আওয়ামী লীগ আমাদের ক্রীতদাস বানাতে চাচ্ছে: জিএম কাদের
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় পার্টিকে অঙ্গ সংগঠন বানাতে চেয়েছে। এরপর তারা আমাদের চাকর বানাতে চেয়েছে, এখন রাজনীতিতে আমাদের ক্রীতদাস বানাতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি কারও নিয়ন্ত্রণে রাজনীতি করবে না। আমরা কারও কৃতদাস হতে রাজনীতি করছি না। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির জন্য রাজনীতি করছি। কারও চাকর বা কৃতদাস হয়ে রাজনীতি করব না আমরা। রাজনীতিতে আমরা বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে পারি, বন্ধু হয়ে রাজনীতি করতে পারি। রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি কারও গোলামী করবে না।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে জামালপুরের মির্জা আজম অডিটোরিয়ামে জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম মোহাম্মদ কাদের এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক মোস্তফা আল মাহমুদ-কে সভাপতি ও সদস্য সচিব মো. জাকির হোসেন খানকে সাধারণ সম্পাদক এবং কাজী খোকন খান-কে সাংগঠনিক সম্পাদক ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট ও হাওয়া ভবন চাইনি বলেই ১৯৯৬ সালে আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে আমাদের দলে বিভেদ সৃষ্টি করতে চেয়েছে। আমাদের দুর্বল করতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করিনি। আবার দেশের রাজনীতির স্বার্থে, গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করতে এবং দলবাজী, টেন্ডারবাজী ও চাঁদাবাজি রোধ করতে ২০০৮ সালে আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় গিয়ে ২০০৮ সালের পর থেকে প্রথমে জাতীয় পার্টিকে অঙ্গ সংগঠন বানাতে চেয়েছে। এরপর তারা আমাদের চাকর বানাতে চেয়েছে এখন রাজনীতিতে আমাদের ক্রীতদাস বানাতে চাচ্ছে। আমরা কারো ক্রীতদাস হতে রাজনীতি করছি না। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির জন্য রাজনীতি করছি। দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।
জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিকে আবারও দুর্বল করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। লোভ লালসা দিয়ে আমাদের মাঝে দালাল সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে। অত্যাচার-অবিচার শুরু হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। আমরা কোন অত্যাচারে মাথা নত করব না। দেশের মানুষ আমাদের বিশ্বাস করে। দেশের মানুষ আমাদের ওপর ভরসা রাখতে চায়। কোন জুলুম-নির্যাতন আমাদের লক্ষ্যচ্যুত করতে পারবে না। দেশের মানুষ জানে শুধু জাতীয় পার্টিই দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন দিতে পারবে। যা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষকে দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। দেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে পারে না। এমন দুঃশাসন থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। গণতন্ত্র নেই বলেই দেশের কোথাও জবাবদিহিতা নেই।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপণার কারণে দেশ শ্রীলংকার পথে হাটছে। ব্যর্থরাষ্ট্র হতে চলছে দেশ। আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আমাদের ঋণ দিতে চাচ্ছে না। কারণ, আমাদের রির্জাভের হিসেবে গরমিল আছে।
তিনি বলেন, এক বছর আগেও আমাদের ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিলো। রির্জাভ থেকে খরচ করার কারণে আমাদের রিজার্ভ এখন ২৭ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। আগামী বছর থেকে সুদ ও আসল হিসেবে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে ২২ বিলিয়ন ডলার। তাই, আগামী বছর থেকে দেশ মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। রির্জাভের টাকা খরচ করে বিমান বন্দরে প্রকল্প, পায়রা সমুদ্র বন্দর, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল এবং শ্রীলংকায় বিনিয়োগ করা হয়েছে। আসলে রির্জাভের টাকা লুটপাট করা হয়েছে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। দেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ অনাহারে ও অর্ধাহারে আছে। প্রতিদিন লাগামহীনভাবে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। কলকারখানা বন্ধ হয়ে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। অন্যদিকে মানুষের আয় বাড়েনি মোটেও। দেশের মানুষের কষ্ট দেখার যেনো কেউ নেই।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের দেশের মানুষের সাথে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিলো। আর সেই বৈষম্য থেকেই আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষের সাথে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকবে তাদের জন্য ব্যবসা, চাকরি এবং সকল সুযোগ সুবিধা। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কোন সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই, তারা সংসার চালাতে পারছে না। অপর দিকে দেশের একটি শ্রেণির এত টাকা, তাদের দেশে টাকা রাখার জায়গা নেই। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। যখন, মেগা প্রকল্পের নামে হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, তখন এক বছরেই শুধু সুইস ব্যাংকে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে।
এসময় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে হবে। উন্নয়ণের নামে গণতন্ত্র সংকুচিত করা যাবে না। আমরা উন্নয়ন চাই এবং গণতন্ত্রও চাই।
নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একটি নির্বাচনই আপনারা সুষ্ঠুভাবে করতে পারলেন না, তাহলে ৩০০ আসনে কিভাবে নির্বাচন করবেন? পুলিশ ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। ১৫ মাসের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, বিএনপির অভিযোগ, তাদের মহাসমাবেশে বাধা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, এটা দুঃখজনক এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থি। তিনি বলেন, দেশে বিএনপিই প্রথম মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। তিনি বলেন, ১৯৯১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির হামলায় জাতীয় পার্টি কোন সভা-সমাবেশ করতে পারেনি।
কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে দুর্নীতি ও দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, পাচার হওয়া হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি হচ্ছে দেশের রাজনীতির নিয়ামক শক্তি। জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না।
সম্মেলনে বক্তব্য জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, জহিরুল ইসলাম জহির, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা নূরুল ইসলাম তালুকদার, ইলিয়াস উদ্দিন, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান খান, আহসান আদেলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মীর সামসুল আলম লিটন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোখলেছুর রহমান বস্তু, ছাত্র নেতা আশরাফ খান ও কাজী খোকন খান।
এসএম/এএস