আহ্লাদের আর শেষ নাই: খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী

বেগম খালেদা জিয়ার আহ্লাদের শেষ নাই বলে মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্মরণে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ তাকে বিদেশে পাঠাও। আহ্লাদের আর শেষ নাই। পৃথিবীতে কোন দেশে আছে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিল। অন্তত আমি এই টুকু দয়া করেছি ঠিক আছে বয়োবৃদ্ধ মানুষ, হাঁটতে চলতে উঠতে বসতে অসুবিধা, শুইলে একজনের না ধরে উঠতে পারে না। জেলখানায় এরকম অবস্থা দেখেছি, বলেছি ঠিক আছে যেটুকু আমার ক্ষমতা আছে, এক্সিকিউটিভ ক্ষমতার মাধ্যমে তাকে তার বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। এখন সেজেগুজে মেকআপ নিয়ে ভ্রু এঁকে হাসাপাতালে যান, আর এদিকে তার ডাক্তাররা আবার রিপোর্ট দেন খুবই খারাপ অবস্থা। তিনি নাকি যায় যায়, তার লিভার নাকি পচে শেষ। লিভার সাধারণত পচে কি করলে সেটা আমি মুখ দিয়ে বলতে চাই না। কি খেলে লিভার পচে সেটা মানুষ জানে।
তিনি বলেন, আমার কাছে বলে কোন মুখে? জিয়াউর রহমান আমার বাবা মা ভাই তাদের হত্যা করেছে। ইনিডেমনিটি দিয়ে খুনিদের ক্ষমা করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছে। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিল। খালেদা জিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে খুনিদের বিরোধী দলের চেয়ারে বসাল। তারা আবার মানবাধিকারের কথা শোনায়।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, যারা আমার বাবা-মা ভাইকে হত্যা করে বিচার চাইতে দেয়নি। তার জন্য এত করুণা, দয়া চায় কীভাবে আমার প্রশ্ন। তারপরও তো করেছি কম না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা গেল আমি গেছি আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, আমাকে ঢুকতে দেয়নি। কত বড় অপমাণ। আমরা মনে হলো তুমি খালেদা, জিয়াউর রহমানের সাথে দুই মাস এক পর আমাদের বাসায় গিয়ে বসে থাকত। চেয়ারও পেত না, মোড়া ছিল সেই মোড়ায় বসতা আর এখন আমাকে ঢুকতে দেবে না।
আমার গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে গেট বন্ধ। আমাকে ঢুকতে দিল না। জীবনে কখনো এই রকম ইনসাল্ট করবে তারপরও তার জন্য দয়া দেখাতে হবে! দয়া তো দেখিয়েছি আর কত দয়া দেখাব? যে আমাকে খুন করতে চেয়েছে, আমার বাবা-মা-ভাই-বোনের হত্যার সঙ্গে জড়িত তার জন্য যথেষ্ট দয়া দেখানো হয়েছে। যে আমার হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, খুন করেছে নির্যাতন করেছে দিনের পর দিন নির্যাতন করেছে। অনেক দয়া দেখানো হয়েছে, এর বেশি দয়া আর আমাদের দেখানো সম্ভব না।
সরকার প্রধান বলেন, এখন আবার একটা নাটক সাজাচ্ছে। গাড়িতে করে তিনি (খালেদা জিয়া) হলুদ শাড়ি পরে হাসপাতালে যাচ্ছেন। এখন নাকি খুবই খারাপ অবস্থা বিদেশে পাঠাতে হবে। এভারকেয়ারে চিকিৎসা করাচ্ছে, সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা, সবচেয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসা তাকে দিচ্ছি। আসামিকে কবে বিদেশে পাঠায় চিকিৎসার জন্য? তাহলে তো কারাগারে কোনো আসামি থাকবে না, সবাই দাবি করবে আমাকে বিদেশে পাঠান। আমরা কি সবাইকে পাঠাব? নানাভাবে নানা রকম অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে।
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের নেতা-কর্মীদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। আমরা সংঘাত চাই না, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। জাতির পিতা সেটাই শিখিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, যুদ্ধ আর মহামারির কারণে মানুষকে অনেকটা কষ্ট করতে হচ্ছে এটা আমি বুঝি। তাই এখন থেকেই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যার যতটুকু জায়গা আছে চাষ করতে হবে। যেখানে যার সুযোগ আছে উৎপাদন করতে হবে। এই যুদ্ধ সহজে শেষ হবে না। আমেরিকার আর একটা নির্বাচন না আসা পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে এটা হলো বাস্তবতা।
মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে আমরা ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১ কোটি পরিবারকে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দেব। এ ছাড়া ৩৫ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেব। তাছাড়া ভিজিএফ, ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে চাল দিচ্ছি। এভাবে আমরা মানুষের পাশে আছি।
এ সময় তিনি পাকিস্তানে বন্যার কথা তুলে ধরে বলেন, পাকিস্তানের বেলুচিস্তাানে বন্যা হয়েছে। বাচ্চারা খুব কষ্টে আছে। আমি খোঁজ নিতে বলেছি সেখানে কী কী পাঠানো যায়। আমরা তাদের রিলিফ পাঠাব। আমরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছি তাদের প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা আর্তমানবতার সেবায় মানুষের পাশে আছি। যারা বিত্তশালী আছে তাদের বলবে আশ পাশের মানুষের পাশে দাঁড়ান। এটাই আওয়ামী লীগের শিক্ষা।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন— ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য সাদেক খান।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি।
এসএম/আরএ/
