অবশেষে সব মামলা থেকে পরিত্রাণ পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পাওয়ার মধ্য দিয়ে ৩৭টি মামলার সব ক’টি থেকে রেহাই পেলেন তিনি।
গত ১৮ বছর ধরে প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলার জালে বন্দি করে রাখা হয়েছিল বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। সেনা নিয়ন্ত্রিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে ১৩টি প্রশ্নবিদ্ধ মামলা করে। খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অতঃপর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসার পরে গত দেড় দশকে আরো ২৪টি মামলা করে। মোট ৩৭ মামলা চলমান ছিল। এই মামলাগুলোর কোনোটিরই বিশ্বাসযোগ্যতা সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি শেখ হাসিনার আইনজীবীরা।
অবশেষে সর্বশেষ গতকাল বুধবার নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পাওয়ার মধ্য দিয়ে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলার সবকটি থেকে তিনি মুক্তি পেলেন। তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা অবশিষ্ট নেই। তিনি এখন মামলা মুক্ত একজন মানুষ।
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আমলে দায়ের হওয়া ৩৭টি মামলা চলমান ছিল। গত বছর ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর একে একে এসব মামলা নিষ্পত্তি হতে থাকে। নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে খালাসের মাধ্যমে সবগুলো মামলা থেকে রেহাই পেলেন খালেদা জিয়া। তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা চলমান নেই।
গত ১৫ জানুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া, তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ চার জনকে বেকসুর খালাস দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিলেও গত বছরের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট তাকে খালাস দেয়।
এর আগে তিনি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। ২০০৭ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে বুধবার খালেদা জিয়াসহ আট জনকে খালাস দেয় ঢাকার আদালত।
গত বছর ৩০ অক্টোবর রাজধানীর দারুস সালাম থানার ৬টি ও যাত্রাবাড়ী থানার ৩ মামলায় খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট। এর আগে কুমিল্লার নাশকতার এক মামলায় গত ২২ জানুয়ারি আদালত তাকে অব্যাহতি দেয়। গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন আদালতে থাকা পাঁচটি মামলায় খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলার কার্যক্রম গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট বাতিল করে দেয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে থাকা কয়েকটি মামলা থেকেও খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বিভিন্ন তারিখে।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আট আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক রবিউল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় বিচারক রবিউল আলম তার পর্যবেক্ষণে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে হয়রানি করার জন্য নাইকো মামলায় জড়ানো হয়েছে।
খালেদা জিয়া বর্তমানে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন। খালেদা জিয়া ২০০১-২০০৬ মেয়াদে যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সে সময় দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় এ মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
খালাস পাওয়া বাকি সাত জন হলেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দি আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্র্যাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।