ইসি গঠনে একদিনে আইন পাস করা সম্ভব: মেনন
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করা ফরজ হয়ে গেছে বলে রাষ্ট্রপতি একমত প্রকাশ করেছেন-এমনটি জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
মেনন বলেন, ‘আইন করা কেবল প্রয়োজনই নয়, রাষ্ট্রপতি আমাদের সঙ্গে অন্তত এটুক একমত হয়েছেন যে আইনটা করা একেবারে ফরজ হয়ে গেছে। কারণ, প্রতিবার আইন না করে নির্বাচন কমিশন গঠন করায় একটা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এই বিতর্ক নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আস্থাহীনতা তৈরি করে।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আইন করার ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দলের মত রয়েছে। এমনকি সরকারি দল আওয়ামী লীগও চায় আইন হোক। কেউ কিন্তু এ ব্যাপার অস্বীকার করছে না। সুতরাং রাষ্ট্রপতি যদি উদ্যোগ নেন তাহলে এই ঐক্যমতকে রূপায়ন করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি আপনি নাগরিকদের ডাকেন, মিডিয়ার লোকদের ডাকেন, বুদ্ধিজীবীদের ডাকেন। সবার মতামত নেন।’
সরকারি দল থেকে শুনেছি এই সময়ের মধ্যে আইন করা সম্ভব না। এ বিষয়ে আমরা বলেছি, ‘১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান, আপনাদের স্মরণ আছে এক রাতের ভেতর হয়েছিল। যেটি নিয়ে ১৯৯৬ সালে পরবর্তীকালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী বিচারের সময় আপিল প্রসঙ্গে যখন সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিলো তখন কিন্তু সময় লাগেনি। অন্য আইনের সময়ও খুব একটা লাগে না। এরকম উদাহরণ আমাদের আছে।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে বলেছি নতুন বছরের শুরুতে যে অধিবেশন হবে, সেখানে একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। এর কাঠামো এর মধ্যে তৈরি করা আছে। শামসুল হুদা কমিশন সেটি তৈরি করে গেছেন। এছাড়া বিভিন্ন বিজ্ঞজনের নিকট আইনের বিধানগুলি রয়েছে। সরকাই চাইলে এগুলো নিতে পারে। প্রথম অধিবেশনে যেহেতু রাষ্ট্রপতি বক্তৃতা করবেন, আপনি (রাষ্ট্রপতি) আশ্বস্ত করেন যে আইনটা এই সংসদে পাস হবে।
আইন করতে তো সময় লাগবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, আপনি কি মনে করেন? সম্প্রতি যে আইন হচ্ছে সেগুলোর কোনটাই পাশ হতে ২ ঘণ্টার বেশি লাগেনি। তারা হয়তো বলবে কমিটিতে যেতে হবে। যেদিন আইন কমিটিতে যাবে পরদিন বসে আইন পাস করা সম্ভব। কাজেই হুদা কমিশনের ড্রাফট আছে। তারা চাইলে সারা রাত বসে খেটে করে দেব। আমরা করেছি অতীতে এরকম অনেক উদাহরণ আছে।
যারা সাংবিধানিক পদে তারাই তো সার্চ কমিটির সদস্য হবেন। কাজেই যাদের নাম দেবেন সেটা সংসদে ভোট করতে হবে। সংসদে তো সবাইকে আনা সম্ভব না। তাই সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটি আছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আছেন, বিরোধী দলীয় নেতা আছেন, স্পিকার আছেন। সার্চ কমিটিও গঠন করতে হলে সংসদকে জানিয়ে করতে হবে। তাতে জনমতের প্রতিফলন হবে, না হলে জনমতের প্রতিফল হবে না।
এরপর বলেছি নির্বাচন কমিশনে অন্তত ২ জন নারী সদস্য রাখবেন। একজন কার্যক্ষম নির্বাচন কমিশন চাই। চলমান ইউপি নির্বাচনে দেখিয়ে দিল এই নির্বাচনের কমিশনের কোনো ধরণের তাপ-উত্তাপ নেই। বরং তারা সহিংসতাকে উৎসাহিত করেছে। আইনের প্রয়োগ যে নির্বাচন কমিশন করতে পারবে সেই নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতে নাই। রাষ্ট্রপতিও দুঃখ করেছেন। সংসদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের জায়গা নেই। আমরা আশা করবো রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচন কমিশন বড় ভূমিকা পালন করবে। টাকার খেলা না হলে রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকবে রাজনীতি। এটা নির্বাচন কমিশন বন্ধ করতে পারে। এবার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কোটি টাকার উপরে খরচ হয়েছে। আমরা যদি সংসদ সদস্য নির্বাচন করি তখন কি হবে আমাদের? নির্বাচন কমিশনকে টাকার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং স্বাধীন সত্তা নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা না থাকলে কি সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ‘আইন থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো আইনের আশ্রয় নিতে পারি। আইন না থাকলে তো আইনের আশ্রয় নিতে পারি না। রাষ্ট্রপতিও মনে করেন আইনটা হয়ে যাওয়া উচিত।’
নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা আলোচ্য বিষয় ছিল না। আমরা নির্বাচন করেছি দলীয় সরকারের অীধনে। সুতরাং আমরা তো মনে করছি না যেটা সংবিধানে নেই সেটা নিয়ে কথা বলা দরকার।’
নতুন ইসি গঠন হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। নির্বাচন বর্জন করবো না। দলীয় সরকারের অধীনে তো নির্বাচন হচ্ছে। এর বাইরে তো নির্বাচন ব্যবস্থা সংবিধানে নেই। আমি মনে করি না সংবিধানে এই মুহূর্তে এটা করতে হবে। এটা করতে গেলে সমস্ত রাজনৈতিক দলের মতামত লাগে।’
বিএনপি বলছে সংলাপ দিয়ে কিছু হবে না আপনারা কি মনে করেন? এ প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ‘আমরা মনে করি সংলাপ হওয়া দরকার। গণগন্ত্রে সংলাপের বিকল্প নেই। যারা বলছেন সংলাপে কিছু হবে না। তাদের সেই কথা বাস্তবে নিয়ে আসতে হবে। আমরা আজিজ কমিশনকে আন্দোলন করে বাদ দিয়েছি। তারা যেটা বলছেন সেটা করুক, তারা বলেছে সংলাপ নাটকে পরিণত হয়েছে, তারা প্রমাণ করুন নাটক যাতে না হয় তার জন্য যা প্রয়োজন জনমত সংগঠিত করা, ঐক্যমত করা সেই কাজটা করুন। তখন দেখবো।
এসএম/এএন