‘ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নতুন ৪৫টি মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে, এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে ১৭০৬ জনকে, অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৪৫১৭ জনকে। সারাদেশে ৬ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন ১৫ জন।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তথাকথিত শান্তি সমাবেশের নামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শান্তি কমিটির মতো অশান্তি সৃষ্টি করে ভীতিকর পরিস্থিতির মাধ্যমে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হলেও ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার মিছিল থেমে নেই। যেখানে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে, সেখানেও গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি দিনে কর্মসূচি পালিত হলেও গভীর রাতে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে পুলিশ ভাঙ্গাড়ি দোকান থেকে অচল মোটরসাইকেল নিয়ে তা পুড়িয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক বলেন, পুরনো মামলায় অজ্ঞাত আসামি দেখিয়েও গ্রেপ্তার ও হয়রানি সারাদেশে অব্যাহত গতিতে চলছে। শুধু গ্রেপ্তারই নয়, সিরাজগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশের ছত্রছায়ায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ গ্রাম-গঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের তালিকা নিয়ে থানায় হাজির হয়ে পুলিশের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার জন্য। আসলে আওয়ামী লীগ ও সরকার ইউনিয়ন পদযাত্রায় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী এবং সাধারণ জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রী-নেতারা ইউনিয়ন পদযাত্রা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছে, বাধা-বিঘ্ন ও হামলা-মামলা উপেক্ষা করে ইউনিয়ন পদযাত্রার ব্যাপক সাফল্যে তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দমন-পীড়ণ শুরু করেছে। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ১০ দফার আন্দোলন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে, দমন-নিপীড়ণ-ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে এই আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না। অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর পতন অত্যাসন্ন বলেই তারা চোখে সর্ষে ফুল দেখছে।
এমরান সালেহ বলেন, আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতারা বলছেন—বিএনপি নাকি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। আওয়ামী নেতাদের উদ্দেশে বলতে চাই— বিএনপি তো গণবিরোধী অবৈধ সরকারের পতনের জন্য প্রশস্ত রাজপথেই আন্দোলন করছে। ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মাধ্যমে রাজোচিত জীবন নির্বাহ যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্যই আওয়ামী নেতা-মন্ত্রীরা নিশিরাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আছে। ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস ও প্রশাসনকে কবজায় নিয়ে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে দুঃসহ জীবন-যাপনে বাধ্য করে অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রেখেছে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এখন দুর্নীতির জয়জয়কার, রাজরোষে বিরোধী মত ও ব্যক্তিরা কারাগারে, নারকীয় উল্লাসে চলছে গুম-খুন-ক্রসফায়ার, ক্ষমতাসীনদের আশকারায় পৈশাচিক আনন্দে নারী-শিশু নির্যাতনের হিড়িক চলছে, বিচার বিভাগকে করা হয়েছে সরকারের হাতের খেলনা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধুমাত্র সরকার ও সরকারপ্রধানের নিজস্ব বরকন্দজে পরিণত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন জনগণের কাছে ভয়াবহ আতঙ্কের নাম।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এখন জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ যেকোনো কর্মসূচিতে হামলা চালানো হচ্ছে, দেশব্যাপী বেপরোয়া গণগ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে।
এমএইচ/আরএ/