আওয়ামী লীগের দিন শেষ: মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগের দিন শেষ হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। এটি আমাদের কথা নয়। ওই দেখেন পশ্চিমাবিশ্ব গণতন্ত্রের প্রধান যাদের বলা হয় সেই আমেরিকা তাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিচ্ছে। কাদের দিয়েছে? যারা আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি বাধা সৃষ্টি করেছে, হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে, তুলে নিয়েছে, গুম করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেই কিন্তু এই সাজা এসেছে। সুতরাং ঘণ্টা বেজে গেছে। আর সময় নাই, এখন উল্টাপাল্টা এদিক-সেদিক করে কথা বলে কোনো লাভ হবে না। সোজাসুজি এখনও সময় আছে-এই মুহূর্তে পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন দিয়ে, নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসেঙ্গ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। চিকিৎসকরা বারবার বলছেন তার চিকিৎসা দরকার বিদেশে। তারা (সরকার) বিভিন্ন প্রকার তালবাহানা করছে। আইনে নেই! তাহলে ১/১১-র পর শেখ হাসিনা কীভাবে কান দেখাতে আমেরিকা গিয়েছিলেন? কীভাবে মোহাম্মদ নাসিম জেল থেকে সোজা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন? জাসদ নেতা আ স ম আব্দুর রবকে জিয়াউর রহমান কীভাবে চিকিৎসার জন্য জার্মানি পাঠিয়েছিলেন। আসলে আইন কোনো ব্যাপার নয়-৪০১ ধারায় পরিস্কার বলা আছে, সরকার যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।সুতরাং আর তালবাহানা করে লাভ নেই। পদত্যাগ করেন এবং খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। অথবা আপনারা নিজেরা যাওয়ার জন্য তৈরি হন।’
এ সময় ফখরুল বলেন ‘আমরা অনেক কথা শুনতে পাই মন্ত্রীরা নাকি পাসপোর্ট তৈরি করে ফেলেছে। কে কোথায় যাবেন সেই ব্যবস্থাও নাকি হয়ে গেছে। তাহলে এত দেরি করে লাভ কী? তাড়াতাড়ি যান। দেশের মানুষ রেহাই পাক, স্বস্তি পাক।’
নির্বাচন কি আওয়ামী লীগ করে? প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আওয়ামী লীগ করে না। নির্বাচন করে সরকারি কর্মকর্তারা। নির্বাচন করে পুলিশের লোকেরা।আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে হয় না। তারা নির্বাচন করলে হয় আগের রাতে করে দেয় নতুবা ওইদিনেই বিশেষ পদ্ধতিতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা করে দেয়। যা তারা এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে করছে।’
শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ’৭১ সালের স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়েছে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। মানুষের বিচার বিভাগ, বিচারপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন,‘ বিচার বিভাগ, যেখানে মানুষ শেষ মুহূর্তে যায় ভরসা নিয়ে, সেখানেও আজ পুরোপুরি দলীয়করণ হয়েছে। যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়। সুপারিশ করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয় সেদেশে বিচারের স্বাধীনতা কতটুকু আছে, ন্যায়বিচার কতটুকু পাওয়া যাবে তা আমরা সবাই জানি।’
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দেখতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘কালকে পদ্মা সেতুর উপর পোজ দিয়ে ছবি তুলেছেন। ভালো কথা আমাদের আপত্তি নাই। ছবি আপনারা তুলেন, অবশ্যই তুলেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ করেন। কিন্তু আমার সাধারণ মানুষের মোটা ভাত মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। ফাইভ স্টার হাসপাতাল তৈরি হয় কিন্তু সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা পায় না। শ্রমিকরা তার মজুরি পায় না। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। খুব বড় করে কথা বলেছিলেন ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবো অথচ আজ ৭০ টাকাতেও চাল পাওয়া যায় না। জ্বালানি তেলের দাম ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে অসহ্য হয়ে পড়েছে মানুষ। অথচ তারা বলছে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে বাংলাদেশ।’
এ সময় জাতি বাঁচাতে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে সবাইকে আত্মত্যাগ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনা সভায় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমানুল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ও হাবিবুর রশিদ হাবিব, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসানসহ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নেতারা। সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।
এমএইচ/এএন