নড়াইলের সহিংসতায় দায়ী স্থানীয় আওয়ামী লীগ: নিতাই রায়
নড়াইলের দিঘলীয়ার সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকান-পাট, মন্দির ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংকেই দায়ী করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নড়াইলের ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শন করে আসা দলীয় তদন্ত টিমের আহবায়ক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত টিম সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে আক্রান্ত পরিবার এবং স্থানীয় জনসাধারণের বক্তব্যের পরিপেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীতি হয়েছে যে, ঘটনাটি নিশ্চিতরুপে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিয়ের নগ্ন বহির্প্রকাশ। তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যেই সংখ্যালঘুদের একটি সহজ উপাদান হিসেবে করা হয়। যেটা অন্যান্যা জায়গার মতো নড়াইলেও ঘটেছে।'
‘নড়াইল আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ বসু-তিনি ২/৩দিন পরে ওখানে যান। ওখানের উপজেলা চেয়ারম্যান তিনিও সম্ভবত যান নাই। প্রশাসন নির্লিপ্ত এবং এটা সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা। আমরা সেখানে গিয়ে তা সরেজমিন দেখে, ক্ষতিগ্রস্তসহ সাধারণ মানুষের কথা বলে এটা প্রত্যক্ষ করেছি।'
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানবী হয়রত মুহাম্মদ (সা) কে কটুক্তি করে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই সকালে নড়াইলের দিঘলীয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২৩ জুলাই তদন্ত টিম নড়াইলের দিঘলীয়া সাহাপাড়া গ্রামে গিয়ে সরজমিন তদন্ত করে।
তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘১৫ তারিখ হঠাত করে মাগরেবের নামাজের পরে প্রায় দুই-তিন‘শ উতশৃঙ্খল লোকজন সাম্প্রদায়িক শ্লোগান দিয়ে সাহাপাড়াতে প্রবেশ করে। সেখানে ১০/১২ বাড়ি ঘর ভেঙে নচনচ করে, সেখানে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করা হয়, আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। মন্দিরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, মন্দিরের প্রতিমা ভাঙে। তার অদূরেই পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। পুলিশের নাকের ঠগার উপরে এই ঘটনাটা ঘটলো।'
‘ওই গ্রামের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান। এই ঘটনায় বাড়িঘর ভাংচুর হচ্ছে, দরজা ভেঙে ফেলছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে অথচ এরা(আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান) নির্বিকার। কারণ যে চেয়ারম্যান হয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। আর পাশের গ্রামের আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী সে পরাজিত হয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে। এখন দ্বন্দ্বটা শুরু হয় বিদ্রোহী(স্বতন্ত্র) প্রার্থী পাস করলো কিভাবে? দিঘলীয়া গ্রামের ৭০% ভোট হিন্দু ভোট। হিন্দুরা ভোট দিয়েছে সেই প্রার্থীকে। কেনো দিলো ভোট? এখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত।'
বর্তমানে নড়াইলের দিঘলীয়া গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এই অঞ্চলটাই ছিলো যশোর-নড়াইল-বগুড়া মুক্তাঞ্চল।ওই সময়েও এখানে এরকম ঘটনা ঘটে নাই। সেই গ্রামের ওপরে এরকম নির্মমতা সেখানকার লোকজন মর্মবেদনায় ভুগছেন।'
‘আমরা পার্টির তরফ থেকে সেখানে কিছু সাহায্য দেয়ার প্রস্তাব করলে তারা(ক্ষতিগ্রস্থরা) বলেন, আমরা কোনো সাহায্য্ চাই না। আমাদেরকে অনেক সাহায্য দিতে এসেছে আমরা সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণটা হচ্ছে যে, সাহায্য দিয়ে হয়ত আমাদের ঘরটা মেরামত হতে পারে কিন্তু হৃদয়ের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে সেই ক্ষত মুছে যাবে কিভাবে। সেখানে এখন ভয়াবহ আতঙ্ক, শশ্মানের আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানে একাত্তর সালে যুদ্ধের সময়ে যেরকম আতঙ্ক বিরাজ করেছে এখন সেরকম আতঙ্ক বিরাজ করছে।'
সংবাদ সম্মেলনে নড়াইলের ঘটনার তদন্ত টিমের সদস্য অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অমলেন্দু দাস অপু ও অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/এএস