‘শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করা মানে প্রতারণার শিকার হওয়া’
আওয়ামী লীগ ও দলটির প্রধান নেত্রীর বক্তব্য এবং প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করা মানে ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হওয়া বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রবিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, অবিচারের শরাঘাতে গোটা জাতি এক অনুচ্চারিত যন্ত্রণায় ছটপট করছে। আওয়ামী রাজনীতির যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তা প্রচলিত কোনো সজ্ঞা দিয়ে বর্ণনা করা যাবে না। এরা স্বার্থ সর্বস্বতা ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না বলেই জনগণকে হরেক কিসিমের প্রতারণার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় আসলে সপ্তাহে একদিনের বেশি তাকে টেলিভিশনে দেখা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, কদিন আগেও তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া হবে না এবং বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আর গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা কী দেখেছি- এখন প্রতিদিন সব টেলিভিশনের আলো প্রক্ষেপিত হয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে। গুরুত্বপূর্ণ না হলেও পত্রিকার প্রথম পাতায় কয়েক কলাম জুড়ে থাকে প্রধানমন্ত্রী বা তার পরিবারের গুণগান।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের সংবাদ প্রচারে বিধি-নিষেধের খড়গ ঝুলে থাকে। বিরোধী দলের উপর হামলা হবে না- এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা কী দেখছি, বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির উপর উপর্যপুরি হামলা হচ্ছে এবং রক্তাক্ত আক্রমণ চালিয়ে নিহতসহ আহত করা হচ্ছে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে। সম্প্রতি ভোলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করে নুরে আলম ও আব্দুর রহিমকে হত্যা এবং অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় প্রমাণিত হয় শেখ হাসিনা পুরো জাতির সঙ্গে নিষ্ঠুর মশকরা ও প্রতারণা করেন। তারা লগি-বৈঠার ধারাবাহিকতা, জিহ্বা ছিঁড়ে ফেলার হুমকি, টক শোতে চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি ইত্যাদি আওয়ামী সংস্কৃতির নমুনা। সহিংসতা আর দুষ্কর্মের সংমিশ্রণে গঠিত আওয়ামী লীগ। এদের কারণেই বর্তমান সময় সংকটময় ও সমস্যাদীর্ণ গণতন্ত্রের সময়। দেশে এখন সীমাহীন দারিদ্র্য, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অসাম্যের এক অন্ধকার মধ্যযুগীয় পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
রিজভী বলেন, কদিন আগেও একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ঘোষণা দিয়েছেন, বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া হবে না। অথচ ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী বিএনপির কর্মসূচির উপর চলছে নরকীয় আক্রমণ এবং মিথ্যা মামলা দায়েরসহ গ্রেপ্তারের হিড়িক। ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায়ে যেখানেই বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানেই হামলা চালিয়ে রক্ত ঝরানো হচ্ছে। তারা গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে এক বর্বর হিংসাযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর বক্তব্য রুচিহীন, নির্লজ্জ মিথ্যাচার এবং দায়িত্বজ্ঞানবর্জিত। তারা পেশিশক্তি ও জিহ্বার ধার দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতালোভ, জনগণের প্রতি অমানবিক অবজ্ঞা গোটা জাতিকে এক করুণ দুর্দশার মধ্যে ফেলেছে। অবিচারের শরাঘাতে গোটা জাতি এক অনুচ্চারিত যন্ত্রণায় ছটপট করছে। রাগ, ঘৃণা ও প্রতিবাদে আগ্নেয়গিরি হয়ে আছে দেশবাসী। সরকারি সব জুলুম, নিপীড়ন উপেক্ষা করেও বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঢল নামছে রাজপথে। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জাতীয়তাবাদী শক্তি অনঢ়।
গতকাল থেকে দেশের যেসব এলাকায় বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে সেসব চিত্র তুলে ধরেন বিএনপির এই মুখপাত্র। এসময় তিনি সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।
এমএইচ/এসজি