সমাবেশ নিয়ে বিএনপির সংশয়
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ২য় ধাপে ঘোষিত সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির নেতাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে দলটির একটি নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, বুধবারের নির্ধারিত সমাবেশ করা হবে। পরবর্তী সমাবেশগুলো করা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ১৩ থেকে ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কতটুকু বিধিনিষেধ আরোপিত হয় সেই বিবেচনায়।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) থেকে বিএনপি ঘোষিত ৩৯ সমাবেশ কর্মসূচি হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সোমবার (১০ জানুয়ারি) মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে দেশে ফের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি হচ্ছে বলে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বিধিনিষেধের মধ্যে সমাবেশের বিষয়টি উল্লেখ করা আছে।
অথচ সোমবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সাপ্তাহিক সভায় বিস্তারিত আলোচনা ক্রমে গৃহিত প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তবলীর মধ্যে সমাবেশ করার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
এদিকে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্ত্রীসহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আগামীকাল তার রাজশাহী মহানগরের বাইরে নির্ধারিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
আজ (১১ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'শুধুমাত্র বিএনপির সভা-সমাবেশ ঠেকাতেই গতকাল জারি করা বিধি নিষেধ দেওয়া হয়েছে কিনা তা নিয়েই জনগণের প্রশ্ন রয়েছে। কারণ সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠেছে এবং ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সভা সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেছে মানুষ। এতেই আতঙ্কিত সরকার। যতোই চক্রান্তের জাল ফেলা হক না কেন, এই অবৈধ সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না। মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে, বিধি নিষেধ নিয়ে, চক্রান্ত করে জনগণকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।'
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এবং অমিক্রনের বিস্তার প্রতিরোধের কথা বলে ১০ জানুয়ারি সরকার যে নির্দেশাবলী জারি করেছে তাতে ঘরোয়া পরিবেশে সভা-সমাবেশের সুবিধা বহাল রেখে উম্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে বিএনপি স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের সরকারি অপপ্রয়াস বলে মনে করছে। কারণ জাতিসংঘের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে বদ্ধ স্থানের চেয়ে উম্মুক্ত স্থানে অমিক্রন ও কোভিড-১৯ এর বিস্তারের সম্ভাবনা কম বলেছে সেখানে হাটবাজার, শপিংমল, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উম্মুক্ত স্থানে সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশ নিষেধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।
বিএনপি মনে করে, 'চলমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ রাখা অগ্রহণযোগ্য। অকারণে ও ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির জনসমাবেশে সরকার, সরকারি দল একক কিংবা যৌথভাবে বাধা সৃষ্টি করার পরেও জনগণ তা প্রতিহত করে সফলভাবে সমাবেশ অনুষ্ঠান করায় সরকার জনগণের এই স্বতঃস্ফুর্ত প্রতিরোধ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কোভিড-১৯ এবং ওমিক্রনকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছে।
ক্ষমতার মোহে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার ষড়যন্ত্র করে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করেছে, দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অপশাসনের দ্বারা জনগণকে ক্রমবর্দ্ধমান ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ করেছে এবং ক্রমাগত জনগণের মৌলিক মানবাধিকারসমূহ হরণ করে বিশ্ব দরবারে দেশের মর্যাদা ধ্বংস করে দিয়েছে।'
এদিকে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) রাতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকাপ্রকাশকে জানান, 'আগামীকাল ১২ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগরের বাইরের সমাবেশে যাচ্ছেন না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এমনি ঢাকা থেকে কোনো কেন্দ্রীয় নেতারাও যাচ্ছেন না সেখানে। তবে মহাসচিব যেহেতু অসুস্থ তাই উনার সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৩ জানুয়ারির পর থেকে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে কিনা সেই ব্যাপারে এখনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এমএইচ/এসআইএইচ/