জাতীয় পার্টি দেশের একনায়কতন্ত্রের পতন চায়: জিএম কাদের
দেশে এখন একনায়কতন্ত্র চলছে। জাতীয় পার্টি এই একনায়কতন্ত্রের পতন ও গণতন্ত্রের মুক্তি চায়, বলে মন্তব্য করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বা সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বলতে হয় সার্বিকভাবে বিবেচনায় স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশে কোনো সময় গণতন্ত্রের চর্চা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে ছিল না। এর প্রধান কারন আমাদের সংবিধান। সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে এবং বিভিন্নভাবে গণতন্ত্রের চর্চার বিষয়ে জোড় দিয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে সংবিধানের বিভিন্ন বিধানাবলীতে গণতন্ত্রের চর্চার চেয়ে একনায়কতন্ত্রবাদকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। দেশে এখন একনায়কতন্ত্র চলছে। আমরা একনায়কতন্ত্রের পতন চাই,গণতন্ত্রের মুক্তি চাই।’
শনিবার (১ জানুয়ারি) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাপা চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
দেশের প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিকে অচল মুদ্রার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘অচল পয়সার এপিঠ আর ওপিঠ দেখা হয়ে গেছে। মানুষ এটাকে ছুঁড়ে ফেলতে চায়। মানুষ নতুন পয়সা চায়, যেটা চলবে, চালু পয়সা। অচল পয়সা আর নয়। সচল পয়সা যেটা সেটা হলো আমাদের জাতীয় পার্টি।’
‘আমাদের রাজনীতি জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা। এটা হলো আমাদের আগামীর রাজনীতি,’ তিনি বলেন।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচএম এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে স্বৈরাচার বলা হয়। স্বৈরাচারের যদি নম্বর দেওয়া হয় জেনারেল এরশাদ সব চাইতে কম নম্বর পাবেন।
সামরিক শাসক এরশাদের শাসনামলে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে করতে প্রাণ দেওয়া নূর হোসেনের কথা তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, 'স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক।'
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দুটি দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি অপকর্ম দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও লুণ্ঠনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। এই ভুলটি করবেন না, বর্তমান সরকার চলে গিয়ে যদি বিএনপি আসে, যেটা চলছে সেটা চলবে।'
তিনি আরও বলেন, 'চাঁদাবাজি যেটা হচ্ছে, হতেই থাকবে। দলীয়করণ যেটা হচ্ছে, বৈষম্য হতেই থাকবে। এটা বন্ধ করতে হলে তাদের দুইজনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। জনগণ আর চায় না। এখন জাতীয় পার্টিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে দেখতে চায়। তারা প্রত্যাশা করছে জাতীয় পার্টি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে দেশে সুশাসন ফিরে আসবে। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে প্রত্যাশা করে ভবিষতেও জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসলে সুশাসন ফিরে আসবে।'
জিএম কাদের বলেন, দেশের সর্বত্র চাঁদাবাজি ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়ি করতে গেলে চাঁদা দিতে হয়। ঠিকাদারি কাজ পেলেও চাঁদা দিতে হয়। হাটে, মাঠে,ঘাটে, ফুটপাতেও চাঁদা দিতে হয়। হকারদের কাছেও চাঁদাবাজি। উবার চালকদের কাছেও চাঁদাবাজি। মানুষ যাবে কোথায়?
সরকারের উদ্দেশে বিরোধী দলের উপনেতা বলেন, সরকারকে কিছু বললেই বলবে ‘জিডিপি দেখেন। আমাদের জিডিপি কত বেশি। আমরা জিডিপিতে এগিয়ে আছি।’ আরে জিডিপি ধুয়ে কি আমি পানি খাব?
তিনি বলেন, 'দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কারচুপি তো দূরের কথা, কারচুপি এখন দরকারও নেই। আপনাকে দাঁড়াতেই দেবে না। আমাদের প্রার্থী দাঁড়ালেই তাকে মারা হচ্ছে, কাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে, ধমক দেওয়া হচ্ছে, বাড়ি ঘরে আগুণ দেওয়া হচ্ছে, তাদের আটক করে রাখা হচ্ছে। ইউএনও এসপি তারা এসব কাজে সহযোগিতা করছে। আমাদের প্রশাসন, আমাদের পয়সায় চলে যে প্রশাসন সেই প্রশাসন আমাদের বিরুদ্ধে, দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করছে, এর চেয়ে বড় কলঙ্কজনক কী হতে পারে? আমরা এর প্রতিবাদ করি তীব্র প্রতিবাদ করি। নির্বাচন যদি করতে হয় সবাইকে কাজ করতে দেন।'
স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গ্রামেগঞ্জে কোথাও স্বাস্থ্যসেবা নেই। জেলা পর্যায়ও স্বাস্থ্যসেবা নেই। স্বাস্থ্যখাত দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
এসএম/এএমএমএ/