রাজধানীতে পদবঞ্চিত যুবদল নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন যুবদলের পদবঞ্চিতরা।
রবিবার (৫ মার্চ) বেলা ১১টায় এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
যুবদলের নবগঠিত কমিটিতে সীমাহীন দুর্নীতি, পদ বাণিজ্য, নিষ্ক্রিয় অযোগ্যদের পদায়ন এবং ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন ও পদ বঞ্চিত করার প্রতিবাদে আজকেও বিক্ষোভ করেছে দলটির নেতা-কর্মীরা।
এ সময় বিক্ষোভে কমিটি বাতিলের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়। কমিটিতে বিভিন্ন অনিয়ম ও অসঙ্গতি তুলে ধরে নিষ্ক্রিয় ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পদপ্রাপ্তদের পদ বাতিল করে ত্যাগী ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর্মীদের মূল কমিটির অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়। উল্লেখ্য, যে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই তারা নিয়মিত বিক্ষোভ মিছিল করে আসছে।
কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় তারা সেই ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত দলের ঘোষিত সকল কর্মসূচি নিয়মিতভাবে পালন করে আসছেন। যুবদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলের এমন দুঃসময়ে সক্রিয় নেতা কর্মীদেরকে বাদ দিয়ে যারা টাকা দিয়েছে এবং অন্যান্য অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে, বাসার বাজার করে দিয়েছে, কিংবা তাদের দোকানের কর্মচারী তাদেরকে পদ দিয়েছে। দলের এমন দুঃসময়ে যেখানে ত্যাগী, সাহসী ও যোগ্য কর্মীদের পদায়ন করা প্রয়োজন সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবেই দলটিকে দুর্বল করে দিয়েছে বলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিকে অভিযোগ করছে নেতা-কর্মীরা।
বিক্ষোভে নেতা-কর্মীদের অভিযোগসহ সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুইয়া পিংকু, ইমাম হোসেন, নুরুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ দিপু, মাসুমুল হক মাসুম দলের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। শুধুমাত্র অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে তাদের পদায়ন করা হয়েছে।
প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ভাতিজা পিংকু ফরিদপুরে ‘মুজিব শতবর্ষে’ সকল অনুষ্ঠানে স্পন্সর করে প্রধান অতিথি হিসেব অংশগ্রহণ করার রেকর্ড রয়েছে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান নিষ্ক্রিয়। সভাপতির কাছের লোক হিসেবে তাকে পদ দেওয়া হয়েছে। সহসাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মিশু বিগত আট বছর ধরে আমেরিকা প্রবাসী। তাকে অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়া হয়েছে। খনদকার মাহবুবুর রহমান মাহী সভাপতির ব্যক্তিগত কাজের লোক। এ কারণে তাকে পদ দেওয়া হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাহবুব ওরফে কসমেটিক্স মাহবুবকে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পদ দেওয়া হয়েছে।
তারা দাবি করেন ঘোষিত কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান কোনোদিন কোনো পর্যায়ে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থেকেও শুধুমাত্র আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পদ প্রবাস থেকে এসেই পদ বাগিয়ে নিয়েছে। সামসুজ্জোহা সুমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে ক্যাফে ক্যাম্পাস নামে রেস্টুরেন্টের মালিক। ব্যবসার কাজে ১০ বছর যাবত দলীয় কর্মকাণ্ড করেন না। টুকু মুন্নার কমিটির পর সক্রিয় হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে যেখানে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে যেতে পারে না সেখানে সুমন ছাত্রলীগের সহযোগিতায় ব্যবসা করে আসছেন ১০ বছর ধরে। শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
কাতার প্রবাসী মামুনকে বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়েসহ সম্পাদক করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জোবায়দুর রহমান জনি বিগত এক যুগ ধরে দলের কর্মকাণ্ডের সাথে নেই। তাকেও আর্থিক সুবিধার কারনে পদ দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ আইন, তানভির হাসান সোহেল, জিল্লুর রহমান দের অতীতে কোন রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। তাদের সরাসরি যুবদলে পদ দেয়া হয়েছে।
