৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ
এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে বৃহত্তর আন্দোলনের কথা ভাবছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির নেতারা। ধীরে চলো নীতি নিয়ে নিজেদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে নানা কৌশলে সামনে এগুতে চায় বিএনপি।
সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ইতোপূর্বে একাধিকবার দাবি আদায়ের আন্দোলনে ব্যর্থ হয় দলটি। তাই এবার নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি ভেবে এখনই সরকারবিরোধী ‘অলআউট’ কর্মসূচিতে যেতে চাচ্ছে যাচ্ছে না বিএনপির হাইকমান্ড। দ্রুত সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক শক্তি আরও বৃদ্ধি করে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে যেতে প্রস্তুতি জোরদার করতে মাঠে নেমেছে দলটির নেতারা। শুরুতে তৃণমূল পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত করে পর্যায়ক্রমে আন্দোলনে নামার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি এখন ধাপে ধাপে আন্দোলনকে গতিশীল করে চূড়ান্ত রূপদানে ছক কষছে। তবে চূড়ান্ত এই আন্দোলন কীভাবে, কবে থেকে শুরু হবে সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে পারেনি বিএনপি হাইকমান্ড। বিএনপি নেতারা মনে করছে, গণঅভ্যুত্থান ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের পতন সম্ভব হবে না। তাই অপেক্ষাকৃত ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে কিছুটা প্রাধান্য দিয়েই মূলত বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের একটা পটভূমি তৈরি করতে চাচ্ছে।
সেক্ষেত্রে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগীয় সদরে একই দিনে সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য এই সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গেও একাধিকবার বৈঠক করেছেন দলের নেতারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার পতনের তারা এক দফা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিনে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে। আগামীকাল গণফোরাম (মন্টু) ও পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করবে।
এদিকে গত চার দিনে ঢাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এই কর্মসূচি থেকে ঢাকা মহানগর(উত্তর-দক্ষিণ) বিএনপি ঢাকাবাসীকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি দেখে অনেকটাই উজ্জীবিত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
৪ ফেব্রুয়ারির সমাবেশ সফল করতে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। লক্ষ্য সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষের আস্থা ও সমর্থন আদায় করা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘কোনো আন্দোলন একদিনে সফল হয় না। আন্দোলনের চূড়ান্ত ক্ষেত্র তৈরিতে কিছুটা সময় নিয়েই কৌশল প্রণয়নের প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করতে ঐক্যেবদ্ধ আন্দোলনে নামতে হবে। চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়ে এবার আন্দোলনের নতুন ছক সাজাতে হবে। রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্কও আরও জোরদার করতে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কারণ চলমান আন্দোলন ব্যর্থ হলে শুধু বিএনপি নয়, সমগ্র দেশবাসীকেই মাশুল দিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার পতনের ১০ দফা দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই থাকবে বিএনপি। আপাতত কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। ধারাবাহিক কর্মসূচিতেই আন্দোলনের গতি বাড়ানো হবে। তাছাড়া আন্দোলন তো আর বলে কয়ে হয় না। আন্দোলনেই আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয় যে, সে কোনো পথে অগ্রসর হতে চায়, হবে। সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের চরম ক্ষোভকে কাজে লাগাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
এদিকে ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ডাকা বিভাগীয় সমাবেশকে সমর্থন জানিয়েছে সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও। যুগপৎ আন্দোলনে শরীক হওয়া রাজনৈতিক দলগুলো একইদিন সমাবেশ করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। যদিও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ঢাকা পদযাত্রার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে নেতা-কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের রিহার্সেল। ৪ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেবে বিএনপি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমরা একটি অগণতান্ত্রিক ও অনির্বাচিত সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি সকল রাজবন্দির মুক্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোর দাবিতে জনমুখী কর্মসূচি দিচ্ছি। আমাদের এবারের আন্দোলন অসহিংস। অথচ সরকার আমাদের বিভাগীয় কর্মসূচিগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে গণতন্ত্র-ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলন করছি। অতীতের কোনো আন্দোলন বিফলে যায়নি। আন্দোলনের ইতিহাস তাই বলে এই দেশের জনগণ ‘ছাড় দেয় তবে ছেড়ে দেয় না’। আন্দোলনের মাধ্যমেই এই অনির্বাচিত সরকারকে বিদায় করা হবে। ধারাবাহিকভাবে নতুন কর্মসূচিতে মাঠে নেমে ধীরে ধীরে আন্দোলন বেগমান করা হবে। সরকার কোনো ধরনের সহিংসতার পথ বেছে নিলে তার দায় এই সরকারকেই নিতে হবে।
এনএইচবি/আরএ/