দেশ দেউলিয়াত্বের দিকে যাচ্ছে: জিএম কাদের
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, কাল গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন। অথচ, সেখানে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা হামলা ও মিথ্যা মামলার কারণে ঘরে থাকতে পারছে না।
সরকার সমর্থকরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করে জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যে মামলা দিচ্ছে। গাইবান্ধায় হাজার-হাজার বহিরাগত সন্ত্রাসী ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। আবার প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসাররা সরকারী দলের আনুকূল্য পেতে ব্যস্ত হয়ে আছেন। আসলে, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশের মানুষ এখন আর নির্বাচনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘যারা ভোট করতে চায় তারাও জানে নির্বাচন করতে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয় না। নির্বাচন করতে ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয়। তাই, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলো জনসাধারণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একারনেই, সাধারণ মানুষও ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।’
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানী কার্যালয়ে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি) এর নির্বাহী সম্পাদক ও এফবিসিসিআই এর সদস্য মির্জা শাহাদাৎ হোসেন এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি) এর সাধারণ সম্পাদক (আন্তর্জাতিক বিশেষ প্রতিনিধি) গোলাম কিবরিয়া মোল্লা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় তাদের স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
তিনি বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন চলছে, নেত্রকোনায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জাতীয় পার্টি নেতা আসমা আশরাফ এর উপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে সরকার সমর্থকরা। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। আবার, পিরোজপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে সহায়তা করার কারণে তুশখালী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলামকে কিছু হয়রানিমূলক মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে এমন একটি মামলায় হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন সফিকুল ইসলাম। পথের মাঝে তাকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে তার একটি পা বিচ্ছিন্ন করেছে সরকার সমর্থকরা। সে এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
এ সময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের আরও বলেন, ‘দেশে বিরাজনীতিকরণ চলছে। এভাবে চলতে থাকলে, দেশে আর রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল থাকবে না। টবে সাজানো ফুলের বাগানের মতো কিছু দল থাকবে। যেমন, টবের ফুলে সৌরভ থাকে কিন্তু মাটির সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। ঠিক তেমনি, মানুষের সাথে সম্পর্ক থাকবে না, এমন দুর্বল কিছু রাজনৈতিক দল থাকবে। তাই, জবাবদিহিতাহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, দেশ দেউলিয়াত্বের দিকে যাচ্ছে। ৪ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ অসহনীয় কষ্ট ভোগ করছেন। ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্থলে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু, টাকার অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না সরকার। বিশ্ব বাজারে গ্যাসের দাম কমেছে, কিন্তু টাকার অভাবে তাও কিনতে পারছে না সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল বিদ্যুত ব্যবস্থা সেপ্টেম্বর থেকে স্বাভাবিক হবে, এখন তারা বলছেন নভেম্বরে স্বাভাবিক হবে। কেউ জানে না কখন থেকে বিদ্যুত ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তাই, দেশের মানুষ সরকারের কথায় আস্থা রাখতে পারছে না।’
এ প্রসঙ্গে, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, শ্রীলংকা দেউলিয়া হওয়ার আগে সে দেশে লোডশেডিং ছিল, ডলারের দাম বেড়েছিল, জ্বালানি তেল কিনতে পারেনি, আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছিল অস্বাভাবিক হারে। ঠিক একই চিত্র বাংলাদেশে। এখানেও ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমছে, ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না সরকার। বিদ্যুতের অভাবে শিল্প কলকারখানা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না, উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে, কাজ হারিয়ে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছে। টাকার দাম কমে যাওয়ার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আবার শ্রীলঙ্কার মতই মেগা প্রকল্পে লক্ষ-কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। একই সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।’
জিএম কাদের আরও বলেন, দেশের এমন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় মানুষ সীমাহীন কষ্টে আছেন। সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে, ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে। ১০ টাকা দামে চাল খাওয়াবে ঘোষণা দিয়েছিল, এখন চালের কেজি ৭০ টাকা। এমন দুঃসহ অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আনিস উল ইসলাম মণ্ডল, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো. বেলাল হোসেন, মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন খান, আবু জাফর মো. অলিউল্লাহ চৌধুরী মাসুদ, মাখন সরকার, দফতর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হক নুরু, দ্বীন ইসলাম শেখ, কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ আজাদ খুররুম ভূঁইয়া, ঝুটন দত্ত, ওহিদুজ্জামান মোহন, মোখলেছুর রহমান বস্তু, আনোয়ার হোসেন শান্ত, ওমর খান মান্নান, জাকির হোসেন খান, ইলোরা ইয়াসমিন, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, রাকিন আহমেদ, নাজমিন সুলতানা তুলি, আব্দুস সালাম লিটন, বজলুর রহমান মৃধা প্রমুখ।
এসএম/এমএমএ/