জেলা থেকে নাম না এলেও কেন্দ্র ঘোষিত নৌকার প্রার্থী জামাত নেতা!
চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচন। এরইমধ্যে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। চলছে ৬ষ্ঠ ও ৭ম ধাপের নির্বাচন প্রস্তুতি। আগামী ৩১ জানুয়ারি ৬ষ্ঠ ধাপের ভোট এবং ৭ ফেব্রুয়ারি ৭ম ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৬ জানুয়ারি সপ্তম ধাপে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে একটি উপজেলায় প্রার্থী পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে। শুধু প্রার্থী পরিবর্তনই না এলাকায় জনপ্রিয় নেতাকে বাদ দিয়ে জামায়াত শিবিরের চিহ্নিত ক্যাডারদের প্রার্থী দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ রকম একটি লিখিত অভিযোগ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা পড়েছে। সেই অভিযোগে বিতর্কিত প্রার্থীদের নামসহ তাদের অভিযোগের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়।
ওই লিখিত অভিযোগে বলা হয় ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২২ এর আসন্ন ৭ম ধাপের তফসিল ঘোষণা পরবর্তী কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম প্রেরণের লক্ষ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা পরবর্তী উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে আগ্রহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর নামে তালিকা জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরযুক্ত রেজুলেশন হিসেবে দাখিল করি। গত ৬ জানুয়ারি ২০২২ স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। যাতে আমার প্রাথমিকভাবে জানতে পারলাম যে, চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার চারতী ও নলুয়া ইউনিয়নে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যাতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা উৎফুল্লহয়। সেখানে চারতী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী। আর নলুয়া ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী তছলিমা আকতার পরপর দুবার নির্বাচিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগ এবং জামায়াত শিবিরের হাতে নির্মমভাবে নিহত সাতকানিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শহীদ নুরুল আবচারের স্ত্রী।’
কিন্তু পরবর্তীতে তাদের নাম বাদ দিয়ে ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রকাশিত তালিকায় যে দুজনের নাম প্রকাশ করা হয়। তারা জনবিচ্ছিন্ন ও দলের আদর্শ পরিপন্থি বলে অভিযোগ করেছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দীন চৌধুরী।
অভিযোগের বিষয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর পক্ষ থেকে কুতুব উদ্দীন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যেদিন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয় সেদিন পার্টি অফিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে খসড়া প্রার্থীদের তালিকা পেলাম। সেই খবর জানানোর পর আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোতে নিউজও হলো। কিন্তু যখন তালিকা টাঙানো হলো সেখানে প্রদীপ কুমার চৌধুরী এবং তছলিমা আকতার এর নাম নেই।
আপনি কিভাবে বুঝলেন প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে কুতুব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবনায় রুহুল্লাহ চৌধুরী নাম ছিল না। প্রস্তাবনা কোথাও রুহুল্লাহ চৌধুরীর নাম দেইনি। তৃণমূলের কোন তালিকাতেই তার নাম ছিল না।’
আপনার কাছে কেন মনে হলো প্রার্থী বদল হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কীভাবে বলব। এটা তো অহরহ হচ্ছে। কেন হচ্ছে কীভাবে হচ্ছে জানি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে যদি আমাদের প্রস্তাবনার প্রার্থীর চাইতে যদি যোগ্য প্রার্থী কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয় অথবা দলে যোগাযোগ না থাকলে এলাকায় গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হয়ে থাকে তাহলেও প্রার্থী পরিবর্তন হলে আমাদের কোন কথা ছিল না। যাকে দিয়েছে সে তো একটা ঘৃণিত মানুষ। সে জামায়াতের ছেলে ওর বাবা ছিল রাজাকার।’
এবিষয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘এই নিয়ে ৭ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ আসে। আমাদের নিকট যেই অভিযোগ দেয় আমরা সেই অভিযোগ গ্রহণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দেই। পরে যাচাই বাছাই করে তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
লিখিত অভিযোগে চরতী ইউনিয়নের বিতর্কিত প্রার্থী রুহুল্লাহ চৌধুরী সম্পর্কে বলা হয়। রুহুল্লাহ চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুঁলানো জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করা জামায়াত নেতা ও রাজাকার মরহুম মাওলনা মুমিনুল হক চৌধুরীর পুত্র এবং ২০২১ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর চরতীর তুলাতলীতে বালুমহাল দখল করে এলাকার কৃষি জমি নষ্টকারী ও জমি রক্ষায় বাধাদানকারী নিরীহ কৃষকদেরকে নির্বিচারে গুলি করে অঙ্গহানিসহ মারাত্মক আহতকারী মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী এবং আরো উল্লেখ্য যে, জেলা উপজেলা কর্তৃক প্রেরিত রেজুলেশনে ও তার নাম ছিল না।
অন্যদিকে নলুয়া ইউনিয়নের বিতর্কিত প্রার্থী লেয়াকত আলী। তার বিরুদ্ধে এলাকায় জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক ও শিবিরের মদদদাতা এবং সে সেনা বাহিনীর সৈনিক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় র্যাব বাহিনী থেকে মাদক চোরা-চালান সংক্রান্ত দুর্নীতির কারনে বাহিনী থেকে বহিস্কারের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত হয়। অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া এলাকায় বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে তার কু-খ্যাতি রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতির উদ্দেশে লিখিত অভিযোগ বলা হয় ‘অতএব, প্রার্থনা, উপরোক্ত কলামে বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন, রাজাকার পুত্র সন্ত্রাসী ও দলীয় আদর্শ পরিপন্থী ব্যক্তিদের মনোনয়ন হলে দলের ত্যাগী ও নীতি আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জনপ্রিয় ব্যক্তিদেরকে নৌকার প্রতীক প্রদান করে তৃণমূল নেতৃবৃন্দের মতামতের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।’
এসএম/এমএমএ/