‘নিরপেক্ষ নির্বাচনে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ ও সরকারপ্রধান’
সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি করে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি বানচালের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ বিএনপির। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, দুর্নীতি, লুটপাট, জনদুর্ভোগের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা গণআন্দোলন নসাৎ করতে ব্যর্থ হয়ে অযোগ্য সরকার দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি করে কর্মসূচি বানচালের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। আমরা আওয়ামী লীগের প্রতি দেশ, গণতন্ত্র ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপির কর্মসূচির দিনে উসকানিমূলক পাল্টা কর্মসূচি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ আওয়ামী সরকারকে বয়কট করেছে। সরকারের অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বিএনপির কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগে রাজপথে নেমে এসেছে। তাই সরকার নিজেদের অপশক্তি প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা নেতা-কর্মীদের উপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে নেতা-কর্মীদের।
এমরান সালেহ বলেন, জনবিচ্ছিন্ন সরকার এতটাই নির্লজ্জ যে, চুরি-জালিয়াতি, সাজানো, পাতানো উপনির্বাচনের নামে প্রহসন ও নাটক মঞ্চস্থ করে সংসদে দাঁড়িয়ে সেই প্রহসনের উপনির্বাচনকে সার্টিফিকেট দিয়ে বলছে, এই উপনির্বাচনের মাধ্যমে নাকি প্রমাণ হয়েছে, আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এবার নাকি আর কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা উত্থাপন করার সুযোগ পাবে না। অথচ উপনির্বাচনের নামে কী হয়েছে তা জনগণ জানে। শত চেষ্টা করেও ভোটচুরির কালিমা আওয়ামী লীগ সরকার মুছতে পারবে না। কারণ অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে আওয়ামী লীগ ও সরকারপ্রধান একমাত্র বাধা। সে কারণেই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
বিএনপির চলমান কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণআন্দোলনের যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্যাস-বিদুৎ, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, সার, ডিজেলসহ কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে সরকার সারা-দেশে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। ক্ষমতাসীন দল নির্লজ্জের মতো পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সংঘাত সৃষ্টিতে উসকানি দিচ্ছে।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে পদযাত্রার কর্মসূচি পূর্ব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১৫ হাজারেরও অধিক মানুষের মৃত্যু এবং লাখ লাখ মানুষের হতাহতের ঘটনায় শোক, সহানূভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করে আজকের পদযাত্রা কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করে আজ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। এ ছাড়া ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়নে পদযাত্রা এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর উত্তরের পদযাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে অন্যায়ভাবে বাধাগ্রস্ত না করার আহ্বান জানিয়ে এবং ১১ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রাসহ সব কর্মসূচিতে সার্বিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা করার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের হীন এই কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে এবং সরকারকে এসব হীন ষড়যন্ত্র পরিত্যাগ করে সুস্থ ও সুষ্ঠু রাজনীতির ধারায় ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। কারণ মামলা, হামলা, গুম, খুন, গণগ্রেপ্তার ও নেতা-কর্মীদের হয়রানি করে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সরকারের সৃষ্ট জনদুর্ভোগ, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন বিভ্রান্ত বা নস্যাৎ করতে পারবে না। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, দমন-নিপীড়ন চালিয়ে উসকানি দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করে জনগণের আন্দোলন নস্যাৎ করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগ এতটাই জনবিচ্ছিন্ন, দুর্বল এবং ভীত যে তৃণমূলে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া মাত্রই তাদের হৃদকম্পন বেড়ে গেছে, তারা নার্ভাসনেসে ভুগছে। জনসম্পৃক্ত এই আন্দোলন সব বাধা-বিঘ্ন উপেক্ষা করে যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে।
এসময় সরকারের দমন-নিপীড়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে সারা দেশে গ্রেপ্তার, হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
এমএইচ/এসজি