অনেক হয়েছে ‘বিদায় হও’, সরকারকে ফখরুল
শুধুমাত্র সভা করে, কথা বলে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ সরকারের হাত থেকে রক্ষা পাব না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে।’
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদের আয়োজিত ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের অধিকার আপনারা কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের দুইবার ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। আমার জনগণের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। মানুষের পকেট কেটে আপনি বড়লোক হচ্ছেন। আর সেই টাকা বিদেশে পাচার করছেন।’
তিনি বলেন, ‘মূল কথা হচ্ছে অনেক হয়েছে এবার বিদায় হও। জনগণের রক্ত শোষণ করে খেয়েছ এবার বিদায় হও। পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে সংসদকে বিলুপ্ত করুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যেই তত্ত্ববোধক সরকার নতুন কমিশন গঠন করবে, সেই নির্বাচনের জনগণ তাদের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি স্বাধীনচেতা। বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি দেশপ্রেমিক। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে তারা যুদ্ধ শুরু করে ছিল। পরবর্তীকালে ৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের হাত থেকে গণতন্ত্র রক্ষা করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।’
আজকে আবার ফ্যাসিবাদকে হটানোর জন্য সামগ্রিক লড়াই শুরু হয়েছে। এই লড়াই শুধু বিএনপি’র লড়াই নয়, এটা বিরোধী দলের নয়, এটা জনগণের লড়াই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের জনগণের সমস্ত অধিকারকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্বাধীন দেশের নাগরিকত্ব থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
পদযাত্রা নয়, মরণযাত্রা শুরু হয়েছে বিএনপির' আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, অদ্ভুত, এ ধরনের কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এগুলো জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা গণতন্ত্র হারিয়ে ফেলেছি। গণতন্ত্রকে ফিরে পেতে আমরা দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে লড়াই করছি। আসলে গণতন্ত্র শুধুমাত্র একদিনের নির্বাচন তা নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্রের সামগ্রিক একটা সিস্টেম। একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক যে ব্যবস্থা এবং সেটা রাষ্ট্রের জনগণের কাজে লাগানোর জন্য; জনগণের কথা বলার স্বাধীনতা সামগ্রিকভাবে বৃহত্তর জনগোষ্টির মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে। সবচেয়ে বৃহত্তর অংশের মানুষ যা বলবে সেভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা চলবে।’
দুর্ভাগ্যক্রমে ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, যে স্বপ্ন আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলাম। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা দেখেছি স্বাধীনতার পরপরেই আসজের যে আওয়ামী লীগ তারা সেদিন ক্ষমতায় ছিল। তারা দাবি করে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তারও পূর্বে স্বাধিকার আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৭১ সালের পূর্বে এবং ৭১ পরবর্তী ছিল ভিন্ন। আমরা দেখেছি গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ে যারা লড়াই সংগ্রাম করছেন পরবর্তীকালে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে ক্ষমতা ধরে রাখতে জনগণের অধিকারগুলোকে হরণ করে জনগণকে বঞ্চিত করে তারা নিজেদের কর্তৃত্ব এবং শাসনকার্যকে পাকাপোক্ত করতে সব কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘অনেকে আছেন যারা এখনো বলেন আওয়ামী লীগেই হচ্ছে মোটামুটি একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এটা বলার কোনো অবকাশ নাই, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ৫০-৫১ বছরে প্রমাণ করেছে তারা কোনো দিন কনো মতেই গণতান্ত্রিক দল নয়। ১৯৭১ সালের পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল এবং তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যে একে একে বিরোধীদল কে দমন করেছে, নির্যাতন করেছে, বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার পর তারা নতুন বাহিনী তৈরি করেছিল রক্ষীবাহিনী। আর যুদ্ধের সময় বিরোধী দল ও মতকে দমন করতে তৈরি করেছিল মুজিব বাহিনী। এখন আওয়ামী লীগ আবরও রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে বিরোধীদল মত দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। ইতিমধ্যে আমাদের ৬ শত নেতা০কর্মীকে গুম করেছে। এখন পর্যন্ত তাদের চিহৃ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না।’
হাজারের উপর নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। বিরোধী দলের ৪০ লক্ষ নেতা-কর্মী বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। কোথাও কিছু ঘটেনি আওয়ামী লীগ নিজেরাই ঘটনা ঘটিয়ে গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। আজকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে আওয়ামী লীগের অত্যাচার নির্যাতন, যোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র কখনো এক সঙ্গে যায় না। আওয়ামী লীগের দুটি জিনিস আছে। একটি হচ্ছে সন্ত্রাস তারা ভয় দেখিয়ে সবকিছু করে নিতে চায়।আরেকটি হচ্ছে সুযোগ পেলেই লুট করা। যাকে আমরা বলি লুণ্ঠন। এ দুটো তাদের মজ্জাগত।
৭১ সাল আর এখনকার সময় এক নয় দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৯০ এর সময়ের সঙ্গেও এখনকার সময় এক নয়। তখনকার ফ্যাসিবাদী সরকারের চেহারা আর এখনকার ফ্যাসীবাদী সরকারের চেহারাও এক নয়।
এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারার চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বেপারি, সাম্যবাদি দলের চেয়ারম্যান কমরেড নুরুল ইসলাম, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, মাইনরিটি পার্টির চেয়ারম্যান সুকৃতি মন্ডল, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী, এনপিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য বেলাল হোসেন, নবী চৌধুরী, মো. ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
এমএইচ/এমএমএ/