নাজমুল হুদা রাজু আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাল্টিমুড গ্রুপের কর্মচারী। তাকেও পদ দেওয়া হয়েছে। জোবায়দুর রহমান জনি, গত ১০ বছরে বিএনপি বা কোনো অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয়। আমানুল্লাহ বিপুল অর্থের যোগানদার হওয়ায় তাকে পদ দেওয়া হয়েছে।
ইউনুস আলী রবি, কেন্দ্রীয় যুবদলেরসহ আইন সম্পাদক হয়েছেন। সে এখনো বরিশাল উত্তর জেলা ও মুলাদী উপজেলা বিএনপির সদস্য। তাকেও অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়া হয়েছে।
দলের পদপ্রাপ্ত নিষ্ক্রিয় নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কামরুল হাসান তালুকদার সহ সাধারন সম্পাদক, খলিলুর রহমান সহ সাধারন সম্পাদক, এন এম আব্দুল্লা উজ্জ্বল, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, আয়ুব খান, মুরাদ খান, শাখাওয়াত হোসেন চয়ন, মাইনুদ্দিন রুবেল, মিজানুর রহমান শিশির, জাহিদ হাসান, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, খন্দকার মাইনুদ্দিন খোকন, রফিক আহমেদ ডলার, রুহুল আমিন বাবলু, দুলাল হোসেন, মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, মজিবুর রহমান সবুজ, সহ শতাধিক পদপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
সৈয়দ শহিদুল আলম টিটুকে সদস্য করা হয়েছে আশির দশকে সভাপতি টুকুর সঙ্গে ঢাবি ছাত্রদলের সদস্য ছিল। সভাপতির বন্ধু, এই বিশেষ পরিচয়ে তাকেও পদ দেওয়া হয়েছে। হুমায়ুন কবির শিপন নবগঠিত কমিটির সদস্য। অতীতে কোনোদিন রাজনীতি করেননি। সাধারণ সম্পাদক মুন্নার বন্ধুর ভাই। এ কারণে তাকে সদস্য করা হয়েছে। মাসুদুল হক নামের পাবনার এক ইউনিয়ন যুবদল কর্মীকে সদস্য করা হয়েছে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে।
কামরুজ্জামান নান্নু, মো. জাহিদ হাসান নবগঠিত কমিটির সদস্য। অতীতে কোথাও কোনো পদ ছিল না। সভাপতির বাসার কাজে ফাই ফরমাস খাটে। তাদেরকেও পদ দেওয়া হয়েছে।
প্রিন্স আহমেদ এমরান যুবদল সেক্রেটারির মুন্নার কাজিন, সেই পরিচয়ে তাকে সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। কেএম সানোয়ার আলম, সহ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক একটি পেস্টিসাইড কোম্পানি বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে খামার বাড়ি এলাকায় চাকরিরত। কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে পদ।
বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বলেন, অনৈতিক ভাবে পদায়ন করা এ সকল অরাজনৈতিক ব্যাক্তিদের যুবদলের নতুন কমিটি থেকে বাদ দিয়ে দলের দীর্ঘদিনের রাজপথের পরিক্ষিত নেতা-কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আজকের বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সাবেক যুবদল যুগ্ম সম্পাদক আলী আশরাফ, যুগ্ম সম্পাদক কামাল উদ্দিন, সহ সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান দুলাল, আতিকুর রহমান আতিক, সামসুর রহমান, মাহতাব আলম, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর তাহের বাবু, রিয়াদ হোসেন উজ্জ্বল, সাবেক সদস্য শাহজাহান কবির শাহীন, সৈয়দ আবেদিন প্রিন্স, রাসেল মিয়া।
ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি তারেক উজ জামান, জাকির হোসেন খান, আশরাফুর রহমান বাবু, শোয়েব খন্দকার, হুমায়ুন কবির, সাজ্জাদ হোসেন উজ্জ্বল।
যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহাগ, এবিএম মহসিন বিশ্বাস। সাবেক সহ-সাধারণ আনোয়ার জাহিদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কোয়েল হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল হাসান হাওলাদার, সাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক-ইয়াকুব রাজু, সাবেক সহ সম্পাদক খন্দকার রিয়াজ, মাজেদুল ইসলাম মাসুম, রবিউল হাসান আরিফ, জিল্লুর রহমান কাজল, এডঃ মশিউর রহমান রিয়াদ, অ্যাড. সাইদুর রহমান মামুন, আবু জাফর রিপন।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সদস্য নাজমুল হাই রায়হান, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সম্পাদক হাফিজুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক ছাত্রনেতা খন্দকার কাকন, এবাদুল হক পারভেজসহ নেতা-কর্মীরা।
এমএইচ/এমএমএ/