নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদল
অনুমোদনের ৫ দিনের মধ্যে কমিটি স্থগিত
৪২৭ সদস্য বিশিষ্ট নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদনের ৫ দিনের মধ্যে কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। অনুমোদিত কমিটিকে কেন্দ্র করে জেলা এবং কেন্দ্রের মধ্যে একে-অপরের দিকে অভিযোগ তুলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। তিনি ভার্চুয়ালি বৈঠকে ছাত্রদল নেতৃত্বকে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি সংশোধন করে নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশনা দেন। একইসঙ্গে কমিটিকে ঘিরে যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের কথা উঠেছে তাদেরকে কারণ দর্শানোর কঠোর বার্তাও দেওয়া হয়।
সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পান ছাত্রলীগকর্মী জাকির হাসান লাভলু। কলমাকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয়কর্মী এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদারের স্নেহধন্য জাকির। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ট্রল শুরু হয়।
২০১৬ সালে ১৩ অক্টোবর রাতে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ফরিদ হোসেন বাবুকে সভাপতি, অনিক মাহবুবকে সাধারণ সম্পাদক এবং ফরিদ হোসেনকে সাংগঠানিক সম্পাদক করে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
দীর্ঘদিন পর প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সোমবার (১০ জানুয়ারি) ৪২৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরিদ হোসেন বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঢাকাপ্রকাশকে ক্ষুদেবার্তায় জানান, ‘কলমাকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগকর্মী জাকির হাসান লাভলু কিভাবে জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এসেছে সে বিষয়ে আমরা জেলা কমিটির নেতৃত্ব অবগত নই। কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় লাভলু নামে কোনো নাম দেইনি। বরং জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিসাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছি।’
বৃহষ্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) কলকমাকান্দা উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ছাত্রলীগকর্মী থেকে জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে সহ-সাংগঠনিক পদ পাওয়া জাকির হাসান লাভলুর নাম পদে দেখে উপজেলা সভাপতি হিসাবে আমি বিস্মত। তার নাম উপজেলা থেকে পাঠানো হয়নি। আমি জেলার সাধারণ সম্পাদককে এ বিষয়ে জানিয়েছি।’
এদিকে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তারপরও মেয়াদহীন কেন্দ্রীয় কমিটি কিছুদিন পর পর বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা আবার বিলুপ্তি ঘোষণা দিয়ে সক্রিয়তার বার্তা দিয়ে যাচ্ছে।
৪২৭ সদস্য বিশিষ্ট বিশাল জেলা কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা ছাত্রদল নেতাদের ভাষ্য, সংগঠনের জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে নিজ আক্রোশ মেটাতে সংগঠনের জন্য নিবেদিত ছাত্র-নেতাদের কমিটিতে রাখেনি। নিজ বলয় তৈরি, অর্থ বিনিময়, নিষ্ক্রিয়, ছাত্রত্ব নেই ১০ বছরের অধিক, ঢাকায় অবস্থানরত, বিভিন্ন পেশায় চাকরিরত, যুবদলের ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য, এমনকি উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মীকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝিয়ে স্বার্থ হাসিল করেছেন।
কমিটি গঠনে ভবিষতে জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এমন কাজ করতে পারেন সেই আশঙ্কা থেকেই ১৬ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটির সহ-সভাপতি ফারদিন চৌধুরী রিমি, দেলোয়ার হোসেন দেলোয়ার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুজন কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করে পুর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে তাদের নাম বাতিল করিয়ে নিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের একজন প্রভাবশালী সহ-সভাপতি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সহ-দপ্তর সম্পাদক শুধু নেত্রকোনা জেলা কমিটি নয় বরং দেশের প্রায় প্রতিটি কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে পদ বিক্রি করে আসছেন। প্রথম প্রথম সংগঠনের ‘সুপার-ফাইভ’ নিয়ে প্রতিবাদ তুললেও পরবর্তীতে নিজেদের মাইম্যানকে কমিটির পদে আনতে সভাপতি ও সহ-দপ্তর সম্পাদকের অন্যায় কর্মকাণ্ডের স্রোতে গা ভাসিয়েছেন সবাই।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘গত দুই-তিন দিন ধরে নেত্রকোনা জেলা কমিটির অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ কেন্দ্রে আসতে শুরু হয়েছে। অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ইতিমধ্যে সভাপতি ও সহ-দপ্তর সম্পাদককে কমিটি সংশোধন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। আশা করছি- অল্প দিনের মধ্যে কমিটি সংশোধন হয়ে যাবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও উক্ত বিষয়ে অবগত হয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।’
ঘোষিত কমিটি সূত্রে দেখা যায়, জেলা কমিটিতে জেলা সদর অপেক্ষায় জেলা সংশ্লিষ্ট উপজেলা থেকে কমিটিতে বেশি সংখ্যক ছাত্রনেতাকে জায়গা দেওয়া হয়। জেলা সদরে সংগঠনের রাজনীতিতে নিবেদিত ত্যাগীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে কমিটিকে ঘিরে এক ধরনের ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। কমিটিতে দেখা গেছে পুর্ণাঙ্গ কমিটিতে শুধুমাত্র পূর্বধলা উপজেলা থেকে সহ-সভাপতি ১১ জন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ১৫ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ৯ জন, সহ-সাংগঠনিক ১০ জন, সহ-সম্পাদক ৩ জন, সদস্য ১১ জন মিলে ৬৯ জন স্থান পেয়েছেন। এরপর থেকে নেত্রকোনা জেলাধীন অন্যান্য উপজেলা ছাত্রনেতাদের তুপের মুখে পড়ে জেলা নেতৃত্ব।
জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেয়েছেন পায়েল ভূইয়া, যিনি কেন্দুয়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। মুশফিকুর রহমান জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য। মদন উপজেলায় এক ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সোহাগ মড়ল পেয়েছেন সহ-সম্পাদকের পদ।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ১ নম্বর সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম জাকির ঢাকাপ্রকাশকে বলেন,‘ বিতর্কিত কমিটি নতুন করে সংশোধন হবে। সম্প্রতি ভার্চুয়াল বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টিতে নিয়ে আসা হলে তিনি বলেন-জেলা কমিটি যেখানে ১০০ থেকে ১৫১ হতে পারে সেখানে ৪২৭ জন কিভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়?’
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সহ-দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক সোহেলের সঙ্গে একাধিকভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা মন্তব্য দেয়নি। আর সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘অনিয়ম আমলে নিয়ে কমিটি সংশোধন করার প্রক্রিয়া চলছে। শীঘ্রই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
এমএইচ/এসআইএইচ