বিজয় অর্জন না করে ঘরে ফিরব না: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখন গণতন্ত্র উধাও হয়ে যায়। ৭৫'র আগেও গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল, জিয়াউর রহমান এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিজয় কি-বোর্ড মোবাইলে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, কারণ এর মালিক মোস্তফা জব্বার একজন মন্ত্রী। একজন মন্ত্রীর কোম্পানি সরকারের লাভজনক প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়া এটা ভয়ংকর দুর্নীতি। পত্রিকায় দেখলাম লন্ডনে বাংলাদেশিরাই বেশি বাড়ি কিনছে। এরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের সুবিধাভোগী, লুটেরা। যাদের চপ্পল ছিল না পায়ে তারা এখন রোডমাস্টার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরেছে, তারাই আবারও ক্ষমতায় যেতে চায়। মানুষ জেগে উঠেছে। আমরা দেখেছি মানুষ এই সরকারের পতন দেখতে চায়। আমাদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের রক্ত-অশ্রু বৃথা যাবে না। জেল-জুলুম উপেক্ষা করে বিজয় অর্জন না করে ঘরে ফিরব না।
রাজধানীর শাহীনবাগে বিএনপি কর্মী সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসার সামনে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ঘিরে আলোচনায় আসা 'মায়ের কান্না' সংগঠন দিয়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নতুন করে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'মায়ের কান্না' এরা কারা? ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনীতে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় সামরিক আদালতে বিচার হওয়ার ঘটনা। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল কোথায় ছিলেন এতদিন? সশস্ত্র বাহিনীতে বিদ্রোহ হলে সামরিক আদালতে বিচার হওয়া এটা স্বাভাবিক। জিয়াউর রহমানকে ভিলেন বানানোর জন্য এখন এসব কথা বলে লাভ হবে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের মূল ইতিহাস বিকৃত করছে। গণতন্ত্র ও অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। আজকে দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা। গত ১২ বছরে আমাদের ৬০০ জন গুম করেছে, লক্ষাধিক মামলায় ৩৭ লাখের অধিক নেতা-কর্মী আসামি।
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি। যারা আমাদের আন্দোলনে ভয় পেয়েছে তাদের দলের নেতারা এমনকি গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য না।' অথচ আওয়ামী লীগ শুধু চাপাবাজি করতে চায়। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আর বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা দশ দফা দিয়েছি। সেখানে প্রথম দফাতে এই সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলা আছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির জনস্রোত ঠেকানো যাচ্ছে না। বিএনপির জোয়ার থামবে না, থামানো যাবে না। বিএনপির সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।' আমরা কখনো বলিনি যে আমরা নির্বাচনে যাব না। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি আওয়ামী লীগের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে তারপর নির্বাচনে যাব।
তিনি আরও বলেন, আমরা কখনো বলিনি যে টুকা দিয়ে, ধাক্কা দিয়ে সরকারের পতন ঘটাব, আমরা বলেছি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাব।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন এ্যানির সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন, শাহাজাহান ওমর, আহমেদ আজম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
এমএইচ/এসজি