ আমার। তাল উনাদের না, তাল গাছ জনগণের। এখানে যা বলছেন উনারা বুঝে বলছেন না।’
তিনি বলেন, ‘ওনারা মনে করেছিলেন এটা রাজনৈতিক ইস্যু। যখন আইনটা করে ফেলেছি পালের হাওয়া চলে গেছে। এখন কী বলবেন? এখন এইটা নেই, ওইটা আছে এসব নাচ-গান শুরু করে দিয়েছেন। এ আইনটা সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয় সেই ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে এবং সেই ক্ষমতার প্যারামিটার অনুযায়ী করা হয়েছে।’
আইনমন্ত্রী বলেছেন, ওনারা (বিএনপি) তো অনেক রকম আন্দোলন করেছেন। অমুকের শরীর খারাপ বিদেশ পাঠানোর আন্দোলন, অমুকের এটা তমুকের এটা আন্দোলনের পালে তো হাওয়া লাগেনি। এখন এটা নিয়ে আন্দোলন করার চেষ্টা করছেন, এটাও হবে না।
উত্থাপিত আইনের ব্যাখা করে মন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে পারবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলজনিত কোনো অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি দণ্ডিত হন। কিন্তু ৫ বছর পার হয়ে গেলে সেটা আর থাকে না। নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপারে সেটাও রাখিনি। দুই বছরের বেশি যদি কেউ দণ্ডিত হন তাহলে তিনি কখনোই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন না। সংবিধানে যেসব অযোগ্যতার কথা লেখা আছে, সেই অযোগ্যতাই এ আইনে আনা হয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, ‘ওনারা এক গান গাচ্ছেন। আমি সার্চ কমিটির আইন করছি। এখানে সার্চ কমিটির আইন কোথায় হলো? তারা আর কী চান? ওনারা চান ওনাদের পকেটে যে নাম সেই নাম দিয়ে দিতে হবে। এটা হবে না। এটা বাংলাদেশ। এটা জনগণ ঠিক করবে। এখানে জনগণ প্রাধান্য পাবে, কোনো দল না।’
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তিনি ব্যাখা চেয়েছেন আমি যখন ব্যাখা দিচ্ছি, তিনি কথা বললে শিখবেনটা কী? বুঝবেন না তো, শিখবেন কী? আইনে যে চারজন সার্চ কমিটিতে রাখার কথা বলা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই সাংবিধানিক পদের অধিকারী। রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলেই তাদের চাকরিচ্যুত করতে পারবেন না। সেই জন্য এ চারজনকে দেওয়া হয়েছে। এ চারজন যেটা করবেন তাতে রাষ্ট্রপতি যদি পছন্দ নাও করেন, ওনারা যে ১০জনের নাম দেবেন তার মধ্যেই থাকতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। শুধু তাই না অনুসন্ধান কমিটিতে তিনজন উপস্থিত হলেই কোরাম হবে এটাও রাখা হয়েছে। তাদের স্বাধীনতা এত বেশি যে তাদের পদ থেকে সরানো ছাড়া রাষ্ট্রপতি কিছু করতে পারবেন না।’
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আগের নির্বাচন কমিশনারের বিচার দাবি করায় তার জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি (হারুন) বলেছেন নির্বাচন কমিশনারদের বিচার করতে হবে। আগে ওনাদের আজিজ সাহেবের বিচার করতে হবে। আগে ১ কোটি ভুয়া ভোটার যারা করেছে তাদের বিচার করতে হবে। তারপর এখানে আসতে হবে। এত তাড়াতাড়ি তিন তলায় উঠা যায় না, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে।
এসএম/এসএন