গাইবান্ধার ভোট
সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ইসির সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোট স্থগিত হওয়ায় জনগণ হতবাক হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ৫০০ কিলোমিটার দূরে বসে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সে ক্যামেরার রেজ্যুলেশন, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি কেমন ছিল— সেটি একটি বড় প্রশ্ন। মানুষ বলছে এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত প্রচণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মতবিনিময়কালে গাইবান্ধা উপনির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ সব কথা বলেন তথ্য মন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি দল হিসেবে নয়, মন্ত্রী হিসেবেও নয়, একজন ব্যক্তি হিসেবে কথা বলছি। প্রথমত নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্বাচন সব সময় নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হয়। সরকারের সেখানে ভূমিকা নেই। সরকার শুধু ফেসিলেটরের ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন কমিশনই সর্বেসর্বা, তাদের সিদ্ধান্তই সবার উপরে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপিসহ যারা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে এর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি আমিই বলছি না, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও না, মন্ত্রী হিসেবেও বলছি না। সাধারণ জনগণ, সেখানকার ভোটার এবং গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন টকশোতে আমি যেটা দেখেছি সেখান থেকে মনে হচ্ছে সাধারণ জনগণ তাদের এ সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ নির্বাচনী এলাকার কোনো জায়গায় কোনো ধরনের কোনো গণ্ডগোল হয়নি। কোনো অভিযোগ নেই। এ ছাড়া কোনো পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসারেরও কোনো অভিযোগ ছিল না। বিন্দুমাত্র সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন কমিশন ৫০০ কিলোমিটার দূরে বসে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সে ক্যামেরার রেজ্যুলেশন, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি কেমন ছিল— সেটি একটি বড় প্রশ্ন।'
তিনি বলেন, 'সেটি একটি দুর্গম এলাকা। এখান থেকে ফুটেজ দেখে.. সেটি আসলে কতটুকু স্বচ্ছ বা সঠিক ফুটেজ দিচ্ছিল ‘দ্যাটস অ্যা বিগ কোশ্চেন’।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে প্রিজাইডিং অফিসারের লিখিত রিপোর্ট আছে ৯৮টা কেন্দ্রের, যে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে কোনো গণ্ডগোল হয়নি এবং রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশে ভোট বন্ধ করেছে। ‘হু ইজ অন দ্য গ্রাউন্ড’, তিনি বলছেন ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হচ্ছে আর এখানে ৫০০ কিলোমিটার দূরে বসে সিসিটিভি দেখে যখন ভোট বন্ধ করা হলো, তখন মানুষ শুধু হতবাকই হয়নি, মানুষ বলছে এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত প্রচণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলছি না, জনগণ বলছেন, বোদ্ধাজন বলছেন। সেখানে আমাদের প্রার্থী এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন'।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘৫৩ কেন্দ্রে ভোটারের বাইরে দেখেছেন বলে তারা বলছেন। সেখানে কেউ চা আনতে গেছেন, ভোটাদের হাত ধরে নিয়ে গেছেন, প্রিজাইডিং অফিসার হয়ত একটু বের হয়েছে, সেখানে কার চেহারা কতটুকু বোঝা যাচ্ছে। গাইবান্ধার অজপাড়া গাঁয়ের সিসিটিভি ক্যামেরা কতটুকু রেজুলেশন দিল….।
হাছান মাহমুদ প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী যেটা বলেছেন সেই ৫৩ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হতে পারত। বাকিগুলো কেন বাতিল হলো? এ প্রশ্ন কি অযৌক্তিক?’
প্রসঙ্গত, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনটির দিকে দৃষ্টি ছিল পুরো দেশবাসীর। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম কোনো সংসদীয় আসনে ভোটের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার সকাল থেকে গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোটারের পরিচয় শনাক্তের পর গোপন কক্ষে থাকা ব্যক্তি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আসতে থাকে। নির্বাচন কমিশন একাধিকবার এই ব্যক্তিদের ‘ডাকাত’ উল্লেখ করে বলেছে, ডাকাত ঠেকানোই তাদের চ্যালেঞ্জ।
তবে এই ডাকাত ঠেকানো যায়নি। ১৪৫টি কেন্দ্রে স্থাপন করা এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ ঢাকায় বসেই পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর একে একে ৫১টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়।
এরপর সিইসি বলেন, নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পরে বেলা আড়াইটার দিকে ভোট বাতিলের ঘোষণা আসে। সেখানে এখন নতুন করে ভোটের আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
এনএইচবি/আরএ/