এখনই চূড়ান্ত আন্দোলন নয়, তবে মাঠে থাকবে বিএনপি
কৌশলগত কারণে এখনই সরকারবিরোধী চূড়ান্ত ও বড় কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় না বিএনপি। সরকারের সঙ্গে কোনোরকম সংঘাত এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার বার আন্দোলনের হুংকার দেওয়া দলটি। সবাইকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। একইসঙ্গে মাঠ পর্যায়ে দলের নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে লাগাতার কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিএনপি। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেন্দ্র থেকে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে তৃণমূলে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
দলটির নেতারা বলছেন, সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার থাকলেও এখনই বড় কর্মসূচিতে যেতে রাজি নয় বিএনপি। তাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, নির্বাচনের বাকি এখনো দেড় বছর। এই অবস্থায় এখনই বড় কর্মসূচি দিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চান না। বড় কর্মসূচি দিলে সংঘাত হবে এবং সরকার মামলা-হামলা আরও বাড়াবে। তার চেয়ে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রেখে নির্বাচনের কাছাকাছি গিয়ে বড় আন্দোলন গড়তে চাইছে দলটি। সরকারবিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে নামার জন্য চূড়ান্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার কাজ শুরু করেছে বিএনপি।
ইতিমধ্যে অন্তত ২৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শেষ। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে আন্দোলন ইস্যুতে তারা এ ঐক্য গড়তে চায়।
সংলাপ শেষে সবার মতামত পর্যালোচনা করে ঐক্যের বিষয়ে দলগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব তুলে ধরার কথা রয়েছে বলে জানান বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক।
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই মুহূর্তে বড় আন্দোলন নয়, বরং দেশের প্রতিটি উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসনের দলের সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
আগামী ২২ আগস্ট থেকে সারাদেশে লাগাতার কর্মসূচি পালন করতে কেন্দ্র থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে ইতিমধ্যে তৃণমূলে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি, নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের রাজপথ দখল করতে হবে। রাজপথের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা অবশ্যই এ ফ্যাসিস্ট দানবীয় সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার, জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের সমাজ তৈরি করব।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘বড় আন্দোলন’ গড়ে তোলার বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর চাপ রয়েছে। এ কারণে সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহানগর, ওয়ার্ড, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার (১৬আগস্ট) বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই চিঠি জেলা ও মহানগরের সভাপতি/ আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক/ সদস্য সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি উপজেলা/থানা/পৌর পর্যায়ে সভা সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি নির্ধারণ করবে জেলার নেতারা। প্রতিদিন প্রতিটি জেলা বা মহানগরের একটি থানা বা উপজেলায় কর্মসূচি হতে হবে। এ কর্মসূচিতে জেলার নেতারা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব (সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা) ও সাবেক সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকবেন।
প্রতিটি ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচির দিন তারিখ নির্ধারণ করবে উপজেলা, পৌর বা থানার নেতারা। প্রতিদিন একটি করে ওয়ার্ড অথবা ইউনিয়নে কর্মসূচি পালন করতে হবে। উপজেলা, পৌর বা থানার নেতারা এ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
বিএনপির ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে এ কর্মসূচি পালনে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এসব কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি ইউনিটে কর্মসূচির তারিখ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরকে জানাতে হবে।
এদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, ঢাকাকে প্রস্তুত না করলে কোনো আন্দোলন সফল হবে না। কারণ এখনো ঢাকা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত নয়। ঢাকায় যে সভা-সমাবেশ হয় তাতে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ নেতা-কর্মী হচ্ছে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এবং মামলা-হামলার ভয়ে বাড়িঘর ছাড়া মফস্বলের নেতা-কর্মী।
ঢাকা মহানগর বিএনপির (উত্তর ও দক্ষিণ শাখা) ওয়ার্ড ও থানা কমিটির নেতাদের দেখা পাওয়া খুব কঠিন। ওয়ার্ড বা থানা পর্যায়ের কর্মসূচি হলেই তাদের দেখা যায়। ঢাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল মিটিং না হলে কার্যকর আন্দোলনও গড়ে উঠবে না।
এনএইচবি/টিটি