বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক কাল

সরকারবিরোধী একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম গড়তে দ্বিতীয়বারের মতো বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার ঢাকাপ্রকাশ-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের একটি সূত্রে জানা গেছে, ৭ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর ৮ ডিসেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। সেদিন হয়তো মঞ্চের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা আসবে। বিএনপিও তাদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিতে পারে। সবকিছু আগামীকালের বৈঠকে ঠিক করা হবে- আসলে কোন প্রক্রিয়ায় যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা আসবে। এ ছাড়া ওই দিনের বৈঠকে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের পরিকল্পনা বা কর্মকৌশল কী হবে, সেটাও জানতে চাইবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
৭টি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চ। দলগুলো হচ্ছে- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলন।
আগামী দিনে রাজপথে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের ধরন, কৌশল মাথায় রেখে নিজেদের মধ্যে ভিন্নভাবে ঐক্য গড়ে তুলতে ঐক্যমতে পৌঁছেছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। উদ্দেশ্য ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বরং কীভাবে সরকার পতনে রাজপথের আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে অথবা ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরকারবিরোধী যুগৎপথভাবে অংশ নেওয়া যায়। গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৭টি রাজনৈতিক দল। সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে একমত হতে কাজ করছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে বিএনপির দেওয়া খসড়া প্রস্তাবের মধ্যে অধিকাংশে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকরা। জোটের শরিকরা বলছেন, সর্বশেষ গত ১৫ নভেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে হয়। সেই বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে ১০ দফা খসড়া প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে একটি বাদে অন্য নয়টি নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। ১০ দফার সঙ্গে মঞ্চের পক্ষ থেকে আরও ৫/৬টি দফা যুক্ত করে বিএনপির কাছে পাঠানো হবে। সেই দফাগুলো নিয়ে আগামী ৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক হবে। সেখানে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি চূড়ান্ত করে ডিসেম্বরের যেকোনো দিন আনুষ্ঠানিভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
বিএনপির দেওয়া ১০ দফা প্রস্তাব নিয়ে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) তৃতীয়বারের মতো বৈঠকে বসেন মঞ্চের শীর্ষ নেতারা। সেখানে বিএনপির ১০ দফা প্রস্তাবের মধ্যে ৯টি নিয়ে তেমন কোনো আপত্তি তোলেনি শরিকরা। তবে বিএনপির দ্বিতীয় দফা ‘১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন’ নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের আপত্তি রয়েছে। কারণ '৯৬ সালে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের প্রস্তাব হচ্ছে- তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন বা তদারকি সরকার, যেই নামে হোক না কেন এটার রূপরেখা এখনই ঠিক না করে ওপেন রাখা। কারণ যুগপৎ আন্দোলনে যদি সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়, তাহলে আন্দোলনে যুক্ত শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করাই হবে উপযুক্ত পদ্ধতি। ফলে পরবর্তী সময়ে কোনো বির্তকের সৃষ্টি হবে না। এ ছাড়া মঞ্চের ‘রাষ্ট্র সংস্কার রূপরেখা’ নামের একটি প্রস্তাব ১০ দফার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। সেখানে সংবিধানের বেশকিছু ধারা সংশোধনের বিষয়ে বিস্তারিত থাকবে। আগামীকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির কাছে এটি দেওয়া হবে।
এমএইচ/এসজি
