মিথ্যা ইতিহাস শেখাচ্ছে সরকার: মোশাররফ
জিয়া পরিবারকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভয় পায় বলেই নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাস শেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বৃহস্পতিবার (২ জুন, ২০২২) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার হলরুমে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪১ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে "বাংলাদেশ ও শহীদ জিয়া" শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
তিনি বলেন, 'জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়নে তার অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা যখন দেশ থেকে পালিয়ে ছিলেন তখন কারো নির্দেশ ছাড়াই তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান 'উই রিভোল্ট' বলে বিদ্রোহ করেন।
তিনি তার অধিনায়ক জেনারেল জানজুয়াকে গ্রেপ্তার ও হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করে নিজে যুদ্ধ করেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি ছাড়া এই দাবি কেউ করতে পারবে না। অথচ নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাস শেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।'
খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'শহীদ জিয়া ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তিনি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। সাংবিধানিক সংস্কার করে বাংলাদেশের জাতিসত্তার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আমাদের পরিচিতি হিসেব বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ঐতিহ্যের সমন্বয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বিষয়টি চূড়ান্ত করেন। যার ভেতরে বাংলাদেশের অনেক কিছু নিহিত আছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যে চেতনা সেটা হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।'
তিনি বলেন, শহীদ জিয়া তার শাসনামলে বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধন করে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' সংযোজন করেন। ইনশাআল্লাহ এটা কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। তিনি সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা বিষয়টির পরিবর্তন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সংবিধানে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বাতিল করে মুক্তবাজার তথা অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছেন।
জিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, আজকে বাংলাদেশ কৃষি, রেমিট্যান্স ও গার্মেন্টস শিল্পের উপর বাংলাদেশের অর্থনীতি দাড়িয়ে আছে। এগুলো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তিনি খাল খনন করে কৃষির উন্নয়নে অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণ করে ছিলেন। যে দেশে ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েও ৩ বছর পর তিনি বিদেশে চাল রফতানি করেছিলেন। গার্মেন্টস শিল্পের প্রতিষ্ঠা করেন। বিদেশে জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা অর্জনের পথ তৈরি করে গেছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক রফতানি শুরু করেন। মুসলিম বিশ্বে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ও সুপরিচিতি জনপ্রিয় নেতা। তিনি ছিলেন আল কুদস কমিটির সদস্য। সুতরাং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে কোথা থেকে বাদ দিবেন?
তিনি বলেন, আজকে যারা ক্ষমতায় তারা স্বৈরাচারী এবং ফ্যাসিস্ট। তারা প্রাইমারি স্কুলের বই থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস সরিয়ে দিছে। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে তার নাম রাখা হয়নি। কেনো সরকার শহীদ জিয়া ও জিয়া পরিবারকে ভয় পায়? তারা কেনো নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাস শেখাচ্ছে? কারণ তারা তো ব্যর্থ। গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল করেছিলো। স্বাধীনতার ঘোষণা করতে পারেনি। সে কারণে তারা নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাস শেখাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা বাতিল করেছে। খালেদা জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিলো ইমার্জিং টাইগার। সেজন্যই তারা জিয়া পরিবারকে ভয় পায়। আমাদের সবাইকে শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার স্বপ্ন পূরণে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। সেজন্য সরকারের পদত্যাগ এখন সময়ের দাবি। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশকে ধংসের শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
এএজেড