৭ম বারের মতো খালেদার দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ বাড়ছে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানো হচ্ছে। পূর্বের দুটি শর্তেই আরও ৬ মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ছে। এ নিয়ে সাত বারের তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সংক্রান্ত আবেদনের বিষয়ে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
রবিবার (১২ মার্চ) সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
আগামী ২৪ মার্চ শেষ হবে শেষ খালেদার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ। এ প্রেক্ষিতে কিছুদিন আগে খালেদার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো এবং চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির নিয়ম অনুযায়ী তারা প্রথম থেকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে আসছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে থাকে।’
আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার ষষ্ঠবারের মতো মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য তারা আবেদন করেছিলেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে আগের মতো, আগের যে দুটো শর্ত ছিল, সেই দুটো শর্ত সাপেক্ষে আবারও মুক্তির মেয়াদ ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করছি।’
শর্ত দুটি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। নিজ বাসা থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন মানে তিনি হাসপাতালে যেতে পারবেন না, তা নয়। তিনি হাসপাতালেও যেতে পারবেন। আর এ সময় তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। এ দুই শর্ত সাপেক্ষে তার দণ্ডাদেশ আরও ছয় মাস স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মতামত দিয়েছি। আমাদের মতামতের ভিত্তিতেই গত কয়েকবার এটা (দণ্ড স্থগিত) কার্যকর করা হয়েছে। আশা করি, এ মতামতের ভিত্তিতেই এবারও সেটা কার্যকর হবে।’
তিনি বাসায় থেকে রাজনীতি করতে পারবেন কি না এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটা কথা বারবার বলেছি। দরখাস্তে যেটা বলা হচ্ছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ। সেক্ষেত্রে রাজনীতি করার প্রশ্নটা তো অবান্তর। তিনি মুক্ত, তিনি অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে রাজনীতির কথাটা আসাটা আমরা মনে হয় প্রয়োজন নেই।’
‘একজন অসুস্থ মানুষ কী করতে পারবেন, কী করতে পারবেন না আমি সেটা ডিকটেশন দিয়ে দেব না। কিন্তু এটা সবাই স্বীকার করছেন যে, তিনি অসুস্থ’,যোগ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আইন পড়েন। আইনে কী আছে, আইনই বলে দিবে। আমার এখানে স্পষ্ট করার কিছু নেই। একটা বাস্তবতা আপনাদের মেনে নিতে হবে। মুক্তির আবেদনের মধ্যে যে কথাটা প্রথম থেকে রয়েছে-তা হলো তিনি অসুস্থ, গুরুতর অসুস্থ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতি করার প্রশ্নটা তো অবান্তর।’
তিনি বলেন, কার আবেদনে আমরা আমাদের মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সামারি পাঠাবেন।
সপ্তম বারের মতো খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে কী রাজনীতি রয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘এর মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই। এটা সম্পূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতা।’
আজকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশের রাষ্ট্রদূতরা বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিএনপি তাদের বলেছেন, এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। ইইউ রাষ্ট্রদূতরা জানিয়েছেন, তারা আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন- এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এর মধ্যে আমার কী বলার আছে। জনগণ যেটা চায়, সংবিধানের বাইরে আমরা যাব না। এটাই হলো সারা বাংলাদেশের অবস্থান।’
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। অসুস্থতা বাড়লে মাঝে মাঝে তাকে হাপাতালে নিতে হচ্ছে।
দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দী ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এরপর প্রতি ৬ মাস পর পর খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এবারও একই প্রক্রিয়ায় তার দণ্ড স্থগিতের বাড়ানো হচ্ছে।
এনএইচবি/এমএমএ/