জনআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে সংলাপ তাৎপর্যহীন
রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাবে না ইসলামী আন্দোলন
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেবে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার (১ জানুয়ারি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এ কথা জানিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সংলাপ নিয়ে দেশের চিন্তাশীল মহল, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাধারণ জনগণের মাঝে কোনো আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না। বরং জনগণ মনে করছে, রাষ্ট্রপতির সংলাপে ফলপ্রসূ কিছু হবে না। অতীতের দুটি সংলাপ যেমন জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, চলমান সংলাপেও এর ব্যতিক্রম কিছু হবে না। অতএব, জনআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে এমন একটি আবেদনহীন ও তাৎপর্যহীন সংলাপে অংশ নেওয়াটা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সঙ্গত মনে করে না।’
আরও বলা হয়, ‘আমরা আলাপ-আলোচনা ও সংলাপের বিরোধী নই। দেশকে রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে মুক্ত করতে হলে, সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করতে হলে ফলপ্রসূ সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। ফলপ্রসূ সংলাপ হতে হলে সংলাপের বিষয়বস্তু পরিবর্তন করতে হবে। দেশবাসী মনে করে, নির্বাচন কমিশন গঠন নয় বরং সংলাপ হওয়া উচিৎ নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো নিয়ে। দেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কিভাবে হবে, তা নিয়ে সংলাপ হওয়া উচিৎ। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এমন একটি ফলপ্রসূ সংলাপের উদ্যোগ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অবশ্যই অংশ নিবে।’
আইনমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলা হয়, ‘আইনমন্ত্রী বলে বেড়াচ্ছেন, ইসি গঠনে আইন করার মতো সময় নাই। নানা বিতর্কিত পন্থায় টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে যখন বলেন, ইসি গঠন সংক্রান্ত আইন করার সময় পান নাই; তখন একে মতলববাজি ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না।’
জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ৭টি দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো:
দাবি:-১. নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আইন করতে হবে।
দাবি:-২. নির্বাচনের সময় অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
দাবি:-৩. ইসি আয়োজিত প্রতিটি নির্বাচনের পরে কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচন ও ইসির মূল্যায়ন করতে হবে। নির্বাচনে কোনো ধরনের অসততা, অদক্ষতা ও পক্ষপাত পাওয়া গেলে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের অপসারণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
দাবি:-৪. জন প্রশাসন, আইন, স্বরাষ্ট্র ও তথ্যমন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত করতে হবে।
দাবি:-৫. নির্বাচন কমিশনের বাজেট, সচিবালয় ও পরিচালনা নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিতে হবে।
দাবি:-৬. নির্বাচনকালীন সহিংসতার প্রতিটি অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইসিকেই নিতে হবে।
দাবি:-৭. সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাউকে কাউকে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করতে দেখা গেছে। যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে তাদের চিহ্নিত করে স্থায়ীভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার গোলাম মাওলা, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারি মহাসচিব হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, কেএ আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা খলিলুর রহমান, জিএম রুহুল আমিন, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, এডভোকেট লুৎফুর রহমান শেখ, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, মাওলানা নেছার উদ্দিন, এডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, আল্লামা মকবুল হোসাইন।
ইসি গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হয়েছে গত ২০ ডিসেম্বর। নিবন্ধিত ২৯টি রাজনৈতিক দলকে এই সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম এর আগে এই সংলাপে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
এপি/এএন