বিদায়ের প্রস্তুতি নিন, সরকারকে মোশাররফ
আর বেশি সময় নাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা এই সরকারকে বিদায় করতে সক্ষম হব এমনটা দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। আর অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতারা ও সরকার ভয়ে ভীত হয়ে পদযাত্রা কর্মসূচিকে নানা নামে সমালোচনা করছেন। আমাদের বক্তব্যে হলো-কোনো প্রকার হুংকার দিয়ে ভয় ভীতি দেখিয়ে লাভ হবে না।’
আপনাদের সময় শেষ, বিদায়ের প্রস্তুতি নিন। আপনাদের বিদায়ে আগাম শোভাযাত্রা হচ্ছে বিএনপির এই পদযাত্রা কর্মসূচি। কারণ আগামীর বাংলাদেশ হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে।’
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পদযাত্রা পূর্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মোশাররফ হোসেন।
পদযাত্রা উদ্বোধন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি এই পদযাত্রার আয়োজন করেছে।
মোশাররফ হোসেন, ‘বিএনপি যখনেই কর্মসূচি পালনে ঘোষণা দেয়; তখনেই যারা গায়ের জোড়ে ক্ষমতায় আছে, আন্তর্জাতিকভাবে হাইব্রিড সরকার তারা বলে বেড়ায় আমরা নাকি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করি। আমাদের স্পষ্ট কথা-ইতিপূর্বে আমরা ১০ বিভাগীয় গণ সমাবেশ করেছি। আপনারা বিভিন্ন ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।’
তারপরও এই দেশের জনগণ প্রতিটি গণ সমাবেশ সফল করেছে। সেই গণ সমাবেশে কোনো বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়নি। ঢাকাতেও আমরা গণ অবস্থান, গণ মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি কিন্তু কোথাও কি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়েছে? হয়নি। আসল কথা হলো-আপনাদের সময় শেষ, পায়ের নিচে মাটি নাই।
যতই হুংকার দেন না কেন; জনগণ আওয়াজ তুলেছে তারা এই সরকারকে দেখতে চায় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আপনারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। শুধুমাত্র সংসদ নয় স্থানীয় নির্বাচনেরও কেউ এখন নিজের ভোট দিতে পারে না। তাই এই সরকারের বিদায় যতদ্রুত সম্ভব ততই দেশ ও দেশের জনগণের জন্য মঙ্গল হবে।
তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। অনিয়ম ও দর্নীতির মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। সকল ব্যাংককে তারল্য সংকট।’
তারপর চাপাবাজি করে বলছে অর্থনীতি নাকি সবদিকে ভালো। প্রশ্ন হচ্ছে দেশের অর্থনীতি যদি এতেই ভালো তাহলে গণশুনানি উপেক্ষা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ বিদ্যুৎ গ্যাস পানির দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে কেন? বৃদ্ধি করা হচ্ছে কারণ এই সব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতাদের সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট মূলত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা লুট করে নিতেই আবারও বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। জনগণের মাথায় অর্থনৈতিক চাপ পড়েছে, যোগ করেন তিনি।
বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, ‘এই সরকার গণতন্ত্র ও অর্থনীতি লুটকারী। আজকে বিচারকরা স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারে না। বানোয়াট মামলায় শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। মামলা দিয়ে বিদেশে থাকতে বাধ্য করছে। সরকার ভেবেছিল অত্যাচার নির্যাতন করে বিএনপিকে ঘরে বসিয়ে দেবে। কিন্তু বিএনপি তো ঘরে বসে যায় নাই বরং এই সরকারকে বিদায় করতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। জনগণকে ঐক্যেবদ্ধ করে ইস্পাত কঠিন ঐক্যে গড়ে তুলে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। কারণ এই সরকার অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই অনির্বাচিত সরকারের পতনের বিকল্প নাই। সেজন্য চলমান আন্দোলনকে আরও বেগমান করতে হবে। বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। সেই হত্যার কবরস্থানের উপর বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো গণতন্ত্র জবাই করে আজকে যারা ক্ষমতায় আছে। তারা স্বৈরশাসক এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর বলেছিল আই এম নটা আনহ্যাপি আর ১/১১ সরকারকে বলেছিল তাদের আন্দোলনের ফসল। প্রমাণিত বার বার আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র জবাই করে কিংবা যারা জবাই করে তাদের সহযোগিতা করেছে। আর বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আগামীতেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে।’
আওয়ামী লীগ ও সরকারকে উদ্দেশ্য করে আমান উল্লাহ আমান বলেন, জনগণের চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুক। আপনাদের মঞ্চ ভেঙে। এই মঞ্চ আর জোড়া নেবে না। যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয়; তাহলে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। অন্যথায় জনগণ ৯০ এর মতো গণঅভূত্থান সৃষ্টি করে আপনাদের বিদায় করা হবে।
পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ থাকুন। আপনাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। আপনারা আওয়ামী লীগ ও এই অনির্বাচিত সরকারের অন্যায় আদেশ নির্দেশ পালন করা থেকে বিরত থাকুন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন এই দেশে হতে দেওয়া হবে না।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে আমান উল্লাহ বলেন, যত বোঝানোর চেষ্টা করুন, কোনো কাজ হবে না। গোপন আর গোপন থাকবে না। বিদায় নিতে হবে, বাংলাদেশে নির্বাচন হবে, জনগণ ভোট দেবে খালেদা জিয়ার সরকার হবে।
এমএইচ/এমএমএ/