পাল্টা কর্মসূচি না দিতে আওয়ামী লীগের প্রতি মির্জা ফখরুলের আহ্বান
বিএনপি ও বিরোধী দলের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি পালন, বাধা প্রদান এবং একই দিনে একই সময় কোনো কর্মসূচি প্রদান না করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্যথায় উদ্ভুত পরিস্থিতির সব দায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই বহন করতে হবে।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনকে দমন করার জন্য অনির্বাচিত সরকার ও আওয়ামী লীগ আন্দোলনের শুরু থেকেই উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী হামলা করছে। ইতোমধ্যে পুলিশের গুলি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলায় ১৫ জন বিরোধী দলের নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত ও প্রায় ৫ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় ত্রাস সৃষ্টি করার লক্ষে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সময় পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। তাদের এই ধরনের পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা ও নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হাত পা ভেঙে দেওয়া, হাত জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ও নির্দেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের আরও অনুপ্রাণিত করছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে।
আওয়ামী লীগের নেতা, সরকারের মন্ত্রীরা মুখে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার কথা বললেও বাস্তবে সন্ত্রাসী পরিবেশ তৈরি করছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা প্রদান, হামলা, গুলিবর্ষণ, পরিবহণ ধর্মঘট সৃষ্টি করা, হোটেল, রেস্তোরা বন্ধ করে বিরোধী দল ও বিএনপির কর্মসূচিগুলো পণ্ড করার হীন নীল নকশা তৈরি করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনগণের যে ঢল নামছে তা দেখে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগ ও অনির্বাচিত সরকার হত্যা, হুমকি, মামলা ও নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে চায়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, গত চার বছরে ১ হাজার ২০৯ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই চরম নির্বতনমূলক আইনের মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তি, সংবাদকর্মী, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও আটকের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের উপর চরম আঘাত করা হচ্ছে ও মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের উপর এই আইনের অপপ্রয়োগের ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। অবিলম্বে এই আইনের আওতায় বন্দি ব্যক্তিদের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
মুঠোফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগের ওপর নজরদাবি করার জন্য ইসরাইলি এক কোম্পানির কাছ থেকে প্রযুক্তি ক্রয় করা হয়েছে বলে দেশ বিদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, একই সঙ্গে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোনে আড়িপাতার বিষয়ে আইন প্রণয়নের ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী, অনির্বাচিত সরকার তাদের অবৈধ উপায়ে দখলকৃত ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নজরদারিতে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ক্রয় ও আড়িপাতার আইন প্রণয়ন করতে চলেছে। সভা এই ভয়াবহ নিবর্তনমূলক আইন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অগণতান্ত্রিক আচরণ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। সভায় অবিলম্বে এই সব প্রযুক্তি ক্রয় করা ও আইন প্রণয়নের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব, দলের গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি নিয়ে যে, এখতিয়ার বহির্ভূত, শিষ্টাচার বিবর্জিত অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করেছেন তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি মনে করছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়া, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি বন্দের দাবি নিয়ে যখন দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে উঠছে তখন এই ধরনের মন্তব্য একনায়কতন্ত্র, দুর্নীতি ও ফ্যাসীবাদকে প্রশ্রয় দেবে এবং প্রকাশ্যে জনগণের ন্যায়সংগত দাবির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে।
ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক সব দল, ব্যক্তি, সংগঠনের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জনগণের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে তাকে শক্তিশালী করা, এই সময়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা শুধুমাত্র গণতন্ত্র বিরোধী গণশত্রুকে সাহায্য করা হবে যা কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না। সচেতন সব নাগরিককে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দেলনে সমর্থন করে ভয়াবহ দানবীয় একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসীবাদী শাসনের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
এসএন