‘আলতু-ফালতু’ লোক ছাত্রলীগে না ঢুকানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়ে তার হাতে তৈরি সংগঠন ছাত্রলীগ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এত বড় একটা সংগঠন তার মধ্যে কিছু কিছু তো.. আমরা ক্ষমতায় আছি বলে অনেকেই ভেতরে ঢুকে যায়। ঢুকে নিজেরাই গোলমাল করে। বদনামটা ছাত্রলীগের উপরে পড়ে। ছাত্রলীগকেও সতর্ক থাকতে হবে সংগঠন করার সময় গ্রুপ বাড়ানো জন্য আলতু-ফালতু লোক দলে ঢুকাবে না। তাতে নিজেদের বদনাম দলের বদনাম দেশের বদনাম’।
বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগকে সতর্ক থাকতে হবে কারণ পেছনে তো আমাদের লোক লেগেই আছে, লেগেই থাকে। ছাত্রদল যত অপকর্ম করে গেছে সেটা নিয়ে কথা নেই কিন্তু ছাত্রলীগের একটু হলেই বড় করে দেখা হয়। এজন্য নিজেদের ঠিক থাকতে হবে। জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়ে তার হাতে তৈরি সংগঠন এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। সারাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।
তিনি বলেন, আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়তে প্রকৃত দেশ প্রেমিক অসম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। যেন সঠিক নেতৃত্ব দেওয়া যায়। ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা এগুলো কাজে লাগে না। করোনার সময় অনেক ধনী মানুষের টাকার পাহাড়ও কাজে লাগে নাই, এটা মনে রাখতে হবে; এটাই বাস্তবতা। এটাই সত্য। চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগ স্বীকার করে এগোতে পারলে সৎ নেতা হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। কিন্তু গড্ডালিকা প্রবাহের মতো অর্থ সম্পদের পেছনে ছুটলে অর্থ সম্পদেই ভেসে যেতে হয়, নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাও থাকে না, দেশকেও কিছু দেওয়া যায় না। মানুষের জন্য কিছু করা যায় না। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, জাতির পিতার লেখা বইগুলো পড়লে রাজনীতি করার অনেক জ্ঞান অর্জন করা যাবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতা অগ্রগামী সংগঠন হিসেবে সবার আগে নির্দেশ দিতেন ছাত্রলীগকে। ছাত্রলীগ যখন মাঠে নেমেছে তার সঙ্গে সঙ্গে অন্য সংগঠনগুলোও নেমেছে। কিন্তু ছাত্রলীগই আগে নেমেছে। তাই আজকের ছাত্রলীগকে মানবতার সেবা করে যেতে হবে। পাশাপাশি সব চেয়ে বেশি দরকার লেখাপড়া শিখতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি চাই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলবে। তথ্য প্রযুক্তি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা দিক্ষায় উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সেভাবে নিজেদের তৈরি হতে হবে। দেশ চালাতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে। দেশ চালাতে গেলে জ্ঞানের প্রয়োজন আছে, ইতিহাস জানার প্রয়োজন আছে। দুদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে। সেটা না থাকলে দেশের কোনো দিনই উন্নতি হবে না।
তিনি বলেন, ৭৫ এর পরে তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি, বোমাবাজি। আমরা সেখান থেকে ফিরিয়ে এনেছি। যখন খালেদা জিয়া বলল ছাত্রদল দিয়েই নাকি আওয়ামী লীগকে সিধা করে দেবে। অর্থাৎ ছাত্রদের হাতে অস্ত্র দেওয়া জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। আমি ছাত্রলীগের হাতে কাগজ কলম বই তুলে দিলাম যে আগে লেখাপড়া শিখতে হবে। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতিকে কেউ সেবা দিতে পারে না। জ্ঞানের আলো ছাড়া কাজ হবে কীভাবে? আমি সেটাই চাই। ছাত্রলীগের মূলনীতিতে শিক্ষা এক নম্বরে আছে। শিক্ষার দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তাই আমাদের প্রত্যেকের সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে, পানি ব্যবহারে মিত্যব্যয়ী হতে হবে। এক ফোটা পানি যেন অপচয় না হয়। লন্ডনে বলে দিয়েছে গোসল করতে পারবে না কেউ। গাড়ি ধুতে পারবে না। সেখানে এই অবস্থা। আমাদের আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে ওরকম অবস্থায় যেন পড়তে না হয়। উন্নত দেশগুলোতে রেশনিং করে দেওয়া। আমেরিকা ইংল্যান্ড ইউরোপ সব দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে বলেন, অহেতুক ঘোরাঘুরি করার দরকার নাই। নিজেদের খাবার নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। ছাত্রলীগ ধান কাটায় সাহায্যে করেছে দরকার হলে ধান রোপনেও সাহায্য করতে হবে। এক ফোটা জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। নিজেদের খাবার নিজেরা উৎপাদন করতে হবে।
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্যের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
এসএম/আরএ/