বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে: পীর চরমোনাই
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মুহরাতাম আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে। এ দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি বলেন, ‘নীতি ও আদর্শের ক্ষেত্রে অটল থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিগত ৩৫ বছর ধরে রাজনীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে যারা রাজনীতি করেছে তারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও ঐক্য-সংহতি প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করে নাই, এ কারণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে।’
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) চরমোনাইর বার্ষিক মাহফিল আয়োজিত জাতীয় ওলামা ও সুধী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, দেশের চলমান অস্থিরতা নিরসনের একমাত্র পথ হলো ইসলামকে বিজয়ী করা। সুতরাং সকল ইসলামী দলের সমন্বয়ে মজবুত ইসলামী প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।’
রেজাউল করীম বলেন, চরমোনাই মাহফিলের মঞ্চ হক্কানী ওলামাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ওলামাদের সহযোগিতা থাকলে কোন ষড়যন্ত্র এই কাফেলা ধ্বংস করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ওলামায়ে কেরাম যে যে পস্নাটফর্মে থেকে ভালো কাজ করছে আমাদের সকলের উচিত সে ভালো কাজের প্রশংসা করা। ওলামায়ে কেরামের চোখ কান খোলা না থাকলে উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং ওলামাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। বর্তমান সরকারের উপর সওয়ার হয়ে একদল নাস্তিক সিলেবাসের মাধ্যমে জাতিকে নাস্তিক বানানোর পায়তারা করছে।
ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ হলে এধরনের যেকোনো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, আমরা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বদলীয় জাতীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারলেই কেবল আমরা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শায়খ জাকারিয়া রহ. ইসলামী রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, অতীতের ওলামাদের মিমাংশিত বিষয় যেমন-আক্বিদা, আমল ও রাজনীতির বিষয়ে নতুন কিছু মানা যাবে না। চরমোনাই বুজুর্গরা যেভাবে চলছেন এই ভাবে কাজ চলতে থাকলে এক সময় ঐক্য হয়ে যাবে ইনশাআলস্নাহ।
ঢাকা নগরের পীর মাওলানা জাফর আহমদ বলেন, ঐক্য করতে হবে কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে। শরীয়তের সঙ্গে ঐক্য না হলে কাজ হবে না।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আলেম ওলামাদের কাজ শুধু মসজিদে মাদরাসায় নয়, দেশের কোন সেক্টর কোথায় কীভাবে চলবে তার নির্দেশ দেওয়া ও দেখা শোনা করা তাদের দায়িত্ব। গত ৫০ বছরে শোষক ও শোষিত বলে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আমি বলেছিলাম ৭১ এ জামায়াত জালিম ও মজলুমের লড়াইয়ে জালিমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এজন্য জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমা চাইতে হবে।
ওলামা সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আক্কাস আলী সরকার, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. বেলাল নুর আজিজী, খুলনা দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাও. মোশতাক আহমেদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব জোবায়ের আহমেদ, মুফতি মুহিবুল্লাাহ, বিশিষ্ট আলেম মাও. ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ এর সিনিয়র শিক্ষক আল্লামা শাহ আলম, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. ফারুখ আহমেদ, মুফতি হাফিজুর রহমান গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি গোলামুর রহমান, হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতী মাও. জোনায়েদ বিন জালাল, মাও. ইসমাইল মাদানী, মাও. আকরাম হোসেন, অধ্যক্ষ হাফেজ মাও. শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাও. ইমতিয়াজ আলম, মাও. আশিকুল্লাহ, শায়খুল হাদিস মুফতি আজিজুল হক, মাও. হোসাইন আহমেদ, জাতীয় দ্বীনি শিক্ষা বোর্ডের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি তাজুল ইসলাম, মুফতি মজিবুর রহমান, মাও. ইকবাল সিরাজী, মুফতি ওমর ফারুক, মাও. আনোয়ার বিন মুসলিম, মুফতি লিয়াকত আলী, মাও. আবদুর রাজ্জাক কাসেমী, মাও. হারুনুর রশিদ কাসেমী, মুফতি রেজওয়ান রফিকী, মুফতি রেজাউল করীম আবরার, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, শ্রমিক আন্দোলন সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা খলিলুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন ওমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাও. মীর আহমদ মিরু, কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুল বাতেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মাওলানা বজলুর রহমান খান, ফেনী ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মুফতী ইউসুফ কাসেমী এবং ছাত্র নেতা শরিফুল ইসলাম রিয়াদ।
এদিকে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ৮.৩০টায় হযরত পীর চরমোনাই'র আখেরি বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। চরমোনাই মাহফিলে আসা মুসল্লিদের মধ্যে মোট ৪ জন মৃত্যুবরণ করেন বলে চরমোনাই মাহফিল হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। তাদের নামাজে জানাজা শেষে মরদেহ স্বজনদের নিকট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এমএইচ/এমএমএ/