'সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির বর্তমানে বিএনপির কেউ নন'
ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
নওগাঁ-৬ (রাণীনগর ও আত্রাই) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে নওগাঁ জেলা বিএনপি। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নওগাঁ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু। লিখিত বক্তব্যে আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরের অপরাজনীতি, অত্যাচার, নির্যাতন, খুন-গুম ও দুর্নীতির অবসানের পর দেশ যখন নতুন করে মুক্ত হয়েছে। ঠিক তখনই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বিরুদ্ধে নতুন করে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর জেলার অন্যান্য এলাকার মতো রাণীনগর ও আত্রাই এলাকায় বিএনপির লোকজন অত্যন্ত সচেতন অবস্থায় আছেন। তাঁদের দ্বারা কোনো প্রকার অপকর্ম, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বা চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা সংঘটিত হয়নি। অথচ আত্রাই-রাণীনগরের এলাকার শান্তিপ্রিয় এই পরিবেশ নষ্ট করার জন্য সাবেক এমপি আলমগীর কবির উঠে-পড়ে লেগেছেন।
আলমগীর কবির দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন উল্লেখ করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বলেন, আলমগীর কবির বর্তমানে বিএনপির কেউ নন। এমনকি বিএনপিতে তাঁর প্রাথমিক সদস্য পদও নেই। অথচ তিনি আত্রাই-রাণীনগর এলাকায় সুকৌশলে বিএনপির নাম ব্যবহার করে সমাবেশ ডেকে বিএনপি, জিয়া পরিবার এবং বিএনপির দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের বিপক্ষে মিথ্যাচার ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করে জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলছেন। এতে যেকোনো সময় এলাকায় বড় ধরনের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। এমন ঘটনা ঘটলে সকল দায়-দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে। এই জন্য দলের পক্ষ থেকে ওই এলাকার বিএনপির দলীয় লোকজনকে আলমগীর কবিরসহ সকল সুযোগ সন্ধানীদের উস্কানিমূলক বক্তব্য ও জনসভা থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হচ্ছে।
আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপির আন্দোলনে সংগ্রামের সাথে আলমগীর কবির বা তার পরিবারের কারও কোনো সম্পর্ক ছিল না। এমনকি বিএনপি কর্মীদের নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা, খুন- গুম হওয়া কোনো নেতাকর্মীদের বা তাদের পরিবারের সাথে কোনো প্রকার সহযোগিতা বা খোঁজখবর নেন নাই। ফলে তাঁর বা তাঁর পরিবারের কারো বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কোনো মামলা হয়নি। বরং বিগত সংসদ নির্বাচনে তাঁর নিকট আত্মীয় আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুককে নওগাঁ-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে এবং আর্থিক সহযোগিতা করে সংসদ সদস্য বানিয়ে তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। ১/১১ সময় বিএনপি ত্যাগ করে এলডিপিতে যোগ দিয়ে তিনি বিএনপির সঙ্গে বেঈমানী করে অত্র এলাকায় বেঈমান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আবারও তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক শেখ রেজাউল ইসলাম ও শফিউল আজম রানা, রাণীনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে তোলা অভিযোগের বিষয়ে আলমগীর কবিরের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
বহুল আলোচিত বাংলা ভাইয়ের দুর্গ বলে পরিচিত আত্রাই ও রানীনগর উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৬ আসন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আলমগীর কবির গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তখন এলাকায় বাংলা ভাইয়ের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষের দিকে আলমগীর কবির বিএনপি ত্যাগ করে এলডিপিতে যোগ দেন। তবে অতীতের বিতর্কিত ভূমিকার পরেও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলমগীর কবিরকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আলমগীর কবিরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় সেই সময় আত্রাই ও রাণীনগর বিএনপির একাংশ তাঁকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন।