সরকার জনবিস্ফোরণের আতঙ্কে ভুগছে: মির্জা ফখরুল
ফাইল ছবি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার হীন চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করছে।
তিনি বলেন, সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলা, ভাঙচুর, বানোয়াট মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার এবং বিএনপির সভা-সমাবেশ পণ্ড করার কাজে সিপাহসালারের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে দাম্ভিকতা, রক্তপাত আর মিথ্যাচারকে পুঁজি করে দেশ চালাতে গিয়ে রাষ্ট্রকে গভীর সংকটে নিপতিত করেছে।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্যায়, অবিচার ও ভয়াবহ অপশাসনের বিরুদ্ধে কেউ যাতে দুঃসাহস দেখাতে না পারে সেজন্য বিএনপিকে ধ্বংস করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে সরকার। তারা বিএনপি এবং বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বানচাল করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, সরকার জনবিস্ফোরণের আতঙ্কে ভুগছে। আর তাই তারা দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে। তবে সব অপকর্মের জন্য সরকারের পতন এখন খুবই সন্নিকটে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশব্যাপী বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল এবং আজ নরসিংদী, খুলনা, ঝিনাইদহ গাজীপুরের কালিগঞ্জ, নড়াইল, বরিশাল দক্ষিণ ও উত্তর জেলা, পটুয়াখালী ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত ও নিষ্ঠুর হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের গুরুতর আহত করেছে। পুলিশ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া রাজশাহী মহানগরের অন্তর্ভুক্ত কাশিয়াডাঙ্গা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোমিনুল ইসলাম রনিকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী দুষ্কৃতিকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করেছে। তিনি এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত এসব নৃশংস ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দেশব্যাপী বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি বানচালের লক্ষ্যে আজ নরসিংদীর রায়পুরায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন এবং সদস্য রফিকুল আমিন ভুঁইয়াসহ অনেক নেতা-কর্মীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা জেলাধীন দিঘলিয়ায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পুলিশের ছত্রছায়ায় নিষ্ঠুর হামলা চালিয়ে খুলনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোল্লা খায়রুল ইসলাম, বিএনপি নেতা সোহেল পারভেজ, ইব্রাহিম শেখ, ছাত্রদল নেতা সবুজ গাজী, আমির হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন, রাব্বি রিয়াজ, জুলফিকার গাজীসহ কমপক্ষে ৩০ জন নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত করে। গ্রেপ্তার করা হয় দিঘলিয়া উপজেলা যুবদল নেতা কুদরতে ইলাহী স্পিকার ও রাসেল আহমেদ নাসিমকে। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুরসহ কবিরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আবু তালেব মিয়ার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।
আজ মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতা মোকতার হোসেন তারা, আবুল কালাম, আবুল মৃধা, আতিউর সরদার, মহিলা দলের মুন্সিগঞ্জ জেলা সভানেত্রী সেলিনা আক্তার বিনা এবং সহ-সভাপতি রোকেয়া বেগম, যুবদল নেতা শেখ রনি, ফারুক মৃধা, বিল্লাল হোসেন প্রিন্স, জেমস, মাসুদ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রোজীন, শামীম সরদার, ছাত্রদল নেতা হাসিব, আকাশ, শিশির চৌধুরী আরিফ, তুর্জয় খানা মুন্না, জানে আলম, সিয়াম শেখ এবং আরিফের উপর হামলা চালিয়ে তাদের গুরুতর আহত করেছে। আরিফের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা।
মুন্সিগঞ্জে আজকের কর্মসূচিতে হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় থানা বিএনপির সদস্য সচিব হাফিজুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আজ নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক হামলা চালিয়ে সান্দিকোনা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বাবুসহ ১২ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত করেছে। আহত নেতা-কর্মীদের মধ্যে কয়েকজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নড়াইলের মাইজপাড়ায় কর্মসূচি পালনকালে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহবুব মুর্শেদ জাপল ও সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাহিদুর রহমান পলাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বরিশাল দক্ষিণ জেলার উজিরপুর উপজেলায় সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় শ্রমিক দল নেতা সোলায়মান খান হাইয়ুম ও বিএনপি নেতা মিলন হাওলাদারসহ ২০ জনের অধিক নেতা-কর্মী আহত হয়।
গাজীপুরের কালিগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ১০ জন নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত করে। পটুয়াখালীর গলাচিপায় আওয়ামী গুন্ডারা বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে ছাত্রদল নেতা রাশেদুল ইসলাম ও রাজীব মাহমুদকে আহত করেছে। খাগড়াছড়িতে বাঘাইছড়ি উপজেলায় কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে ছাত্রদল নেতা আল আমিন, যুবদল কর্মী রফিকসহ ৬-৭ জন নেতা-কর্মীকে আহত করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানান। তিনি গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
এমএইচ/এসজি