সরকার জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পার পাবে না: জি এম কাদের
যত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হোক সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচন কমিশন ভোটের বুথে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়, কিন্তু সেগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। আসলে সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের সদিচ্ছা নেই। সরকার জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকার পার পাবে না। তাই, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে দেশের ভবিষ্যত অন্ধকার।’
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানী কার্যালয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের জাতীয় পার্টিতে যোগদান উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, দেশে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো পরিবেশ নাই। সরকার সমর্থকরা জোর করে ভোট কেন্দ্র দখল করছে, বিরোধী পক্ষ নির্বাচনী এজেন্টদেরকে বের করে দিচ্ছে। জনগণকে সরাসরি নির্বাচনে ভোট দিতে দিচ্ছে না। এটা হলো বর্তমান বাস্তবতা।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখন নির্বাচন বর্জন করল তখন শুধু জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এমন বাস্তবতায় সরকার সমর্থকরা বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় জিততে জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের হুমকি ও হয়রানি শুরু করছে। এভাবেই সরকার সমর্থকরা জোর করে নির্বাচনে জিতছে।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘তৃণমূলের রাজনীতি গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে। শাসক শ্রেণি ও তাদের দল রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটাকেই বলা হয় একনায়কতন্ত্র। স্বৈরশাসন হলে জনগণের কথা মতো দেশ চলে না। এখন দেশের মানুষ স্বৈরশাসনে নিষ্পেষিত।
তিনি বলেন, ‘দেশের রাজনীতি কুক্ষিগত করা হয়েছে। আমরা এই পরিস্থতি থেকে উদ্ধার চাই। দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে জনগণের অধিকার থাকে না। জনগণের কাছে কারও জবাবদিহিতা থাকে না। এ কারণেই দুর্ণীতিতে ছেয়ে যায় দেশ। আর দুর্নীতি বেড়ে গেলে দেশে বৈষম্য সৃষ্টি হয়।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আর করোনার দোহাই দিয়ে অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হয়। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, গণতন্ত্রহীনতার কারণে দেশে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে একটি শ্রেণি দিনদিন আরও ধনী হচ্ছে। তারা বিদেশে সম্পদের পাহাড় সৃষ্টি করেছে। আর একটি শ্রেণি প্রতিদিন আরও গরিব হচ্ছে। তারা তিন বেলা ঠিকমত খেতে পারছে না। রিজার্ভ সংকট হয়েছে, টাকার অব মূল্যায়ন হচ্ছে। ডলারের দাম বেড়ে গেছে। ডলার যেখানে ৮০ টাকা ছিল এখন তাই ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
দেশে ডলার সংকট চলছে। ডলারের অভাবের জন্য আমাদের কোনো এলসি বিদেশ নিচ্ছে না। এই ডলার সংকটের কারণে এখন বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি তৈরি করেছে বিশ হাজার মেগাওয়াট। আমাদের দরকার মাত্র ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এখন উৎপাদন হচ্ছে নয় হাজার এর চেয়েও কম।
বিদ্যুতের বিভ্রাটের কারণে কৃষি কাজের জন্য মানুষ সেচ দিতে পারছে না এবং রিজার্ভের অভাবে বিদেশ থেকে সার কিনতে পারছে না। এই কারণে আগামী দিনগুলোতে ভয়াবহ রকমের খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘একজন শ্রদ্ধেয় এক অ্যাডভাইজার কিছুদিন আগে হাসি হাসি মুখে বললেন যে আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ, এখন বিদ্যুত দিতে পারছি না তেল কিনতে পারছি না, আমরা গ্যাস কিনতে পারছি না। আমার প্রশ্ন হলো কেন কিনতে পারছেন না। আপনাদের রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল?
তিনি বলেন, জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন বলেছে, পৃথিবীতে ৪৪টি দেশ খাদ্য সংকটে পড়বে। এশিয়ার ৯টি এবং দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী বলছেন, খারাপ দিন আসছে, তাই সবাই খাদ্য উৎপাদন করুন। এ কথাতো সবাই জানে, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন পরামর্শ দরকার হয় না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তেল কিনতে পারছে না সরকার? রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল?
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, দেশে রাজনীতির খড়া চলছে। আমরা রাজনীতির খড়া কাটাতে চাই। আমরা চাই দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। সাধারণ মানুষ যেনো দেশের মালিকানা ফিরে পায়। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। ভালো কাজ না করলে, যাতে দেশের মালিকরা ভোট দিয়ে নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে পারে। আমরা মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই।
এ সময়, জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি যে অত্যাচার করেছে জাতীয় পার্টির উপর এখন তারা ফিরে পাচ্ছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে পরিত্রাণ চায়।
তিনি বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদকে কিছু মানুষ ভুল বুঝিয়ে ঝামালে পাকাতে চায়। জাতীয় পার্টি জিএম কাদের এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। পার্টি থেকে দু’একজন চলে গেলে জাতীয় পার্টির কোন ক্ষতি হবে না।
এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না। জাতীয় পার্টি আরও বিকশিত হচ্ছে, দেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি এখন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। তাই জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি।
আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, আলমগীর সিকদার লোটন, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা জামাল হোসেন, হারুন অর রশীদ, মমতাজ উদিদন, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, হুমায়ুন খান প্রমুখ।
এসএম/এমএমএ/